কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি :: কৃষি বিপ্লবে যুক্ত হয়েছে উচ্চফলনশীল “গ্রীষ্মকালীন টমেটো’ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত উন্নতজাতের এই সবজিকে সামার টমেটোও বলা হয়ে থাকে। তারই ধারাবহিকতায়,
খুলনার কয়রা উপজেলায় সাদা পলিথিন ও বাঁশের ছাউনি দিয়ে শেড করে আধুনিক প্রযুক্তিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন কৃষক গোপাল সরকার। অসময়ে টমেটো চাষ করে দামও পাচ্ছেন ভালো। বাড়ছে চাষের পরিধি। অন্য কৃষকরাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন টমেটো চাষে। প্রায় ২৫ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন বারি হাইব্রিড টমেটো ৪ ও ৮ জাতের টমেটোর চারা রোপন করেছেন তিনি। এ জন্য প্রস্তুত, সার,ঔষুধ ও পরিচর্ষা বাবদ কৃষকদের সহযোগিতা করেছেন সরেজমিন গবেষণা বিভাগ। ভাল ফলনের আশায় গোপাল সরকার ও তার স্ত্রী টুম্পারানী সরকার দিনের বেশির ভাগই সময় ব্যয় করেন জমিতে। লাভের আশায় চাষ করা এই টমেটোকে ঘিরে তার এই দিন রাত খাটুনি।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, উপজেলাপর ৪ নং কয়রা গ্রামের বাসিন্দা গোপাল সরকার ও তার স্ত্রী টুম্পারানী সরকার টমেটো ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত। সেসময় টমেটো চাষে পরামর্শ দিতে যাওয়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট অফিসারকে দেখে তিনি এগিয়ে আসেন এবং তার কাছে পরামর্শ চান। তার থেকে পরামর্শ পেয়ে আনন্দিত এ কৃষক। এ প্রতিবেদককে কৃষক গোপাল সরকার বলেন, প্রায় ২৫ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন বারি হাইব্রিড টমেটো ৪ ও ৮ জাতের টমেটোর চারা রোপন করেছি। শুরু থেকেই সারাদিন চারাগুলোর যতœ নেই। কৃষক বলেন টমেটো চাষে সার, বীজ, কীটনাশক বাদে সব মিলিয়ে এখানে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি আরও বলেন গত দুই সপ্তাহ থেকে ক্ষেত থেকে পাকা টমেটো তুলে বাজারে বিক্রি শুরু করেছি এবং ইতোমধ্যে ২৫ হাজার টাকার মত বিক্রি করেছি। একনখার বাজারদর হিসেবে ফলন অবহ্যত থাকলে আর কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে এই ফসল বিক্রি করে এক লক্ষ থেকে দেড় লক্ষ টাকা আসবে বলে আমার ধারনা। কারন বর্তমান বাজারে টমেটোর প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমএলটি সাইট কয়রার বৈজ্ঞানিক সহকারি জাহিদ হাসান জানান, গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ বেশ লাভজনক। সরেজমিন গবেষণা অফিস থেকে সবসময় কৃষকদের টমেটো চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কৃষক গোপাল ও তার স্ত্রী পরিশ্রম করতে পারেন তাই এ কৃষকসহ কয়রায় আরও অনেক কৃষককে টমেটো চাষে উৎসাহ দিয়েছিলাম। তারা উৎসাহিত হয়ে বারি হাইুব্রড টমেটো ৪ ও ৮ জাতের টমেটো চাষ করেছেন। আমরা আশা করি তারা লাভবান হবেন। গবেষণা বিভাগ উপজেলার টমেটো চাষিদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। তাই আমরা কৃষকের কাছে গিয়ে তাদেরকে উৎসাহ দিচ্ছি। আমরা চাই কৃষকরা বারোমাস ফসল চাষ করুক।
খুলনা অঞ্চলের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হারুনর রশিদ বলেন, যশোর বাঘার পাড়া থেকে এক কৃষকের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে এই সামার টমেটো চাষ কার্যক্রম শুরু করি। তবে এর ব্যপকতা বেড়েছে গত তিন বছরে । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প গোপালগঞ্জের বারির কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের আওতায় আমরা (তিনি এটার উপপ্রকল্প পরিচালক) সেখানে কাজ করছি এবং এ বছর ৫ টি জেলায় ১৬ কেজি টমেটোর বীজ বিতরণ করেছি। আগে স্বল্প পরিসরে চাষ হত। গত তিন বছর ধরে বড় পরিসরে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের জন্য কাজ করছি। তিনি আরও বলেন, গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে টমেটো চাষ হত না, শীতকালে হতো। গ্রীষ্মকালে ভারত থেকে টমেটো আসত। সেটার মধ্যে স্বাদ ছিল না। আমরা নিজেরা এই টমেটো আবিস্কারের ফলে আমরা চাই বিদেশ থেকে কোন টমেটো না আসুক। আমাদের কৃষকরা ভাল দাম পেয়ে লাভবান হোক। একই সাথে আমরা বিষমুক্ত টাটকা সবজি খেতে পারছি। শুধু তাই নয়, টমেটোতে রয়েছে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, সহ অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।