চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ করোনা ভাইরাসের কারণে গোটা পৃথিবী থমকে গেলেও তার কোন প্রভাবই পড়েনি খুলনার ঈদ বাজারে। তরুণ, তরুণী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সব বয়সের নারী পুরুষ শিশু তাদের পছন্দের সামগ্রী কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন খুলনার বিপনী বিতানগুলোতে। জেলা প্রশাসনের বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে কেনাকাটা করার নির্দেশনা থাকলেও তার ধার ধারছেন না কেউ। ক্রেতাদের ভিড়ে ঈদ মার্কেটে পা ফেলার জায়গা থাকছে না। সকাল থেকেই গোমড়া মুখে ছিল আকাশ। দুপুরে প্রচ- বৃষ্টিও হয়েছে নগরীতে। কিন্তু তাতেও বাজারে ক্রেতার সংখ্যার কোন তারতম্য পরিলক্ষিত হয়নি।
ঈদের বাজারে হঠাৎ বৃষ্টিতে কাদা পানিতে মাখামাখি, সেই সঙ্গে যানজটের ভোগান্তি। এসব বিপত্তি ও ভোগান্তি আমলে নিলে তো ঈদ উৎসবই মাটি হয়ে যাবে। তাই সব কিছু উপেক্ষা করেই খুলনায় শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতারা। অভিজাত বিপণিবিতান থেকে ফুটপাতের দোকান সবখানেই ঈদের কেনাকাটার ধুম। মহানগরীর বাইরে থেকেও প্রতিদিন অসংখ্য ক্রেতা আসছেন। পুরো খুলনা নগরীই যেন পরিণত হয়েছে ঈদবাজারে। কিনছেন নিজেদের পছন্দের কাপড়-চোপড় ও অন্যান্য সামগ্রী। মার্কেটমুখী মানুষের ভিড়ের কারণে ডাকবাংলো মোড়, পাওয়ার হাউজ মোড়, নিউ মার্কেট চত্বর এবং শান্তিধাম মোড়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। দুপুর থেকে সৃষ্টি হওয়া এ যানজট রাত অবদি থাকছে। যানজটের কারণে নাগরিকরা নাকাল হচ্ছে।
সরজমিনে দেখা যায়, করোনার কারণে ঈদ-উল-ফিতরের সময় তেমন কেনাকাটা করতে না পারার ক্ষতটা এই ঈদে পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন সকলেই। নারীরাই বেশি কেনাকাটা করছেন। মার্কেটগুলোতে নারীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। এসব বিপনী বিতানগুলোতে নারীরা শাড়ী কিনছে বেশি। তবে এই শাড়িগুলো হচ্ছে ভারতীয় সিরিয়ালে নায়িকাদের পরিহিত শাড়ি। ক্রেতারা দোকানীদের সিরিয়াল এবং নায়িকাদের নাম বলে উল্লেখিত শাড়িগুলো চাইছেন।
মহানগরীর অভিজাত নিউ মার্কেট, খুলনা শপিং কমপ্লেক্স, সেইভ এন্ড সেইফসহ রেলওয়ে মার্কেট, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মার্কেট, হ্যানিম্যান মার্কেট, খুলনা বিপনী বিতান, আলো সুপার মার্কেট, জলিল টাওয়ার, এশা চেম্বার, মালেক চেম্বার, আখতার চেম্বার, মিনা বাজার, আড়ংসহ বিভিন্ন বিপনী কেন্দ্রে ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। এ সব মার্কেটের প্রতিটি দোকানেই ভিড় থাকছে দর্শক ও ক্রেতাদের। দর্শনার্থীদের চাপ সামলাতে দোকান মালিক-কর্মীদের বেগ পেতে হচ্ছে। নিক্সন মার্কেট ও শপিং কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকসহ ডাকবাংলা, পিকচার প্যালেস মোড়, হেলাতলা মোড়ের ফুটপাতের দোকানের রীতিমত চাপ থাকছে দর্শক-ক্রেতাদের।আএব
নগরীর খুলনা সপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন জানান, রোজার ঈদে করোনার কারণে তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে, রোজার ঈদে পোষাকের প্রতিই নজর থাকে সবার। কিন্তু সেই সময়ে করোনার বাধ্যবাধকতার কারণে তাদের লোকসানের মুখ দেখতে হয়েছে। তাই এখন চেষ্টা চলছে সেই লোকসান কাটিয়ে ওঠার জন্য।
জলিল টাওয়ারের শাড়ি ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, করোনায় তাদের ব্যবসা বাণিজ্য একেবারেই বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। তিনি বলেন, গত ৪/৫ দিন ধরে বাজারে একটু ক্রেতা আসছে। তবে তাদের কাছে দামী শাড়ি বিক্রি করা যাচ্ছে না। মাঝারিমানের শাড়ির দিকেই নজর তাদের।
এই মার্কেটে শাড়ি কিনতে আসা নগরীর নিরালা এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ তাসনুভা তাসনিম বলেন, তিনি প্রতি বছর ঈদের সময় কিছু শাড়ি কেনেন। কিন্তু এবার রোজার ঈদে বাড়ি থেকে বের হননি করোনার কারণে। বর্তমানে করোনার প্রভাব একটু কমেছে বলে মনে করেন তিনি। তাই শাড়ির বাজারে এসেছেন।
নগরীর নিউ মার্কেট, শপিং কমপ্লেক্স, সেফ এন সেভসহ বিভিন্ন বিপণী বিতান ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। পুরো পরিবার নিয়েই অনেকে হাজির হয়েছেন শপিং মলে।
নগরীর রেলওয়ে মার্কেটে পাঞ্জাবি কিনতে আসা খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র সাইফুজ্জামান রাশেদ জানান, রোজার ঈদে করোনার কারণে বাইরে বের হইনি। তাই সে সময় আগের পাঞ্জাজী দিয়েই ঈদ পালন করেছেন। কিন্তু এখন তিনি নতুন পাঞ্জাবী কেনার জন্য এসেছেন।
শুধু শাড়ি কাপড়ই নয়, কসমেটিক্স ও মশলার দোকানগুলোতেও ক্রেতা বিক্রেতার ভিড় রয়েছে।