অনলাইন ডেস্কঃ এক টুকরো জমিকে ঘিরে জেলার মানুষের কৌতুহলের যেন শেষ নেই। প্রতিদিন এ জায়গাটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন কৌতুহলী মানুষ।ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নূরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের ভাঙ্গারদিয়া গ্রামে স্থাপিত হতে যাছে অনন্য ভৌগোলিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বঙ্গবন্ধু মানমন্দির (বিজ্ঞান গবেষণাগার) ও পর্যটন কেন্দ্র।
কর্কট ক্রান্তি এবং ৯০ ডিগ্রি দ্রাঘিমার বিশ্বের একমাত্র ছেদবিন্দু ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার লোকালয়ে দৃশ্যমান ছেদ বিন্দু।চারটি উত্তর দক্ষিণ রেখা এবং তিনটি পূর্ব পশ্চিম রেখা, সব মিলিয়ে ১২ জায়গায় ছেদ করেছে। বারোটি বিন্দুর ১০টি বিন্দুই পড়েছে সাগরে-মহাসাগরে, সেখানে কেউ যেতে পারে না।
এর মধ্যে শুধু দুটি ছেদ বিন্দু পড়েছে স্থলভাগে। এর একটি পড়েছে সাহারা মরুভূমিতে, সেখানেও কেউ যেতে পারে না। আরও নির্দিষ্ট করে বললে কর্কট ক্রান্তি এবং ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমার ছেদ বিন্দুটি পড়েছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায়।
গত ২৮ জুন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত লেখক, পদার্থবিদ ও শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘একটি স্বপ্ন’ প্রবন্ধে মানমন্দির নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার সংবাদটি জানা যায়। এ খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নূরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের ভাঙ্গারদিয়া গ্রামে জেলা ও আশপাশের বিভিন্ন স্থান থেকে কৌতুহলী লোকজন আসতে শুরু করেছে স্থানটি দেখতে।
ধারণা করা হচ্ছে, এটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে শুধু দেশের পর্যটকসহ সারা বিশ্ব থেকে মানুষ আসবে ভৌগোলিক এ গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি দেখতে। সম্প্রতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সেখানে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানমন্দির’ স্থাপন করার জন্য একটা প্রকল্প প্রণয়ণের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান ফরিদপুরে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানমন্দির তৈরি করার জন্য ভাঙ্গাকে একেবারে আদর্শতম জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কেননা ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার পথ হচ্ছে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে এবং এশিয়ান হাইওয়ের করিডোর-১ এর অংশ।
ফরিদপুর শহর থেকে ভাঙ্গা যাবার সড়কে পুখুরিয়া নামক স্থান থেকে সদরপুর উপজেলার দিকে যেতে স্থানীয় বাইশরশি শিব সুন্দর একাডেমি সংলগ্ন নুরুলাগঞ্জমুখী রাস্তা ধরে ৩ কিলোমিটার এগোলেই ভাঙ্গারদিয়া গ্রাম।
সেখানে বিল ধোপডাঙ্গা মৌজায় বারেক মাতুব্বর, ইকবাল মাতুব্বর, কুটিপাগলা, জাকির হোসেন, ইউসুফ মাতুব্বর, আজিজুল মাতুব্বর, শাহ জাহান শেখ ও মোফাজ্জেল হোসেনের প্রায় ৫ একর কৃষি জমিকে প্রাথমিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান মানমন্দির’ প্রকল্পের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।
লেখক, পদার্থবিদ ও শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘একটি স্বপ্ন’ প্রবন্ধে বলেছেন, জমি চাষ করার সময় অনেক মানুষ এই বিন্দুটির উপর দিয়ে হেঁটে গিয়েছে কিন্তু এই জায়গাটির অচিন্তনীয় ভৌগোলিক গুরুত্ব অনুভব করে সম্ভবত আর কেউ এখানে পা দেয়নি।
প্রতি বছর জুন মাসের ২১ তারিখ দুপুর ১২টার সময় কেউ যদি বাইরে দাঁড়ায় এবং আকাশে মেঘ না থাকে তাহলে আবিষ্কার করবে সূর্য ঠিক মাথার উপর এবং সেজন্যে সেখানে তার কোনো ছায়া পড়ছে না। কর্কট ক্রান্তি এবং ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমার সেই ছেদ বিন্দুতে সেটি একেবারে পুরোপুরি আক্ষরিকভাবে সত্যি।
তিনি জানান, এখানে মানমন্দির নির্মাণ হলে শুধু দেশের পর্যটকরা নয়, সারা বিশ্ব থেকে মানুষ আসবে ভৌগলিক এ গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি দেখতে। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেন জাফর ইকবাল। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীসহ উপস্থিত সবাই প্রস্তাবটি সাদরে গ্রহণ করেন।
এরই মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানমন্দির’স্থাপন করার জন্য একটা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে গেছে। কারিগরি কমিটি তৈরি করে এরইমধ্যে একটি সভাও হয়ে গেছে।
ভাঙ্গার সেই ভাঙ্গারদিয়া গ্রামের মানুষ জানায়, এই বিখ্যাত জায়গাটির পরিচিতি যাতে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে সেজন্য এলাকার সকলেই ন্যায্য দামে সরকারকে জমি লিখে দিতে রাজি আছি।
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানমন্দির’ ও পর্যটন কেন্দ্র নির্মান করা হলে কৃষি নির্ভর এই অঞ্চলের মানুষের জীবন মানের ব্যাপক উন্নয়ন হবে, বদলে যাবে জীবন ধারা। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটার পাশাপাশি কয়েক গুণে বৃদ্ধি পাবে জমির দাম, যার সুফল ভোগ করবে এই এলাকার সাধারন মানুষ।
ফরিদপুরের মানুষ সৌভাগ্যবান উল্লেখ করে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর স্বপন কুমার হালদার বলেন, কর্কটক্রান্তি এবং ৯০ ডিগ্রি দ্রাঘিমার ছেদ বিন্দু ফরিদপুরের রয়েছে। এই ছেদ বিন্দুকে ঘিরে সরকার বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করলে এই দেশকে যেমন পৃথিবীর মানুষ আরো চিনবে, তেমনি এ অঞ্চলের মানুষে জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, নূরুলাগঞ্জ ইউনিয়নের ভাঙ্গারদিয়া গ্রামের বিল ধোপাডাঙ্গা মৌজার ওই স্থানটিতে আর্ন্তজাতিক মানের একটি গবেষণাগার এবং বঙ্গবন্ধু মানমন্দির নির্মাণে সম্ভবতা যাচাই করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারি লোকজন এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন। এরইমধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানমন্দির’ স্থাপন করার জন্য একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের এই মানমন্দির ও পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করতে বেশ কয়েক একর জায়গার প্রয়োজন হবে। এতে এ এলাকার মানুষের মানোন্নোয়নসহ মানুষের জীবনমানের বিকাশ ঘটবে এবং জায়গা উন্নত হবে।