নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কর্মহীন মানুষকে খাদ্যসহায়তা প্রদান ও উপজেলাবাসীকে করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে দিন আর রাত এক করে বিরামহীনভাবে কাজ করে চলেছেন রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসরিন আক্তার। সরকারিভাবে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত খাদ্য ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে ১৩ হাজার অসহায় পরিবারের মধ্যে বিতরণ করে হাসি ফুঁটিয়েছেন দিয়ে তাদের মুখে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কখনো কর্মহীনদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ, কখনো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে রাস্তা ও হাট-বাজারে টহল, আবার কখনো স্বাস্থ্য বিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করছেন মাস্ক। চালাচ্ছেন সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা। এরকম নানাবিধ কাজের মাঝে ক্লান্তিহীন ছুঁটে চলেছেন উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। এসব কর্মকান্ডের মাঝেও তার উপর অর্পিত উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক কর্মকান্ড দেখভাল করছেন নিয়মিত। আইনের প্রতি তিনি যেমন রয়েছেন কঠোর ঠিক দায়িত্বের প্রতিও রয়েছেন অবিচল। আবার মানবিক মমত্ববোধের গুণাবলীও রয়েছে দৃশ্যমান। সদাহাস্য মানষিকতা আর নিরলস পরিশ্রম ও প্রশংসনীয় কর্মকান্ডে উপজেলাবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন সীমাহীন শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
উপজেলাবাসীর খাদ্য সংকট মোকাবেলায় সরকারি সহায়তার পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে অফিসার্স ক্লাবের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন তহবিল। খাদ্য সংকটে পড়ে কেউ তার দ্বারস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে তার সহায়তা করছেন তিনি।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, করোনা ভাইরাসেরর প্রাদুর্ভাবরোধে রূপসা উপজেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা কর্মহীনদের মাঝে খাদ্য সহায়তার জন্য সরকারিভাবে এ পর্যন্ত ৫ দফায় একশ’ এক টন চাল ও ১৬ লাখ ১৭ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। যা ইতোমধ্যে ১৩ হাজার অসহায় পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় দুই লাখ। এরমধ্যে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার। সরকারিভাবে সরবরাহকৃত খাদ্যসামগ্রীর তুলনায় উপজেলায় নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জনসংখ্যা বহুগুণ বেশি হওয়ায় কর্মহীন সব পরিবারের দোঁরগোড়ায় এ খাদ্যসহায়তা দেয়া সম্ভব হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া সরকারিভাবে শিশুখাদ্যের জন্য দুই দফায় ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। এরমধ্যে ৩৭ হাজার টাকার শিশুখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে এবং বাকি ৪৩ হাজার টাকার শিশুখাদ্য অল্প কয়েকদিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন আক্তার। এর আগে উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের উদ্যোগে গঠিত কল্যাণ তহবিলের ৭০ হাজার টাকার খাদ্যসহায়তা প্রদান করেন তিনি। অনন্য এক মানবিক ভাবনায় গর্ভবতী মহিলাদের কথা চিন্তা করে উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের তহবিলের আরো ৬৫ হাজার টাকার খাদ্যসহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যা বিতরণের প্রক্রিয়া চলছে। এক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলাদের মাথাপিছু ১০ কেজি চাল, ১ লিটার সয়াবিন তেল, ১ কেজি মশুর ডাল, আধাকেজি ছোলা এবং ৩ হালি ডিম খাদ্যসহায়তা হিসেবে প্রদান করা হবে।
পাশাপাশি উপজেলাবাসীকে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করতে ২১ এপ্রিল আইচগাতী ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া নূর আলম খানের বাড়ি পার্শ্ববর্তী ২০ বাড়ি, ২৩ এপ্রিল রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআই টেকনিশিয়ান শাহারুল ইসলাম, পরিচ্ছন্নতা কর্মী নাজনীন ও নৈশ প্রহরী আব্দুল আল মামুন করোনা পজেটিভ হওয়ায় কোয়ার্টার ও হাসপাতাল চত্বরে অবস্থিত মসজিদ এবং ৩০ এপ্রিল আইচগাতী ইউনিয়নের দেয়াড়া গ্রামে জরিনা নামে আরো এক নারী করোনভাইরাস পজেটিভ হওয়ায় তার বাড়ি পার্শ্ববর্তী ২০ বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন আক্তার বলেন, সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত একশ’ এক টন চাল ও ১৬ লাখ ১৭ হাজার টাকা কর্মহীনদের মাঝে সঠিকভাবে বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারিভাবে শিশুখাদ্যের জন্য দু’দফায় প্রাপ্ত ৮০ হাজার টাকার মধ্যে ৩৭ হাজার টাকার শিশুখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। বাকি টাকার শিশুখাদ্য বিতরণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন গর্ভবতী মহিলাদের কথা চিন্তা করে উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের গঠিত সহায়তা তহবিলের ৬৫ হাজার টাকার খাদ্যসহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শুধু সরকারি খাদ্য সহায়তার দিকে তাকিয়ে বসে থাকার সময় এখন না। দেশের এই ক্রান্তিকালে মানবিক কর্মযজ্ঞে সামিল হতে তিনি কর্মহীন অসহায় মানুষের পাশে বিত্তবান ব্যক্তিদের দাঁড়ানোর আহ্বানও জানান।