শেখ মাহতাব হোসেন :: খুলনার ডুমুরিয়ায় চলতি মৌসুমে টমেটো চাষ করে লাখপতি হয়েছেন মিতালী মন্ডল নামে এক কৃষাণি। কৃষাণি বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার বান্দা ইউনিয়নের ছোটবন্দ, গ্রামে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, মিতালীর নিজের কোন জমি নেই। তিনি বাড়ির পাশে ৩০ শতক জমি ৬ হাজার টাকায় বর্গা নিয়ে ২৫ শতক জমিতে টমেটো চাষ করেছিলেন। বাকি ৫ শতক জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। এরই মধ্যে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। আরো অন্তত ২০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
মিতালী মন্ডল জানান, এবার নিয়ে চার বছর ধরে জমি বর্গা নিয়ে টমেটো চাষ করছেন তিনি। এর মধ্যে গত তিন বছরই তাকে লোকসান গুণতে হয়েছে। এ বছর তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে লাভের মুখ দেখছেন।
এছাড়া কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রযুক্তি সহায়তা পেয়েছেন। বিষমুক্ত সব্জি উৎপাদনের জন্য কৃষি বিভাগের পরামর্শে জমিতে কীটনাশক ব্যবহার না করে ব্যবহার করেছেন সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ। ফলে এবার টমেটোর ভালো ফলন হয়েছে। এছাড়া ভালো দামও পেয়েছেন। ফলে মাত্র ২৫ শতক জমি থেকেই এক লাখ টাকার ওপরে টমেটো ইতোমধ্যে বিক্রি করেছেন। আরো অন্তত ২০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান। মিতালী মন্ডল আরো জানান, এই জমি করতে খরচ বলতে তার জমির বর্গা বাবত ৬ হাজার টাকাই খরচ হয়েছে। বাদবাকি বীজ, সার ও সেচসহ সব ধরনের কৃষি উপকরণ খরচ যখন যেটা প্রয়োজন এটা কৃষি বিভাগ ২০২২ প্রকল্প থেকে দেয়া হয়েছে। ফলে ইতোমধ্যে তিনি প্রা লাখ টাকা লাভ করেছেন।
এছাড়া জমি থেকে টমেটো তোলার সময় ফাঁকে ফাঁকে শশা চাষ করেছেন। বেগুন এবং শশা চাষের খরচও কৃষি বিভাগ ২০২১ প্রকল্প থেকে দেয়া হয়েছে। বেগুন এবং শশা বিক্রির মাধ্যমেও অন্তত আরো ৫০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে তিনি আশা করছেন।
ডুমুরিয়ার কৃষক সোলায়মান হক বলেন, এক বিঘা জমিতে মাত্র ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ করে মাত্র ৪-৫ মাসে ১-১.৫ লাখ টাকা লাভ করা যায়। টমেটোর চারার বয়স ২৫ দিন হলে জমিতে লাগানো এবং লাগানোর ২০-২৫ দিন পর থেকে ফুল আসা শুরু করে। প্রায় ৩৫-৪০ দিন পর থেকে ফল পাওয়া যায়। একটি গাছে প্রায় ৩০ টাকা খরচ হয় এবং প্রায় ৫-৬ কেজি টমেটো পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য প্রায় ২০০-২৫০ টাকা।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন জানান, অসচ্ছল ও হতদরিদ্র কৃষকদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে কৃষি সমন্বিত কৃষি খামারে কৃষকেরা একই জমিতে একাধিক ভিন্ন ভিন্ন সবজি ও ফসল উৎপাদন করছেন। এর মাধ্যমে অসচ্ছল ও হতদরিদ্র কৃষকেরা নিজেদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছেন। তাদের এই সফলতায় এলাকার অন্য কৃষকরাও এতে উদ্ধুদ্ধ হচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, তার উপজেলা সবজির আবাদের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। এখানে গ্রীষ্মকালে ৮০ হেক্টর জমিতে টমেটো আবাদ হয়। যা এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এক একটি গাছে ৫-৬ কেজি করে টমেটো ধরেছে। পাশাপাশি শীতকালীন টমেটো চাষ হয়েছে ১২০ হেক্টর জমিতে। এখানে মঙ্গল রাজা, লাভলী, মিন্টু সুপার, বারি হাইব্রিড-৪, বারি হাইব্রিড-৮ ইত্যাদি জাতের টমেটোর আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি টমেটোর আবাদ হয়েছে ধামালিয়া ইউনিয়নের কাটেঙ্গা, খর্নিয়া ইউনিয়নের খর্নিয়া এবং গুটুদিয়া ইউনিয়নের বিলপাবলা গ্রামে। সার, বীজ, প্রশিক্ষণ এবং মাঠে গিয়ে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ। অন্যন্য ফসলের মতো বেচতে সমস্যা না হওয়ায় এবং বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় দিন দিন এটির আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এটি সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে খুলনায় ৯২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এ বছর টমেটোসহ ২৬ ধরনের সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৯১০ ইতিমধ্যে ৬৬৯০ হেক্টর জমিতে চাষ সম্পন্ন হয়েছে।