বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ’র বিরুদ্ধে তদন্তকাজে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বা অন্য কেউ প্রভাব বিস্তার করেননি। স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তদন্ত কাজ করেছে। তারপর তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বেরোবির উপাচার্যের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে শনিবার (৬ মার্চ) ইউজিসি থেকে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে এসব কথা বলা হয়েছে। বলা হয়, সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও ইউজিসি নিয়ে অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ’র যেসব মন্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ ব্যাপারে ইউজিসির বক্তব্য-
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন দেশের উচ্চশিক্ষার বিস্তার, গুণগত ও মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণা নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের দেখভাল, আর্থিক মঞ্জুরি ও গবেষণা সহায়তা দিয়ে আসছে। ইউজিসি সব সময় নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে কাজ করছে এবং কখনোই তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপিত হলে তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ইউজিসিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। অনিয়মের অভিযোগটি পরিকল্পনা সংক্রান্ত হওয়ায় ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য, পরিচালক ও অতিরিক্ত পরিচালকের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পদমর্যাদা অনুযায়ী তারা কমিটির আহ্বায়ক, সদস্য ও সদস্য সচিব হয়েছেন।
তদন্ত কমিটি পেশাদার মনোভাব নিয়ে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ, সরেজমিনে পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত হয়ে একটি বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে। পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। তদন্তটি দীর্ঘ সময় ধরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর কোনো পর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রী বা অন্য কেউ প্রভাব বিস্তার করার কোনো ধরনের সুযোগ নেই।
কমিশন দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চায়, বেরোবির বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত সম্পূর্ণ স্বাধীন ও প্রভাবমুক্তভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ শিক্ষামন্ত্রী ও তদন্ত কমিটি নিয়ে ব্যক্তিগত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, যা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। উপাচার্যের মতো দায়িত্বশীল পদে থেকে একজন ব্যক্তির কাছ থেকে কোনোভাবেই এটি প্রত্যাশিত নয়।
শিক্ষামন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তিনি কখনো কোনো বিষয়ে প্রভাব বিস্তারের বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেননি। কোনো উপাচার্য বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে এমন কোনো ধরনের পরামর্শ বা নির্দেশনা তিনি কখনোই প্রদান করেননি।
বরং তিনি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে গুণগত ও মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ও টেকসই উন্নয়নের গুরুত্ব দিয়েছেন। ইউজিসি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে কমিশন সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করে। এছাড়া ইউজিসি এ ব্যাপারে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার অনুরোধ জানিয়েছে।