চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃবিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘দেশ এখন দুটি ভাইরাসে জর্জরিত। একটা হলো আওয়ামী ভাইরাস। আর একটি হলো বৈশ্বিক জীবাণু করোনা ভাইরাস। এই দুটি ভাইরাস আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। ’
বুধবার (১৯ আগস্ট) জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আজকে আওয়ামী ভাইরাসে বিএনপি জর্জরিত। বিএনপির ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া আছে। মামলার সংখ্যা এক লাখের ওপরে চলে গেছে। চিন্তা করে দেখেন এই সরকার কত চেষ্টা করেছে এই দলকে নিঃশেষ করার জন্য। আমার নেত্রীকে জেলে আটক রেখেছে। কিন্তু দলের শক্তি সামর্থ, সংগঠন বলতে যেটা বুঝায় সেটাকে নষ্ট করতে পারেনি। এটাই প্রমাণ করে আওয়ামী করোনা থেকে আমরা নিজেদের শক্ত রাখতে পেরেছি। ’
তিনি বলেন, আর একটি হলো বৈশ্বিক জীবাণু করোনা। এই করোনায় আমরা সবাই আক্রান্ত হয়েছি। এই সময়টা বিএনপির জন্য একটা সত্যিকার পরীক্ষার সময়। আমাদের দুইটা ভাইরাসই মোকাবিলা করতে হবে। দুইটা ভাইরাস থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সেজন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে চিন্তা করতে হবে, কৌশল কী হবে।
বিএনপির এই প্রবীণ নেতা বলেন, আমরা জানি দেশে এখন গণতন্ত্র নাই। সেটা হারিয়ে ফেলেছি। যেটা দেখতে পাচ্ছি। গণতন্ত্রের আড়ালে ব্যালট বাক্স ভর্তির মাধ্যমে যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় গিয়ে একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার ব্যবস্থা কায়েম করা। এটা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। গত ১১ বছর ধরে যেটা চলছে, আরও কত বছর চলবে জানি না। যত দ্রুত এর অবসান হবে, তত তাড়াতাড়ি আমাদের দেশের মুক্তি আসবে।
আওয়ামী লীগের মুখে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা শোভা পায় না দাবি করে মওদুদ আহমদ বলেন, তারা নিজেরাই সেটা ধুলিস্মাৎ করে দিয়েছে। এই যে ভোটের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠা এটা সূচনা করেছিলেন, ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে। ভোটের মাধ্যমেই তারা নির্বাচিত হয়েছিলেন। সুতরাং এখন এই ভোটটাকে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের যে সরকার, একই ধ্যান ধারণা চিন্তা চেতনা। সেটা হলো কর্তৃত্ববাদী সরকার হতে হবে, এখানে বিরোধী দলের কোনো স্থান থাকবে না।
৭২ থেকে ৭৫ সালের ঘটনা উল্লেখ করে মওদুদ আহমদ বলেন, তখন তিনটি জিনিস হয়েছিল। একটা হলো রক্ষীবাহিনীর হত্যা। এমন একটি বাহিনী গঠন করেছিল যে বাহিনীর জবাবদিহিতা, কোনো কোড অব কনডাক্ট ছিল না। তারা যেকোনো কাজ করতে পারতেন, যেকোনো বাড়িতে ঢুকতে পারতেন। আর একটা হলো দুর্ভিক্ষ। স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা কি কোনোদিন ভেবেছি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। এই গুলিস্তানে আমি নিজের চোখে দেখেছি। সারি বাধা মরদেহ পড়ে আছে। রাস্তার কুকুর সেই মরদেহ খাওয়ার চেষ্টা করছে। সেই দৃশ্য ৭৪ সালে আমাদের দেখতে হয়েছে।
আর তৃতীয় হলো যে গণতন্ত্রের নাম দিয়ে দেশ স্বাধীন হলো, যে গণতন্ত্রের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করলাম, ২৪ বছর এদেশের মানুষ অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করলো। সমস্ত চেতনাকে ধুলিস্মাৎ করে দিয়ে ১৯৭৫ সালে একদলীয় স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা কায়েম হলো। এ ব্যাপারে আমাদের আরও অনেক জানা উচিত।
স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রধান বক্তা ছিলেন, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খানসহ সিনিয়র নেতারা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল।