কোনভাবেই যেন বন্ধ করা যাচ্ছে না খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ র্যাগিং বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও মিলছে না কাঙ্খিত সুফল। সর্বশেষ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিশ^বিদ্যালয়ের ফার্মেসি ডিসিপ্লিনে র্যাগিং-এর অভিযোগ করেন ওই ডিসিপ্লিনের প্রধান। আর এ বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে র্যাগিং এর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৫ শিক্ষার্থীকে শোকজ করেছে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে এ হয়রানি বন্ধে র্যাগিং-বিরোধী কমিটিতে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) নবাগত শিক্ষার্থীরা যাতে ক্যাম্পাসে কোন রকম শারীরিক ও মানসিক হয়রানির (র্যাগিং) শিকার না হয় সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি র্যাগ বিরোধী কমিটি গঠনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর মোঃ শরীফ হাসান লিমনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটিতে কাজ করতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদেরকে দশ কর্ম দিবসের মধ্যে ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তরে নাম প্রেরণ করতে বলা হয়।
এ বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর মোঃ শরীফ হাসান লিমন বলেন, আমরা যতই বলি না কেন র্যাগিং নাই, সব বিশ^বিদ্যালয়ে র্যাগিং আছে। এতে খুলনা বিশ^বিদ্যালয় ব্যতিক্রম না। এখন এই জিনিসগুলো আমরা নিমূল করতে চাই। আর আমরা যেটা বিশ^াস করি, র্যাগিং একটা সামাজিক ব্যাধি। এটা বিশ^বিদ্যালয়ের সাব-কালচার হিসেবে দেখা হয়। এই জিনিসটা নিমূল করতে গেলে সকলের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব না। আর যেহেতু এটা শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্থীদের সাথে করে। সেহেতু শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসাটা গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য আমরা চিন্তা করেছি আমাদের নেওয়া পদক্ষেপের পাশাপাশি ছাত্ররাও যদি এগিয়ে আসে তাহলে এই কাজটি আরও সফলভাবে সমাধান করা সম্ভব। এ জন্য আমরা এই কমিটির আহ্বান করেছি। আমাদের মাদক বিরোধী কমিটি আছে। একই সাথে বেশ কয়েকবছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং বিরোধী কমিটি গঠনের নির্দেশনা আসে। সে সময় আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে যারা আছেন তাদের নিয়ে এ কমিটি গঠন করেছিলাম। পরবর্তীতে দেখলাম স্টেকহোল্ডার হিসেবে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা প্রয়োজন। আমরা তারই আলোকে এই চিঠি দিয়েছি। সর্বশেষ ২৩ ফেব্রুয়ারি বিশ^বিদ্যালয়ের ফার্মেসি ডিসিপ্লিনে র্যাগিং-এর অভিযোগ করেন ডিসিপ্লিন প্রধান। আর এ বছর বেশ কয়েকটি ডিসিপ্লিনের অভিযোগের পেক্ষিতে ১৫ শিক্ষার্থীকে শোকজ করেছে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীদের ভাবনা: এদিকে এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই বিষয়টি ভালোভাবে নিলেও অনেকে বিষয়টি নিয়ে হাস্যরস করছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি খুলনা ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস নামক একটি ফেসবুক পেজে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকেই এই পোস্টের কমেন্টে বিশ^বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা মন্তব্য করেন। যার বেশিরভাগই কুরুচিপূর্ণ। আবার অনেকে বিষয়টি ভালো উদ্যোগ বলেছেন। তবে শুধু র্যাগ নয় বিশ^বিদ্যালয়ের মাদকসহ বিভিন্ন সমস্যার চিত্র তুলে ধরেন। এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, র্যাগের দিক থেকে অন্যান্য ইউনিভার্সিটির চেয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ভালো আছে।।এখানে অন্তত কোন জুনিয়রের গায়ে হাত তোলা হয়না। বাপ মা তুলে গালি দেয়না। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেটা বন্ধ করা দরকার পারলে সেটা বন্ধ করুন। মাদকাসক্ত বন্ধ করার জন্য কমিটি গঠন করুন। শুধু ছেলেরা নয়, মাদক সেবনে মেয়েরাও ছেলেদের সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। রাতের বেলা মাঠ দিয়ে গাঁজার গন্ধে হাঁটাই কষ্টকর। এছাড়াও ক্যাম্পাসের অনেক জায়গায় অশ্লীলতা চলতেছে। যে ছেলে/মেয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার আগে বিড়ির আশেপাশে থাকতো না, আজ তারা গাঁজা সেবন করে। এর জন্য দায়ী কে? তারা এবং তাদেরকে যে ইনফ্লুয়েন্স করছে তারা যেমন দায়ী তার সমান দায়ী আমি আমাদের প্রশাসনকেও মনে করি। কারন ক্যাম্পাসের ভেতর মাদক সেবন বন্ধ করতে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছেনা। পারলে সেগুলা বন্ধ করুন। কাজের কাজ নাই। প্রতি বছর র্যাগ আর র্যাগ নিয়ে লাফালাফি। অপর দুই শিক্ষার্থী লিখেছেন, এই কমিটি এতদিন অঘোষিত ছিল, এখন থেকে সেটা প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন মেলায় যেন এই কমিটির একটা স্টল বরাদ্দ থাকে দাবী রাখলাম।