বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমেছে স্মৃতিশক্তি কমেছে শরীরের বল। কথা বলতেও কষ্ট হয় বেগমি বাঁশফোড়ের। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে বার্ধক্যের কারণে গুজো হয়ে গেছেন। এখন তাকে প্রায়শই দেখা যায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকা বোতল প্লাস্টিক কুড়িয়ে বিক্রি করছেন। সঠিক বয়স বলতে না পারলেও বলছেন ১০০ ছাড়িয়েছে বহু আগে তবে জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২১ মার্চ। বর্তমানে তিনি খুলনা নগরীর ১১ নং ওয়ার্ডে নিউ কলোনির সুইপার পাড়ায় বসবাসরত করছেন।
বেগমি বাঁশফোড়ের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তার জীবনের দুর্বিষহ কষ্টের ইতিহাস। তিনি জানান, তার পৈতৃক বাড়ি ভারতের বর্ধমান জেলায়। সেখান থেকে স্বপরিবারে চলে আসেন বগুড়া জেলার শান্তাহারে। শান্তাহারেই তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী আর শাশুড়ির সাথে ১৯৬০ সালে খুলনায় আসেন। খুলনায় এসে পিপলস জুট মিলসে পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে চাকরি নেন। চাকুরির সুবাদে তার বসবাস পিপলস নিউ কলোনির সুইপার পাড়ায়। এরপর ১৯৭১ সালে যুদ্ধের আগেই স্বামীকে হারিয়েছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর দুই মেয়ে, দুই ছেলে আর শাশুড়িকে নিয়ে থাকতেন পিপলস মিলের শ্রমিক কোয়ার্টারের সুইপার পাড়ায়। মিলের পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে কাজ করতেন কলোনির সকল টয়লেট আর ঝড়না কল পরিষ্কারের। চার ছেলে মেয়ের ভিতরে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে এবং বৃদ্ধা শাশুড়ি ও মারা যায়। দীর্ঘদিন এই সংসার একাই পরিচালনা করেন বেগমী বাঁশফোড়।
মেয়ে ও ছেলেকে বিয়ে দিলে তারাও সংসারী করে। ছেলের বিয়ের পর পরিচ্ছন্ন কর্মীর কাজ করতেন। তবে অভাগা বেগমি বাঁশফোড়ের কাজ তখনও চলছে দীর্ঘ বছর কাজ করার পরেও নিস্তার নেই তার। সরকারিভাবে বয়স্ক ভাতা ও পেলেও পায়না বিধবা ভাতা। এছাড়া স্থানীয় কোনো সাহায্য সহযোগিতা পান না বলে জানিয়েছেন বেগমি বাঁশফোড়।
বেগমির বাঁশফোড়ের ছেলে যমুনা বাঁশফোড় স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে মারা গেছে তিন বছর হল। যমুনার মৃত্যুর পর তার দুই ছেলের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় ও মেয়ে বিয়ে দিয়ে দেন তারা।
বর্তমানে যমুনার স্ত্রী স্থায়ীভাবে কোথাও কাজ পাচ্ছে না। যখন যেখানে যতটুকু কাজ পায় ততটুকু করে সংসার চালানোর চেষ্টা করছে। ওদিকে বেগমি কাজ করার স্ব ক্ষমতা আর নেই। যমুনার বড় ছেলে অয়াজিন বাঁশফোড় কিছুদিন আগে দিনমজুর হিসেবে কাজ শুরু করেছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।
বেগমি তার ছেলের বউ গীতা বাঁশফোড়কে নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর মুন্সি আব্দুল ওদুদের কাছে সাহায্যের জন্য গেলে, কাউন্সিলর তাদের কথায় কোনো কর্ণপাত করেন না।
এ বিষয়ে নবনির্বাচিত কাউন্সিলর মোঃ নাইমুল ইসলাম খালেদ বলেন, আমি গীতা বাঁশফোড় বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করবার চেষ্টা করব এবং তার ছেলে যাতে স্থাই ভাবে কাজ করতে পারে তার ব্যবস্থা করব। শুধু তারাই না আমার ১১ নং ওয়ার্ডবাসি যাতে শান্তিতে থাকতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয়ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো ইনশাল্লাহ।