চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃছোটদের ৫ টাকা এবং বড়দের ১০ টাকা। বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলে প্রতিদিন এই হারে ফাইন দিতে হয় ছাত্র-ছাত্রীদের। এখানে খন্ডকালীন শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা চলছে ফাইনের টাকায়। শিক্ষার গুণগতমান নিম্নগামী হলেও বাড়তি নজরদারি রয়েছে ফাইন আদায়ে। শিক্ষারমান নিয়ে কর্তৃপক্ষের মাথা ব্যথা না থাকলেও কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে ফাইনের অর্থ আদায়ে বিদ্যালয়ে চলছে নগ্ন প্রতিযোগিতা, এমন অভিযোগ একাধিক অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীদের। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে রয়েছে ক্লাস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ। বিষয় ভিত্তিক নিয়োগকৃত শিক্ষকদের যথাযথ বিষয়ে না দিয়ে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন প্রধান শিক্ষক। যা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা পরিপন্থি।
এদিকে বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হরেকৃষ্ণ দাশের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রকাশের পর ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তার অনুসারীরা। রুদ্ধদ্বারে চলছে কাগজপত্র কাটা ছেঁড়া ও সংযোজন-বিয়োজনের কাজ। নতুন করে তৈরি হচ্ছে হিসাব-নিকাশের খাতা। অনিয়ম ঢাকতে চলছে কাজ এমন অভিযোগ একাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর। চলতি বছর বিদ্যালয়ের নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল ঠেকেছে তলানীতে। প্রশ্ন উঠেছে, দিন দিন লেখা পড়ার মান যেখানে নাজুক সেখানে ফাইন আদায়ে কেন এই কঠোরতা?
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, খন্ডকালীন একজন শিক্ষক এবং একজন ক্লার্ক কাম শিক্ষকের বেতনের টাকা দেয়া হয় এই ফাইনের টাকা হতে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক শিক্ষক জানান, স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন দাওয়াতে উপঢৌকন ক্রয়ে এ খাতের অর্থ কিছুটা যোগান দেয়। তবে কি খাতে কত টাকা ব্যয় হয় তার সঠিক কোন হিসাব নেই তাদের কাছে। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক হরেকৃষ্ণ দাশ জানান, খন্ডকালীন শিক্ষক শুক্লা তরফদার ও সজল কুমার রায়ের (ক্লার্ক কাম শিক্ষক) ফাইন আদায়ের টাকায় বেতন দেয়া হয়। বাকি টাকা স্কুলের ব্যাংক একাউন্টে জমা রাখা হয়। তবে বিদ্যালয়ের আয়ের বিভিন্ন উৎস থাকা সত্ত্বেও কেন ফাইনের টাকায় বেতন দেয়া হয় এমন প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। সহকারী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ কবীর আহমেদ জানান, বিদ্যালয়ে ৯ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। ছোটদের (৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণী) ৫ টাকা ও বড় (৮ম থেকে ১০ম) ১০ টাকা হারে ফাইন আদায় করা হয়। অপর একটি সূত্রের দাবি বছরে ফাইন আদায় হয় এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা।
বিদ্যালয়ের সাবেক পরিচালনা পরিষদের সহ-সভাপতি এম বুলবুল আহমেদ ফাইনের টাকায় শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন দেয়া হয় এমনটা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আমার আমলে এমনটা ঘটেনি। এমনকি কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দিরের এমন দৈন্যতা আসেনি যে ছাত্র-ছাত্রীদের ফাইনের টাকায় শিক্ষকদের বেতন দিতে হবে। বর্তমান পরিচালনা পরিষদের সদস্য সাধন চন্দ্র ভদ্র বলেন, ফাইনের টাকা আদায় করে খাতায় লেখা হয়। রেজুলেশনের মাধ্যমে স্কুল ফান্ড থেকে তাদের বেতন দেয়া হয় বলে তিনি দাবি করেন। তবে ফাইনের টাকা কোথায় কিভাবে ব্যয় করা হয় সেটা তার জানা নেই।