চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃসরকারি হাসপাতালগুলোয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের টেন্ডারে সরবরাহ করা (আউটসোর্সিং) কর্মীদের নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ এখন চরমে। দুই পক্ষের মধ্যকার দ্বন্দ্বে ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালগুলোর সেবামান। বর্তমানে এ দ্বন্দ্ব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এমনকি বিষয়টি কর্মবিরতির দিকে গড়ানোর আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। এতে করে চলমান মহামারী পরিস্থিতিতে করোনার চিকিৎসা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গিয়েছে, সরকারি হাসপাতালগুলোর আউটসোর্সড কর্মীদের নিয়ে শুরু থেকেই অসন্তোষ ছিল সরকারি কর্মচারীদের মাঝে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি হাসপাতালে আউটসোর্সিং কর্মীরা সরকারি কর্মচারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চলতি মাসে টঙ্গীর শহীদ আহ্সান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের এক সিনিয়র স্টাফ নার্স আউটসোর্সিং কর্মীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে টঙ্গী থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি গত সপ্তাহেই নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এ নিয়ে একটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
শহীদ আহ্সান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক খাদিজা বেগম স্বাক্ষরিত চিঠিতে অভিযোগ করে বলা হয়, গত ১৬ মে বিকালে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করার সময় সিনিয়র স্টাফ নার্স মোহাম্মদ মশিউর রহমানের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় আউটসোর্সিং কর্মী তৌহিদুল ইসলাম হূদয়ের। কাজ শেষে বের হওয়ার সময় মশিউর রহমানকে তুলে নিয়ে মারধর করেন আউটসোর্সিং কর্মী তৌহিদুল ইসলাম হূদয়। পাশাপাশি মশিউরকে গুলি করে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়।
এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছে নার্সদের সংগঠনগুলো। অন্যথায় কর্মবিরতির মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।
এ বিষয়ে নার্সদের সংগঠন সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের মহাসচিব সাব্বির মাহমুদ তিহান বণিক বার্তাকে বলেন, করোনা মহামারীতে নার্সরা যখন রোগীর সেবায় নিয়োজিত, তখন আউটসোর্সিং কর্মীদের হাতে একজন নিষ্ঠাবান নার্সিং কর্মকর্তার ওপর শারীরিক নির্যাতন দেশের জন্য একটি লজ্জাজনক ঘটনা। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত ও মদদদাতা, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। দেশের অন্যান্য হাসপাতালেও একশ্রেণীর অসাধু লোকের কাছে জিম্মি নার্সরা। এসব হাসপাতালগুলোয় স্থানীয় অপশক্তিগুলোর বিরুদ্ধে সরকার জরুরি পদক্ষেপ না নিলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।
অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালগুলোতে কর্মরত আউটসোর্সিং কর্মীরা স্থানীয় হওয়ায় নার্স ও চিকিৎসকরা বিভিন্ন সময় তাদের হয়রানির শিকার হয়েছেন। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় টেন্ডারের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ায় এ আউটসোর্সড কর্মীদের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রবণতাও থাকে। নার্স ও চিকিৎসকদের পাশাপাশি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া সাধারণ রোগীরাও তাদের বিরুদ্ধে নানা সময় হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কমিশনের বিনিময়ে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। আবার আউটসোর্সড কর্মীরা নির্দিষ্ট কোনো অধিদপ্তরের অধীনস্থ না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তার বণিক বার্তাকে বলেন, আউটসোর্সড কর্মীদের হাতে শহীদ আহ্সান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের একজন সিনিয়র নার্স নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিষয়টি আমাকে জানানোর পর পরই এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মূলত হাসপাতালের নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ করতে এবং সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে টেন্ডারের মাধ্যমে আউটসোর্সড কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়। সরকারি হাসপাতালগুলোয় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ বন্ধের কারণ হচ্ছে তারা কাজ না করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় না। কারণ তাদের চাকরি বদলিযোগ্য নয়। এছাড়াও নানা অভিযোগ থাকায় তাদের নিষ্ক্রিয় করতে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগ শুরু হয়। তবে এতে করে সেবার মান বাড়ার বদলে হয়রানি বেড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।