খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদালয়ে (কুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে—এমন অভিযোগে পরীক্ষা স্থগিত করেছেন বিভাগের শিক্ষকেরা। আজ শনিবার সকালে বিভাগটির চতুর্থ বর্ষের পূর্বনির্ধারিত ‘ভূ-কারিগরি প্রকৌশল’ বিষয়ের পরীক্ষা শুরুর আগেই বিভাগের শিক্ষকদের জরুরি সভায় পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সঙ্গে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ওই নিয়োগ আদেশ সংশোধনের আবেদন জানিয়েছেন সিন্ডিকেটের ছয় সদস্য।
দুজন সিন্ডিকেট সদস্য প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, অনুষদের জ্যেষ্ঠতম অধ্যাপক ডিন হিসেবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়োগ পাবেন—এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম। সেই অনুযায়ী, নভেম্বরে একটি সিন্ডিকেট সভায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক কাজী সাজ্জাদ হোসেনকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে পরে কার্যপত্রে দেখা যায়, কাজী সাজ্জাদের নাম নেই। সাত দিনের মধ্যে কার্যপত্রের সংশোধনী পাঠান এক সিন্ডিকেট সদস্য। পরে ১১ ডিসেম্বরের বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় আবারও কাজী সাজ্জাদ হোসেনকে ডিন করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে ডিন নিয়োগের আদেশে দেখা যায়, কাজী সাজ্জাদ হোসেনকে ডিন করা হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিন্ডিকেটের এক সদস্য বলেন, ‘সিন্ডিকেটের সভায় যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তার প্রতিফলন না হওয়ায় ২০ ডিসেম্বর নিয়োগ আদেশ সংশোধনের জন্য আমরা কুয়েটের অভ্যন্তরীণ ছয়জন সিন্ডিকেট সদস্য সিন্ডিকেটের সভাপতি (উপাচার্য) বরাবর আবেদন করেছি। নিয়োগের অফিস আদেশে লেখা, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অথচ সেটা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত ছিল না। কাজেই সিদ্ধান্তের সংশোধনী দরকার। সিন্ডিকেটে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সে অনুয়ায়ী নিয়োগ আদেশ দেওয়া উচিত।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১১ ডিসেম্বর গণিত বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে—এমন অভিযোগে ১৭ ডিসেম্বর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. আবু জাকির মোর্শেদ ডিন নিয়োগের অফিস আদেশ সংশোধন করার বিষয়ে উপাচার্য বরাবর একটি চিঠি দেন।
চিঠিতে বলা হয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০২৩–এর ২৩ (৫) ধারা ভঙ্গ করে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১৭ ডিসেম্বর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ভঙ্গ করে জ্যেষ্ঠতা উপেক্ষা করে ডিন নিয়োগের ব্যাপারে উপস্থিত সব শিক্ষক তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। উপস্থিত সব শিক্ষক সংশ্লিষ্ট অবৈধ নিয়োগটি ২৪ ডিসেম্বর অফিস চলা সময়ের মধ্যে সংশোধনের ব্যাপারে জোর দাবি জানান। ওই সময় পর্যন্ত ডিনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কার্যক্রমে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ অংশগ্রহণ করবে না বলে উপস্থিত সব শিক্ষক সিদ্ধান্ত নেন।
এ বিষয়ে কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক মিহির রঞ্জন হালদারের সাথে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. আবু জাকির মোর্শেদ বলেন, ‘২০ ডিসেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া ডিন উপস্থিত ছিলেন বিধায় আমাদের বিভাগ থেকে আমরা সেখানে অংশ নিইনি। এ ছাড়া আজ শনিবার সকালে চতুর্থ বর্ষের একটি পরীক্ষা ছিল। নিয়ম অনুয়ায়ী, কোনো অনুষদের ডিন তাঁর অধীন থাকা বিভাগগুলোর পরীক্ষায় প্রধান প্রত্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষকেরা অবৈধ প্রধান প্রত্যবেক্ষকের অধীন পরীক্ষা নিতে সম্মত হননি। জরুরি সভা করে পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজ বিকেলে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা হওয়ার কথা আছে, তবে কর্তৃপক্ষ ওই বিষয়ে আশ্বস্ত না করলে সেটাও হয়তো স্থগিত করা হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই না শিক্ষার্থীরা অসুবিধায় পড়ুক। তবে এ ধরনের অনৈতিক একটি বিষয় শিক্ষকেরা মেনে নিতে পারছেন না। বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে বিষয়টির সুরাহা না হলে পরের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’