চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে চলছে লকডাউন। মানুষ ঘর বন্দি হয়ে পড়েছে। আর বর্তমান এই পরিস্থিতিতে অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সম্পর্কিত সেবা দেবে নির্বাচন কমিশনের এনআইডি অনুবিভাগ। অনলাইনেই দেয়া হচ্ছে ভোটারদের ছয় ধরনের সেবা। নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগে খুলনাসহ সারাদেশের মানুষ অনলাইনে অফিসে না এসেই সম্পূর্ণ সেবা গ্রহণ করতে পারছে বলে জানিয়েছেন খুলনার নির্বাচন কর্মকর্তারা।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ভোটার হিসেবে নিবন্ধিতদের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি সংগ্রহ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর সংগ্রহ, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, হারানো জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন, নতুন ভোটার নিবন্ধন এবং এসএমএস সেবা। এই সুযোগ গ্রহণ করে কোনও ভোটার এসএমএস বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর জেনে নিজেরাই প্রিন্ট করতে পারবেন।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে ‘থানা নির্বাচন অফিস, সোনাডাঙ্গা ও খালিশপুর, খুলনা’ নামে একটি পেজে ভোটারদের প্রশ্ন ও তার সমাধান সংক্রান্ত সেবা প্রদান করায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লকডাউনে থাকা মানুষ এই সেবাগ্রহণ করতে পারছেন।
খুলনা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ ইউনুচ আলী জানান, খুলনা বিভাগে ৬২টি নির্বাচন অফিস রয়েছে। এর মধ্যে ৬৯ উপজেলা এবং ৩টি থানা নির্বাচন অফিস। এসব অফিস থেকে নাগরিকরা সেবা নিয়ে থাকেন। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ অফিসে এসে সেবাগ্রহণ করতেন। কিন্তু লকডাউনের ফলে নির্বাচন অফিস বন্ধ থাকায় নাগরিকরা সেবাগ্রহণ করতে পারছিলো না। অনেকে নতুন ভোটার হলেও এনআইডি কার্ড নিতে পারছে না। এখন অনলাইনে ঘরে বসেই নাগরিকরা এনআইডি সংক্রান্ত সেবাগ্রহণ করতে পারছেন। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে বন্ধের মধ্যেও খুলনা নির্বাচন কার্যালয় থেকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগদান করা নতুন সদস্যরা এনআইডি সংক্রান্ত সেবা নিচ্ছেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে খুলনার থানা নির্বাচন অফিসের নামে একটি পেজে অসংখ্য মানুষ সেবাগ্রহণ করছেন। এতেও ব্যাপক সাড়া পড়েছে।
খুলনার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এম মাজহারুল ইসলাম জানান, খুলনা সিটি কর্পোরেশন ও জেলায় ভোটার ছিলো ১৮ লাখ ১ হাজার ২ জন। সর্বশেষ হালনাগাদ নিবন্ধনে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩২০ জন অন্তর্ভুক্ত হলে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮৮ জন নিবন্ধিত হয়েছে। যার মধ্যে ১৮ বছরের নিচে রয়েছে ৭১ হাজার ৯৪৫ জন। সর্বমোট ভোটার রয়েছে ১৮ লাখ ৮২ হাজার ৭৪৩ জন। খুলনা সিটি কর্পোরেশন ও জেলায় ১২টি নির্বাচন অফিসের আওতায় এনআইডি সংক্রান্ত সেবা প্রদান করা হয়। কিন্তু করোনার কারণে অফিস বন্ধ থাকায় সেই সেবা নিতে পারছে না নাগরিকরা। আর এই করোনা পরিস্থিতিতে এনআইডি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে অনলাইন এনআইডি সেবা চালু করেছে নির্বাচন কমিশন। বন্ধের এই সময়ে এসএমএস, অনলাইন ও অন্যান্য মাধ্যমে এ সেবা পাওয়া যাচ্ছে। অনলাইনের এই সেবা পেতে ভোটারকে নির্বাচন কমিশনের সাইটে প্রবেশ করতে হবে। সেখান থেকেই ঘরে বসেই এনআইডি সংক্রান্ত সেবা নিতে পারবেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এনআইডি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন করে তার সঠিক সমাধান পাচ্ছেন নাগরিকরা।
