চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী ভীতি ছড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা এর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কোনো প্রকার সাহায্য করেননি, এমন অভিযোগ করেছে চীন। বেইজিং বলছে, করোনাভাইরাস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নেতিবাচক। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র জরুরি জনস্বাস্থ্য সতর্কতা জারির পর ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করল বেইজিং।
শুক্রবার জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারির পর যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, বিগত দুই সপ্তাহে যেসব বিদেশি চীন ভ্রমণ করেছেন তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেবে না দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিয়াং বলেন, মার্কিন এই পদক্ষেপ শুধু আতঙ্ক তৈরি করেছে এবং তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছে।
চীনের প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬১ জনে। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রোববার যারা মারা গেছেন তাদের ৫৬ জনই ভাইরাসটির উৎসস্থল হুবেই প্রদেশের। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮২৯ জন। মোট ১৭ হাজার ২০৫ জন এখন প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) এক ব্রিফিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিয়াং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, ভাইরাস মোকাবিলায় সহযোগিতার পরিবর্তে তারা আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে। প্রথম দেশ হিসেবে চীনা পর্যটকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ দূতাবাস থেকে আংশিকভাবে কর্মী ফিরিয়ে নেয়ার কাজটিও করেছে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী মুখপাত্র চুনিয়াং বলেন, ‘এটি স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্রের মতো অনেক উন্নত দেশ মহামারি এই ভাইরাস প্রতিরোধে বেশ ভালো ক্ষমতা রাখলেও তারা উল্টো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) সুপারিশের বিপরীতে গিয়ে অতিরিক্ত বিধি-নিষেধ আরোপ করার মতো নেতিবাচক কাজগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে।’
বিবিসি বলছে, গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করে চীনা পর্যটকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারির পরপরই অস্ট্রেলিয়াও চীনা পর্যটকদের অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে জানায়, সীমান্ত বন্ধ করলে অবৈধপথে সেসব দেশে কেউ ঢুকলে ভাইরাসটি আরও দ্রুত ছড়াবে।
ডিসেম্বরে হুবেই প্রদেশের উহান থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি। গত এক মাসের বেশি সময়ে বিশ্বের বিশটিরও বেশি দেশে তা ছড়িয়ে পড়েছে। চীন ছাড়াও এসব দেশে এখন পর্যন্ত ১৫০ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে চীনের বাইরে শুধু ফিলিপাইনে একজন মারা গেছে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র চীনের উহানে অবস্থানরত জরুরি নয় এমন সব মার্কিন কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারকে দেশে ফিরে আসার নির্দেশ দেয়। তার এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে জরুরি নয় এমন সব মার্কিন সরকারি কর্মকর্তা ও তাদের পরিবার-আত্মীয়দের চীন থেকে স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার নির্দেশ দেয়া হয়।
চীনে উৎপত্তি হওয়া এই ভাইরাস মোকাবিলা ও এর বিস্তার ঠেকাতে গত ৩০ জানুয়ারি বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এমন ঘোষণার পর চীন থেকে মার্কিন কর্মীদের পরিবারের অনূর্ধ্ব ২১ বছর বয়সীদের দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশে ফেরার পর এসব মার্কিনীকে ১৪ দিন ‘কোয়ারেন্টাইনে’ রাখা হচ্ছে।
এদিকে, করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তার নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের কয়েকটি দেশ চীন থেকে আগতদের ঠেকাতে সীমানা বন্ধ করে দিয়েছে। সেইসঙ্গে ইতিমধ্যে চীনে ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। এতে কার্যত পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চীন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে তারা সম্প্রতি চীনে অবস্থানরত সমস্ত বিদেশি ভ্রমণকারীদের নিজ দেশে প্রবেশ করতে দিবে না।
এর আগে, রাশিয়া, জাপান, পাকিস্তান এবং ইতালিসহ কয়েকটি দেশ একই ধরণের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে। তবে বিশ্বের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এমন পদক্ষেপ না নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে, এবং গত দুই সপ্তাহে যেসব বিদেশী নাগরিক চীনে ভ্রমণে গেছেন, তাদের সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।
এদিকে কানাডার এয়ারলাইন্স এয়ার কানাডা, ফ্রান্সভিত্তিক এয়ারলাইন্স সংস্থা এয়ার ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক এয়ারলাইন্স সংস্থা এয়ার সিউল, তানজানিয়ার রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, যুক্তরাষ্ট্রের ডেল্টা এয়ারলাইন্স, ইজিপ্ট এয়ার, ফিনল্যান্ডভিত্তিক ফিনএয়ার ইতিমধ্যে চীনগামী ফ্লাইট স্থগিত ও বাতিল করেছে।
এছাড়া এই তালিকায় আরও আছে, ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ার গ্রুপ, জার্মানির লুফথানসা, সুইডেনভিত্তিক সাস, তুর্কিশ এয়ারলাইন্স, শিকাগোভিত্তিক ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, যুক্তরাজ্যভিত্তিক ভার্জিন আটলান্টিক এয়ারলাইন্স সংস্থা।
গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। এখন পর্যন্ত চীনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩০৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া প্রাণঘাতি এই ভাইরাসে চীনে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৩৮০ জন। পাশাপাশি এই ভাইরাস ইতিমধ্যে ২৩ টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
এছাড়া প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশির মত সমস্যা দেখা দেয়।