- কুয়েটে রাজনীতি বন্ধ, ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন
- শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত
- প্রশাসনিক ও সকল একাডেমিক ভবনে তালা
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) বুধবার দিনভর বিক্ষোভে উত্তাল পরিবেশ ছিলো। শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ না হওয়ায় সকল একাডেমিক ভবন ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভায় একাডেমিক কার্যক্রম ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। সেই সাথে নিষিদ্ধই থাকছে সকল ধরনের রাজনীতি। একইসঙ্গে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনসহ পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে কুয়টে হামলা ও উস্কানিতে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ছাত্রদল ।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হামলাকারীদের শাস্তি, উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠিত হয়নি কোনো পরীক্ষা- ক্লাস। পূর্ব ঘোষিত আলটিমেটাম অনুযায়ি দুপুর ১টার মধ্যে দাবি পূরণ না হওয়ায় ৭টি একাডেমিক ভবন ও একটি প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবারের হামলার জন্য ছাত্রদলকে দায়ী করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সিন্ডিকেট সভা শেষে বুধবার বিকেলে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা ভিসি, প্রো- ভিসি এবং ছাত্র বিষয়ক পরিচালককে বর্জন করছি। কুয়েটের সকল শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষরকৃত একই আবেদন প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে বুধবার এর মধ্যেই পাঠানোর কথা জানান। আমরা তাদের কাছে অনুরোধ করবো এই অভিভাবকহীন কুয়েটে অতিসত্বর ভিসি প্রো-ভিসি ও ছাত্র বিষয়ক পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে কুয়েটেরে ক্লাস পুনরায় চালু হোক।
আমরা কুয়েটের কোন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস থেকে যাচ্ছি না। যদি আগামীকা নতুন ভিসি নিয়োগ হয় পরশু থেকে আমরা ক্লাস করবো। নতুন ভিসি নিয়োগের আগ পর্যন্ত কুয়েটে কোন অভিভাবক নাই। আমরা এখন অভিভাবকহীন একটি ক্যাম্পাসে অবস্থান করছি। এখন আমাদের কোন নিরাপত্তা নাই আমরা দেশবাসীর কাছে আহ্বান করছি আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেওয়ার জন্য। আপনারা সহযোগিতা করবেন।
এদিকে পাঁচ দফা দাবিতে বুধবার সকাল ৯টা থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের সামনে অবস্থান নেন। এই চিকিৎসাকেন্দ্রের দোতলায় চিকিৎসাধীন ছিলেন ভিসি মুহাম্মদ মাছুদ। পরে বুধবার বিকেলে শিক্ষার্থীদের সহায়তায় তাকে তার বাসভবনে হস্তান্তর করা হয়।
অপরদিকে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে খুলনার শিববাড়ি মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা। সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা প্রেসক্লাবের লিয়াকত আলী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদল। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা কুয়েটে হামলা ও উসকানিতে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্র আন্দোলনের মধ্যদিয়ে নতুন একটি বাংলাদেশে আমরা পদার্পন করেছি। সেই বাংলাদেশে যদি আমরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বলি ছাত্র রাজনীতি থাকবে না। বিগত জুলাই-আগস্ট বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন না আনলে রাজনীতি করাটা কঠিন হবে। ছাত্রদল শুরু থেকেই ইতিবাচক রাজনীতি করে আসছে। সংকটটা তখনই প্রকট হবে যদি আপনি জুলাই-আগস্টের স্প্রীটের সঙ্গে না যান। ছাত্রদল সবসময় জুলাই-আগস্টের স্প্রীটকে ধারণ করে প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি করতে চায়। আমরা একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজ চাই। যেখানে সব দলের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় অনলাইনে অনুষ্ঠিত খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৯৮তম (জরুরি) সভায় তদন্ত কমিটি গঠন সহ পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কুয়েটে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ঘোষিত রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের আদেশটি বহাল থাকবে অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সকল ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল, তা কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে।
এ ছাড়া খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৩ এর ধারা ৪৪(৫) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সকল ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। এ আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান অনুযায়ী চাকরিচ্যুত করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া রাজনীতির সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তদন্ত সাপেক্ষে আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবারের সংঘষের ঘটনায় জড়িত বহিরাগতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং একইসঙ্গে সরাসরি জড়িত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হবে। প্রকৃত দোষী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করাসহ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করবে।
কমিটির সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. এম. এম. এ. হাসেম, সদস্য শহীদ স্মৃতি হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মোহাম্মাদ আবু ইউসুফ, সিভিল ইঞ্জিয়িয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. আবু জাকির মোর্শেদ ও সদস্যসচিব সহকারী পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) শাহ মুহাম্মদ আজমত উল্লাহ।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের তত্ত্বাবধায়নে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসন কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনায় আহত সকল শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যায় কর্তৃপক্ষ বহন করবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যনন্ত সকল প্রকার একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (নর্থ) মো. নাজমুল হাসান রাজীব বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় কোন মামলা হয়নি এখনও। ক্যাম্পাসের গেটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।