কিডনি মানুষের রক্ত পরিশোধনে কাজ করে। গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গের রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে বড় একটি রোগ হলো কিডনিতে পাথর।
সাধারণত কিডনির ভিতরে থাকা খনিজ এবং লবন জমাট বেঁধে পাথর হয়। এছাড়াও মানুষের ডায়েট, শরীরের ওজন ও কিছু ওষুধও এর পিছনে কাজ করে। একটা সময় পাথরের চিকিৎসা মানেই ধারণা করা হতো অস্ত্রপচার করতে হবে। তবে এখন চিকিৎসা পদ্ধতি অনেক উন্নত হয়েছে। নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে কিছুটা সচেতন হলেই অপারেশন ছাড়া এর ভালো চিকিৎসা সম্ভব।
কিডনির পাথর এড়াতে করণীয় এবং চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন সিকে বিরলা হাসপাতালের ইউরোলজি ও অ্যান্ড্রোলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ শালভ আগরওয়াল।
কিডনিতে পাথর হলে কী হয়?
পাথর কিডনি থেকে মূত্রাশয় পর্যন্ত মূত্রনালীর যে কোনও অংশকে প্রভাবিত করতে পারে। পাথর হলে সেগুলো মানুষের জন্য অনেক কষ্টদায়ক হয়। কিডনিতে পাথর হলে ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্ষমতা কমতে থাকে এবং একসময় একেবারেই অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। তবে সময় মতো পদক্ষেপ নিলে সুস্থ হওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন ডা. আগারওয়াল।
পরিস্থিতি বিবেচনায় কিডনিতে পাথর কাটানোর জন্য ব্যথার ওষুধ খাওয়া এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করাই যথেষ্ট হতে পারে। তবে মূত্রনালী বন্ধ হলে বা ইনফেকশন হলে তখন শল্য চিকিৎসা অপরিহার্য বলেও জানান তিনি।
প্রতিরোধের উপায়:
বেশি বেশি পানি পান
কিডনিতে পাথর হওয়া এড়াতে কারও প্রধান ও প্রথম পদক্ষেপ হবে বেশি বেশি করে পানি পান করা। যা মূত্রনালীর স্রাব বের করতে এবং প্রস্রাব পাতলা করতে সহায়তা করে, ফলে পাথর জমতে পারেনা। একজন মানুষকে প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। আর সবচেয়ে ভালো হয় প্রতি ঘন্টায় এক গ্লাস করে পানি খেলে।
লবণ খাওয়া কমান
দৈনন্দিন খাবারে বেশি পরিমাণে লবণ খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। কেননা প্রস্রাবে অত্যধিক লবন ক্যালসিয়ামকে প্রস্রাব থেকে রক্তে পুনঃসংশ্লিষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করে।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান
খাবার তালিকায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার থাকলে তা প্রস্রাবে অক্সালেটের ঘনত্ব কমায়, যা কিডনির পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমায়। সেজন্য প্রতিদিনের খাবার তালিকায় দুধ, দই, মটরশুটি এবং রুটি থাকা প্রয়োজন।
চিনিযুক্ত ও ক্যাফিনেটেড পানীয় এড়িয়ে চলুন
প্রচুর পরিমাণে কফি পান, বা বাজারে যেসব ঠান্ডা পানীয় পাওয়া যায় সেগুলো বেশি পরিমাণ পান করলে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই এগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
কিছু খাবার এড়িয়ে চলুন
কিডনির পাথর হওয়া এড়াতে অবশ্যই চকলেট, বাদাম, পালংশাক এড়িয়ে চলতে হবে। এই খাদ্যগুলোতে অক্সালেট থাকে যা পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রোটিন খাওয়া কমান
গরু-ছাগল বা মুরগির মাংস, ডিম এবং সামুদ্রিক মাছ শরীরে ইউরিক এসিড বাড়িয়ে তোলে। তাই যতটা সম্ভব প্রোটিন কম খেতে হবে। তবে একদমই এড়িয়ে যাওয়া যাবেনা।
ভিটামিন-সি কম গ্রহণ করুন
বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি খাওয়ার ফলে প্রস্রাবে অক্সালেটের পরিমাণ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে, যা কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষত যদি কোনও ব্যক্তির আগে থেকেই ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথরের ইতিহাস থাকে।
কিডনিতে পাথর হলে চিকিৎসা
এ প্রসঙ্গে ডা. আগারওয়াল বলেন, কিডনিতে পাথরের চিকিৎসা প্রধানত পাথরের আকার, কোন ব্যথা হচ্ছে কিনা বা মূত্রনালী বন্ধ হয় কিনা তার উপর নির্ভর করে। মূত্র ও রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে কিংবা সিটি স্কেন করে পাথর আছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে থাকতে কিছু ওষুধ ও বেশি পরিমাণে পানি পান করার মাধ্যমে মূত্রনালী দিয়ে পাথর বের করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু যদি পাথর বড় হয় এবং মূত্রনালী বন্ধ হয়ে যায় তবে সার্জারি করাতে হয়।