বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে যদি মুক্ত না করেন, গণতন্ত্রকে যদি মুক্ত না করেন। তাহলে কোটি কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে।
তিনি বলেন, আপনাদের বাঁচার স্বার্থে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠান। তাকে সুস্থ করে দেশে নিয়ে আসুন। তা না হলে আপনারা পালাবার পথটাও খুঁজে পাবেন না।
রোববার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে যে মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে সেটা একটা সাজানো মামলা। তাকে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে সাজা দিয়েছে। নিন্ম আদালত দিয়েছিল পাঁচ বছর সেখানে হাইকোর্ট থেকে দশ বছর করা হয়েছে। এখানেই বোঝা যায় যে কিভাবে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করছেন। কিভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে হরণ করছেন। কিভাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ব্যবহার করছেন। কিভাবে সাংবাদিক ভাইদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। রাষ্ট্রকে একটা একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। আজকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা বলেছেন, তাকে যদি দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য আমেরিকা অথবা জার্মানির উন্নত চিকিৎসাকেন্দ্রে না নেওয়া হয় তাহলে তার জীবন রক্ষা করা মুশকিল হয়ে যাবে।
মানবসভ্যতার ইতিহাসে শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে বাংলাদেশের শ্রমিকদের কী অবস্থা। শ্রমিকরা দুবেলা দুমুঠো ভাত খেতে পারে না। চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। চালের দাম ৭০টাকা। তেলের দাম তিনগুণ বেড়েছে। লবণ, শাকসবজিসহ প্রত্যেকটা জিনিসের দাম আকাশচুম্বী। করোনাকালে অসংখ্য শ্রমিক চাকুরিচ্যুত হয়েছে। তারা কোনো প্রণোদনা পায়নি। আজকে যারা সরকারে আছেন তারা বড় মানুষদের কথা চিন্তা করেন। যাদের মিল আছে, ফ্যাক্টরি আছে তাদের প্রণোদনা দেন। দেন ভাল কথা। কিন্তু যারা ফ্যাক্টরি চালু রেখেছে, গাড়ির চাকা চালু রেখেছে তাদেরকে কোনো প্রণোদনা দেননি। আড়াই হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন। কাকে দিয়েছেন। আপনার দলের নেতারা ভূয়া নাম লিখে সেই টাকা গিলে ফেলেছেন।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। এত উড়াল সেতু, মেট্রোরেল সবকিছু হচ্ছে। কিন্তু আমার গরীব মানুষ গরীব থেকে যাচ্ছে। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আগে ছিল দুই কোটি এখন হয়েছে ছয় কোটি। আপনারা নিজেরাই জানেন এখন বাজারের অবস্থা কেমন। সেজন্য আমরা পরিবর্তন চাই। দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে হবে সেজন্য বলছি না। এ সরকারকে সরাতে হবে।
আজকে মন্ত্রীরা যে ভাষায় কথা বলছেন কোনো সভ্য সুস্থ মানুষ সে ভাষায় কথা বলতে পারে না দাবি করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব। তাকে সম্মান শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তিনি বিএনপির ভূত ছাড়া আর কিছু দেখেন না। সারাক্ষণ বিএনপি বিএনপি বিএনপির দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকেন। আপনারাতো বলেন বিএনপি নাই। বিএনপি যদি নাই, তাহলে এত স্বপ্ন দেখেন কেন?
তিনি বলেন, আজকে ছেলেরা রাস্তায় নেমেছে। পত্রিকায় দেখলাম সব লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছে। দেখছেনতো সরকারকে লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছে। কেন রাস্তায় নেমেছে, কারণ আপনারা কোনো কথা রাখেন না। এর আগে যখন ছাত্ররা আন্দোলন করেছিল আপনারা বলেছিলেন সবকিছু সঠিকভাবে চালাবেন। কিন্তু সঠিকভাবে চালাতে পারছেন না। এটা আপনাদের ব্যর্থতা। আবার বলেন- দুর্ঘটনা হলো এত লোক কিভাবে আসলো। আসেতো আপনাদের ব্যর্থতার কারণে।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইনের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, বিএনপির সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা আবুল খায়ের খাজা, সালাহ উদ্দিন সরকার, আবুল কালাম আজাদ, মিয়া মিজানুর রহমান, রফিকুল ইসলাম, কাজী আমির খসরু, হারুন অর রশীদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দল সভাপতি কাজী মো. আমির খসরু, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম বাদল, ঢাকা মহানগর উত্তর শ্রমিকদল সভাপতি খন্দকার জুলফিকার মতিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. সুমন ভূঁইয়া প্রমুখ।
এর আগে সকাল থেকে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে শ্রমিক দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মী প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।