চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত জমিতে স্থাপনা ভাঙাকে কেন্দ্র করে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) ও খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড এই দুই সংস্থার মধ্যে বাক-বিতন্ডা ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের আওতায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় শিপইয়ার্ড এর বাউন্ডারী ওয়াল ভাঙতে গেলে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরে কেডিএ চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
সংশ্লি¬ষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প রয়েছে, সড়ক প্রশস্তকরণের মাধ্যমে চার লেনে উন্নীতকরণ, ডিভাইডার, লাইট ও ৩টি কালভার্ট নির্মাণ। ওই বছর ৩০ জুলাই প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন মেলে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় এখনও এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ফলে এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নগরবাসী।
সূত্রটি জানায়, কালক্ষেপন হওয়ায় কেডিএ সড়কটি বাস্তবায়নে সম্প্রতি বেশ তোড়জোর শুরু করেছে। কিন্তু শিপইয়ার্ড সড়কের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে শিপইয়ার্ডের সীমানা প্রাচীর। সঙ্গতকারণে গতকাল বিকেল ৩টায় কেডিএ’র নেতৃত্বে বুলডোজার দিয়ে ওই সীমানা প্রাচীর ভাঙতে যাওয়া হয়। এ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন সুলতানাকে সঙ্গে নিয়ে শিপইয়ার্ডের প্রাচীর ভাঙতে যায় কেডিএ। এসময় কেডিএ’র উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের টাকা পাওয়া যায়নি অভিযোগ তুলে তাতে বাধা দেয় শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ।
কেডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী সাবিরুল আলম ও নির্বাহী প্রকৌশলী ও ওই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোঃ আরমান হোসেন বলেন, জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ওই প্রকল্পের কাজ শুরুই করা যাচ্ছে না। অন্য সব জায়গার সমাধান হলেও শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ তাদের জায়গার বর্তমান মূল্য চেয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করেছে। তবে ওই মামলায় আদালত কোনো স্থগিত আদেশ দেয়নি। অন্যদিকে শিপইয়ার্ডের জমি অধিগ্রহণ বাবদ ৯ কোটি টাকা জেলা প্রশাসনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন জমি কেডিএকে বুঝিয়ে দিয়েছে। কেডিএ’র নামে ওই জমি গেজেট হয়েছে। তাই সড়ক বাস্তবায়নের স্বার্থে গতকাল স্থাপনা অপসারণে যায় কেডিএ। কিন্তু তারা অপসারণে বাধা দেয়। এক পর্যায়ে বুলডোজার চালক বেলাল হোসেনকে মারধর করা হয়। সে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শিপইয়ার্ডের ম্যানেজার এডমিনিস্ট্রেশন মোঃ গোলাম সরোয়ার বলছেন, জেলা প্রশাসন ওই জমিসহ ক্ষতিপূরণ মূল্য ধরেছে মাত্র ১ কোটি ২৪ লাখ ১১ হাজার ৬শ’ ৯১ টাকা। কিন্তু তারা কেডিএ’র কাছ থেকে অধিগ্রহণ বাবদ নিয়েছে ৯ কোটি টাকা। কম টাকা দেওয়ায় আদালতে মামলা করা হয়েছে। ওই মামলার কোনো সুরাহা না হওয়া পযন্ত শিপইয়ার্ডের কোনো স্থাপনা ভাঙা যাবে না। তাছাড়া স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে আগ থেকে কেডিএ কোনো নোটিশ করেনি। কাউকে মারধর করা হয়নি বলে দাবি করেন তাঁরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, কেডিএ ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে তা দেওয়া হয়। কিন্তু বাধার মুখে সবাইকে ফিরে আসতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ১৯৮২ সনের স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ, হুকুম ও দখল অধ্যাদেশ অনুযায়ী শিপইয়ার্ডের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। নতুন আইনে তারা টাকা পাবে না। কিন্তু শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ চায় নতুন আইনে অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধ করতে। কিন্তু সরকারি বিধান অনুযায়ী তা সম্ভব নয়। এ কারণে তারা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।