কয়রা : অধিকফলন ও কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন না হওয়ায় বিটি বেগুন চাষে ঝুকে পড়েছেন কয়রার কৃষকরা। আবার এই জাতের বেগুনের উৎপাদন যেমন খরচ অনেক কম তেমনি বাজারে এর দামও ভালো। বাংলাদেশ কৃষিগবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি বিটি জাতের এই বেগুন কৃষি সরেজমিন গবেষণা বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী চাষ করে অনেকেই এর ই মধ্যে লাভবান হয়েছেন। কৃষক ও কৃষি সরেজমিন গবেষণা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বেগুন চাষের সময় ডগা ও ফলছিদ্রকারী পোকার আক্রমনে ৭০-৮০ ভাগ বেগুন মাঠেই নষ্ট যায়। এজন্য প্রতিবছর ১৭-২০ লাখ মেট্রিক টন কীট নাশক ব্যবহার করতে হয়। ফলে বেগুন চাষের খরচ বেড়ে যায় এবং কৃষকরা এ থেকে লাভবান হতে পারেন না। তাছাড়া প্রচুর পরিমানে কীটনাশকের ব্যবহার মানবদেহের জন্য ও ক্ষতিকর। পোকার আক্রমণে সহনীয় হিসেবেই বিটি-১,২,৩, ও ৪ নামে চারটি নতুন উদ্ভাবন করে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। এসব জাতের বেগুনে ডগা ও পোকা আক্রমণ করতে পারে না।ফলে বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদন সম্ভব হয়।কয়রা উপজেলার ৪ নং কয়রা গ্রামের চাষী গোপাল সরদার প্রতিবেদক কে বলেন, বিটি বেগুন পরিবেশবান্ধব। এতে কোন ও ধরনের বালাইনাশক স্প্রে করার প্রয়োজন পড়ে না। সরেজমিন গবেষণা বিভাগের কর্মকর্তার অনুরোধে বিটি বেগুনের চাষ শুরু করি।আগষ্ট মাসে বীজতলা ফেলে সেপ্টেম্বরে চাষ শুরু করি নভেম্বর মাসের ১স সপ্তাহ থেকে বেগুন তোলা শুরু হয়। এখন প্রতি সপ্তাহে ২ বার বেগুন তুলতে পারছি প্রতিবার ১৫০ থেকে ১৮০ কেজি বেগুন তুলতে পারছি। প্রথম দিকে বাজারে বেগুন ৬২ টাকা দরে বিক্রি হলে ও বর্তমানে বিটি বেগুন বাজারে ২০ টাকাবিক্রি হচ্ছে। তাই আগামী বছর আরও বেশি জমিতে এই বেগুনের চাষ করতে চাই।আমার বেগুনের খেত দেখে এলাকার অনেকেই বিটি বেগুন চাষ করবেন বলে আমার কাছে বেগুনের বীজ চেয়েছেন। কৃষক গোপাল সরদার আরও বলেন, বেগুন চাষ করে এত লাভ হবে, কখনো ভাবিনি।এবার ২০ শতক জমিতে বেগুন চাষ করেছি। চাষ করতে আমার ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। আর সার বীজ সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগ থেকে সহযোগিতা পেয়েছি এবংপ্রতিনিয়ত পরামর্শ পাচ্ছি ক্ষেতেবসে। আগামীতে ২ থেকে ৩ বিঘাবিটি বেগুন চাষ করব। সবচেয়েবড়কথা, এই বেগুন বিষমুক্ত।তিনিবলেন, এ পর্যন্ত ২ মাসে ৫০ হাজার টাকার বিটি বেগুন বিক্রি করেছি। আরও ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন কৃষক। একই উপজেলার কৃষক আজিজুল ১৩ শতক জমিতে বিটি বেগুন চাষ করেছেন। তিনি বলেন, বেগুন চাষে মাত্র ১৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। কৃষক আহসান বলেন, আগে বেগুন চাষ করলে কীট নাশক কিনতে গিয়েই অনেক টাকা খরচ হয়ে যেত। তবে আমার পাশের জমিতে কীটনাশক ছাড়াই বিটি বেগুন চাষ করতে দেখেছি । আমি ও আগামীতে এই বেগুন চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সরেজমিনে বেগুন ক্ষেতে এমএলটিসাইট কয়রার বৈজ্ঞানিক সহকারী জাহিদ হাসানের সাথে কথা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, প্রথমঅবস্থায় কৃষকদের বেগুন চাষে আগ্রহী করতে বেগ পেতে হয়েছে। কিন্তু উৎপাদনে সাফল্য দেখে উপজেলার অন্য কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। স্থানীয় কৃষকদের বিটি বেগুনের উপর প্রশিক্ষণ দেয়া দেওয়া হয়েছে। বিগতবছর ৩ জনকে কৃষককে প্রদর্শণী দেওয়া হয় । এ বছর ৬ জন কৃষককে বিটি বেগুন বারি-৪ প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে।কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (খুলনাঅঞ্চল) বিএআরআই সরেজমিন গবেষণাবিবাগ) ড. হারুনররশিদ বলেন, গোপালগঞ্জ জেলার (বিএআরআই) কৃষিগবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প এর আওতায় আমরা খুলনা জেলার সর্ব দক্ষিণে উপজেলা কয়রাতে বারিবিটি বেগুনের প্রদর্শণী দিয়েছি। দক্ষিণঅঞ্চলে আমাদের যে জাত গুলো ছিলসে জাত গুলোতে প্রচুর পরিমানে পোকা লাগত এবং কৃষক অনেক কীট নাশক স্প্রে করত। কিন্তু এখন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) গবেষণাকরে (ব্যাসিলাসট্যুরিনজিনসিস) জাতের বেগুনবীজ উদ্ভাবন করছে। ফলে কোন প্রকার কীট নাশক ছাড়াই বেগুন উৎপাদিত হচ্ছে।বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে আমরা বারিবিটি বেগুন ১, ২, ৩ ও ৪ উদ্ভাবন করা হয়েছে এর ভিতরে বারিবিটি বেগুন ৪ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ অনেক পছন্দ করছে যেহেতু। এই বেগুনটি সবুজ এবং ডিম্বা আকৃতি এই বেগুনে বিশেষ গুন হলো পোকা লাগেনা এবং কৃষককে কীট নাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে নাএবংমানুষ নিরাপদ একটিসবজি খেতে পারছে। নিরাপদ সবজিখাওয়ার পেছনে মানুষের রোগবালাই কম হচ্ছে, স্বস্থ্য ঝুকি কমছে এবংআর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে। ফল ও পোকা প্রতিরোধী জাত হওয়ায় এই বেগুনের চাষ দিনদিন বাড়ছে।এসব কিছু মিলে আরও অনেক কৃষক যদি আরও চাষাবাদ করে তাহলে কৃষক লাভবান হবে।আর আমরা কৃষি গবেষণা বিভাগ আগামী ২ বছর এখন কৃষকদের মাঝেবিটি বেগুন প্রদর্শণী দিতে পারব ইনশাল্লাহ।