খুলনার সোনাডাঙ্গা ও খালিশপুর থানা নির্বাচন কর্মকর্তা সৌমেন বিশ^াস ছন্দ বলেন, থানা নির্বাচন কার্যালয়ে এনআইডি সম্পর্কিত সেবা নিতে নাগরিকরা প্রতিদিনই ভীড় করতো। কিন্তু এখন সেটি পারছে না। নির্বাচন কমিশনের অনলাইনের সেবা কার্যক্রমে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। তিনি আরো বলেন, অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক (থানা নির্বাচন অফিস, সোনাডাঙ্গা ও খালিশপুর, খুলনা) পেজ থেকে মানুষকে সেবা আগেও দিতাম। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ২০ মার্চ থেকে অফিসে সেবা দেয়া বন্ধের পরে পেজ থেকে ব্যাপক আকারে সেবা দেয়া শুরু করি। যাতে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কোন কারনে মানুষের যেন কোন কাজ বাধাগ্রস্থ না হয়। তখন থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় প্রশ্নোত্তর পর্ব করতাম। বন্ধের ভিতর প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান দিয়েছি। এমন দিনও গেছে যে সেই সংখ্যা ৫০০ মানুষ ছাড়িয়েছে। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুধু এই অফিসের আওতাধীন এলাকার মানুষই নয়, বরং সারা দেশে মানুষ বিভিন্ন প্রশ্ন ও তার সমাধান পেয়েছেন। করোনা ভাইরাসের এই লকডাউনের সময়ে প্রায় ৫ হাজার মানুষকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সেবা প্রদান করা হয়েছে।
গত ২৭ এপ্রিল জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম অনলাইন ভিত্তিক এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, কোনও ব্যক্তি যদি জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে ফেলেন অথবা সংশোধন করতে চান তবে তিনি প্রয়োজনীয় দলিলাদি সংযুক্ত করে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনে আবেদনকারী এনআইডি কার্ডের আবেদনের বর্তমান অবস্থান জানতে পারবেন। আবেদন অনুমোদিত হলে আবেদনকারী এসএমএস পাবেন এবং অনলাইন পোর্টাল হতে পুনরায় এনআইডি কপি সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়া যেসব যোগ্য নাগরিক ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হননি, তারা কমিশনের ওয়েবসাইটে ভোটার হতে নতুন নিবন্ধনের আবেদন করে রাখতে পারবেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সংশ্লিষ্ট থানা, উপজেলা ও আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে এসে বায়োমেট্রিক দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ করতে পারবেন। পরবর্তীতে তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে।
মোবাইলের এসএমএসের মাধ্যমে এনআইডি নম্বর পাওয়ার পদ্ধতি :nidform No লিখে ১০৫ নম্বরে পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন ভোটারদের তালিকাভুক্তির সময় যে স্লিপ নম্বরটি দেওয়া হয়, সেটিই ফরম নম্বর হিসেবে বিবেচিত হবে। ফিরতি এসএমএসের মাধ্যমে এনআইডি নম্বর পাঠানো হবে। উদাহরণ: nid xxxxxx ২৪-০৮-১৯৯২ লিখে এসএমএস করতে হবে। সর্বশেষ হালনাগাদকৃত ভোটার তালিকা প্রকাশিত নতুন নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে যারা কার্ড পাননি তারা তাদের নিবন্ধন ফরম নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করবেন। পরে বায়োমেট্রিক যাচাই শেষে এনআইডি কপি বা নম্বর পাবেন তারা। তবে দ্বৈত ভোটার হলে এনআইডি কপি বা নম্বর পাওয়া যাবে না। যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন কিন্তু এনআইডি কার্ড পাননি তারা কমিশনের ওয়েবসাইটে ‘অন্যান্য তথ্যের’ ট্যাবে গিয়ে এনআইডি নম্বর লিংকে ফরম নম্বর ও জন্ম তারিখ দিলে এনআইডি নম্বর পাবেন। যারা এনআইডি নম্বর পেয়েছেন তারা অনলাইন পোর্টালে এনআইডির তথ্য ও মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে লগইন করতে পারবেন। লগইনের পর আবেদনকারী ফরমের এন্ট্রিকৃত সব ডাটা দেখতে পারবেন। রেজিস্ট্রেশন করা ব্যক্তি যদি পূর্বে কার্ড না পেয়ে থাকেন তিনি চাইলে পোর্টাল হতে এনআইডি কপি সংগ্রহ করতে পারবেন। চলতি রমজান মাসে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের হেল্পলাইন কল সেন্টারের ১০৫ নম্বরে ফোন করে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত সেবা পাওয়া যাবে। দেশের ৬৪টি জেলার ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের মোবাইল নম্বর অনলাইন পোর্টালে দেওয়া আছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার আবেদন সংক্রান্ত যেকোনও প্রয়োজনে এই মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস প্রকোপের কারণে প্রথম দফায় গত ১৯ মার্চ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা বন্ধ করে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। পরে সরকার কয়েক দফায় জরুরি ছুটি বাড়ালে অনলাইনের মাধ্যমে সংশোধন, তথ্য হালনাগাদের আবেদন ও অনলাইন কপি ডাউনলোডের এই সেবা চালুর সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন।