শাহজাহান সিরাজ, কয়রা (খুলনা):: বিগত বছর তরমুজের বাম্পার ফলন ও বাজার মূল্য বেশি পেয়ে চলতি মৌসুমে কয়েক হাজার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করছেন কৃষকরা। করোনার আগাত শেষ শেষ হতে না হতেই মৌসুমি ফসল তরমুজ চাষে স্বপ্ন বুনছেন কয়রার তরমুজ চাষিরা। মাঠের পর মাঠ ঢেকে আছে সবুজে ঘেরা তরমুজ গাছে। এ খেত দেখে মুখে হাসি তরমুজ চাষীদের। কিন্তু সে হাসি আস্তে আস্তে উবে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় পানির অভাবে লাভের আশা ছেড়ে দিয়েছেন কৃষকরা। খুলনার উপকূলীয় এলাকা কয়রা উপজেলার আমাদী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামসহ পাইকগাছা উপজেলা কিছু এলাকায় এবার প্রায় ১০ হাজার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। সোমবার সরেজমিনে এসব তরমুজ খেত ঘুরে দেখা গেছে অনাবৃষ্টি এবং এলাকায় মিষ্টি পানির অভাবে চাষীরা দিশেহারা। এসময় প্রখর রোদের মধ্যে কৃষকরা নিজ নিজ তরমুজ খেতে দাড়িয়ে ক্ষোভের সাথে জানান, দীর্ঘদিন আমাদী ইউনিয়নে কয়েকটি গ্রামে তরমুজের চাষ হয়ে আসছে। কিন্তু আজও এই এলাকায় খাল খনন না হওয়ায় প্রতিবারই তারা পানির অভাবে কষ্ট পায়। চাষীরা আরও বলেন, অন্যান্য বছর মাঘ, ফাল্গুনে বৃষ্টি হলেও এবার এখনও বৃষ্টি না হওয়ায় খুব কষ্ট করে দুর থেকে কলসে করে পানি এনে গাছ গুলো বাঁচিয়ে রেখেছি।
চান্নির চক গ্রামের কৃষক চতুর মন্ডল জানান, ১০ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে তিনি ২ লক্ষাধিক টাকা খরচ করেছেন। এবং টাকা দিয়ে প্রতিদিন আধা কিলোমিটার দুরে বিলের মধ্যে থেকে কলসে করে পানি বয়ে এনে গাছ
বাঁচাতে চেষ্টা করছেন। এ বিষয় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও তরমুজ চাষী মনোরঞ্জন সরকার জানান, আমাদী ইউনিয়নে বৃহত্তর চান্নিরচক সহ হাতিয়ারডঙ্গা, ভাগবা, হরিকাটি,, চন্ডিপুর, খেওনা, পাটনিখালী, কিনুকাটি, মসজিদকুড় সহ পার্শ্ববর্তী পাইকগাছা থানার বাইনবাড়ী, কুমখালী গ্রামে হাজার হাজার বিঘা জমিতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে তরমুজের চাষ করছে কৃষকরা। কিন্তু পানির অভাবে অনেক কৃষক আজ দিশেহারা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হারুনর রশিদ বলেন যে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি বৃষ্টি হচ্ছে না যেহেতু গাছ বাঁচাতে কলস পদ্ধতিতে সেচ প্রদান করার জন্য। তিনি আরও বলেন, কৃষকদের
খরচ কমাতে আমরা বৈজ্ঞানিকরা অমৌসুমের তরমুজ জাত বের করছি। এদিকে খুলনার দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকা কয়রার মাটিতে হাজার হাজার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আকতারুজ্জামান বাবুর সাথে কথা বললে তিনি অত্যান্ত আনন্দের সহিত জানান, তিনি এই তরমুজ চাষী এবং বোরো ধান চাষীদের পানির চাহিদা মেটাতে ইতোমধ্যে ১২ টি খাল খননের অনুমতি পেয়েছেন। তিনি বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিএডিসির আওতাধীন খাল খনন প্রকল্প ও মন্ত্রণালয়ের অধীনে কয়েকটি খাল খননের আবেদন করায় দ্রুত বরাদ্ধ পাওয়ার আশা করছেন। যা আগামী মৌসুমে কৃষকদের কাজে আসবে। তিনি আরও বলেন, তরমুজ চাষীদের আগ্রহ বাড়াতে সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জোর চেষ্টাও করছেন।