এ যেনো এক সত্যিকার আদালতের আবহ। এজলাসে বিচারকের আসন। সামনে একটু নিচুতে পেশকারের ডেস্ক। দু’পাশে কাঠগড়া। এজলাসের সম্মুখভাগে আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের বসার সারি সারি আসন। আদালত কক্ষ আইনজীবী সহকারী এবং অন্যান্যদের উপস্থিতিতে প্রায় পরিপূর্ণ। বাদী এবং বিবাদী পক্ষের আইনজীবীর ব্যস্ততা। হাতে তাদের কাগজপত্রসহ নথি। একটু পরেই কোর্ট বসবে। কাঠগড়ায় হাজির করা হয়েছে প্রধান আসামীসহ তিনজন আসামী। তখন সময় সকাল ১০টা। পেশকার ঘোষণা দিলেন ‘আদালত আসছে-’। ঠিক তখনই এজলাসে উঠলেন গাউনপরিহিত বিচারক। সম্মুখভাবে সবাই দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান প্রদর্শন করলেন। এজলাসের চেয়ারে বসে ভাবগাম্ভীর্যের সাথে সামনে তাকিয়ে সবার উদ্দেশ্যে সালাম জানালেন বিজ্ঞ বিচারক। পেশকার আজকের মামলার বিবরণী নথি বিচারকের সামনে উপস্থাপন করলেন। বিচারকের অনুমতিতে বিচারকার্য শুরু হলো। রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী মামলার বিবরণ তুলে ধরে আদালতের কাছে ঘটনায় সম্পৃক্ত আসামী তিনজনের দণ্ডনীয় অপরাধ আইনের ধারা উল্লেখ করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হিসেবে ফাঁসি দাবী করলেন। পক্ষান্তরে বিবাদী পক্ষের আইনজীবী আত্মপক্ষ সমর্থনে যুক্তি ও তথ্য উপস্থাপন করে আসামীদের নির্দোষ দাবী করে মামলা থেকে খালাস চাইলেন। এভাবেই শুরু হলো ‘সুবর্ণ ভূমি সংস্কার আন্দোলনের নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী গোষ্ঠী কর্তৃক বিচারক হত্যা মামলার মতো একটি চাঞ্চল্যকর মামলার শুনানী। প্রকৃতপক্ষে এটা ছিলো আইন শিক্ষার্থীদের অনুশীলনমূলক মকট্রায়েল। বর্ণিত সবক্ষেত্রেই ছিলেন আইনের স্নাতক/স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ। তবে এখানে বিচারকের আসনে বসে ছিলেন সত্যিকারের একজন বিচারক। তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ খুলনা এর বিজ্ঞ জেলা জজ মোসাম্মাৎ দিলরুবা সুলতানা। তাঁর উপস্থিতিতে এই মকট্রায়েল যেন সত্যিকারের আদালতের আবহ সৃষ্টি হয়।
আজ ১৯ মার্চ ২০২২ খ্রি. তারিখ সকাল ১০টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে আইন ডিসিপ্লিনের উদ্যোগে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় মকট্রায়েল উদ্বোধনী পর্ব এবং অতঃপর একটি মামলার মকট্রায়েল অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা। ফিতা কেটে চারদিনব্যাপী এ মকট্রায়েলের উদ্বোধনের পর তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য বলেন, আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য মকট্রায়েল অত্যন্ত আগ্রহের একটি পর্ব। পেশাগত জীবনের প্রারম্ভিক অনুশীলনের এই জায়গাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেশাগত বাস্তবতার নিরিখে এখান থেকে অনেক কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে। এটা আইন শিক্ষার একটি ডেমনোস্ট্রেশন। তিনি আইনের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আইন শিক্ষায় ক্ষেত্রে নানামুখী জ্ঞান অর্জনের সুযোগ রয়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদের পেশাগত জীবনের সাফল্য কামনা করে মকট্রায়েলের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ ওয়ালিউল হাসানাত। এ সময় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ খুলনা এর বিজ্ঞ জেলা জজ মোসাম্মাৎ দিলরুবা সুলতানা, রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক স্বপন গুহ উপস্থিত ছিলেন। মকট্রায়েল উদ্বোধনী পর্ব পরিচালনা করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক পুণম চক্রবর্তী। এ সময় ডিসিপ্লিনের অন্যান্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী পর্বের পর প্রথম দিনে খুলনার নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলোজি এবং নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির মধ্যে বাদী ও বিবাদী পক্ষ হিসেবে মকট্রায়েল অনুষ্ঠিত হয়। একজন প্রকৃত বিচারকের উপস্থিতিতে মকট্রায়েল পর্বটি উপভোগ করে যা ছিলো তাদের কাছে শিক্ষণীয়। ইন্টার ইউনিভার্সিটি ল ক্লিনিকের উদ্যোগে এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ডিসিপ্লিনের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তরের পিস কনসার্টিয়ামের সহযোগিতায় এই মকট্রায়েল অনুষ্ঠিত হচ্ছে।