আর্থ-সমাজিক ক্ষেত্রে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে যৌথ গবেষণার লক্ষ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এর মধ্যে এক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) রবিবার (৫ মে) বিকাল ৫.৩০ মিনিটে উপাচার্যের কার্যালয়ে স্বাক্ষরিত হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ট্রেজারার প্রফেসর আমিনা পারভীন এই এমওইউতে স্বাক্ষর করেন। পরে স্বাক্ষরিত এমওইউ’র কপি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এর উপস্থিতিতে উভয়পক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি রিসার্চ ফোকাসড ইউনিভার্সিটি হিসেবে উল্লেখ করে গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শিক্ষা ও গবেষণায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি আজ দৃশ্যমান। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডিসিপ্লিন ওবিই কারিকুলা অনুসরণ করে পাঠদান ও পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত কেন্দ্রীয় গবেষণাগার করা হয়েছে। যার আইএসও সার্টিফাইডের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামগুলোর অ্যাক্রেডিটেশন অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ৯২ শতাংশ ফাইলের কাজ ডি-নথি সম্পন্ন হচ্ছে। তিনি খুবির সাথে শাবিপ্রবির চলমান বিভিন্ন কোলাবরেটিভ রিসার্চের কথা উল্লেখ করেন। একই সাথে এই এমওইউ স্বাক্ষরের ফলে শিক্ষা-গবেষণা ও প্রকাশনায় পারস্পরিক সহযোগিতাসহ আর্থ-সমাজিক ক্ষেত্রে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে যৌথ গবেষণার সৃষ্টি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
শাবিপ্রবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিক্ষা ও গবেষণায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক দূর এগিয়েছে। খুবি ও শাবিপ্রবি একে অন্যের শুভাকাক্সক্ষী। খুবির সাথে শাবিপ্রবির কোলাবরেটিভ রিসার্চ রয়েছে। এই এমওইউ স্বাক্ষরের ফলে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে যৌথ শিক্ষা ও গবেষণা কাজের সুযোগ সৃষ্টি হলো। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং ভাইস-চ্যান্সেলরের গৃহীত উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
এ সময় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, স্থাপত্য ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. শেখ সিরাজুল হাকিম, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর মো. শরীফ হাসান লিমন, রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. কাজী মোহাম্মদ দিদারুল ইসলাম, দ্য অফিস অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক প্রফেসর সেহরীশ খান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. লস্কার এরশাদ আলী, শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. এস এম ফিরোজ, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রকিবুল হাসান সিদ্দিকী, স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মো. শেখ মারুফ হোসেন, উপাচার্যের সচিব সঞ্জয় সাহা, শাখা প্রধান (প্রশাসন) দীপক চন্দ্র মন্ডল এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের প্রফেসর ড. মো. জহিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এই এমওইউ স্বাক্ষরের ফলে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া, উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধি, দলিত সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে যৌথ শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হলো। স্বাক্ষরিত এমওইউতে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কর্মীদের মধ্যে প্রকাশনা এবং অন্যান্য উপযুক্ত কার্যক্রমসহ যৌথ গবেষণা, ল্যাবরেটরি, একাডেমিক এবং গবেষণা সুবিধার পাশাপাশি অবকাঠামো প্রদান, একাডেমিক এবং গবেষণা বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনিক সহায়তা, পরামর্শদাতা, পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান, সম্ভাব্য পারস্পরিক একাডেমিক এবং গবেষণা আগ্রহের ক্ষেত্র সনাক্তকরণ, সম্ভাব্য গবেষণার সুযোগ চিহ্নিতকরণ এবং কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ, তথ্যের প্রচার ও কর্মী এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থী ও কর্মীদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিময়, একাডেমিক ও গবেষণা বিষয়ক যৌথ সেমিনার, সিম্পোজিয়া, সম্মেলন, সংক্ষিপ্ত কোর্স ও মিটিং আয়োজন. শিক্ষাদান, শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন ও গবেষণা কার্যক্রমের উন্নয়ন সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়ের বিষয়ও স্বাক্ষরিত এমওইউতে উল্লেখ রয়েছে।
পরে খুবি এবং শাবিপ্রবির ভাইস-চ্যান্সেলর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় কেন্দ্রীয় গবেষণাগারসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শন করেন। এর আগে শাবিপ্রবির ভাইস-চ্যান্সেলরকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান খুবির ভাইস-চ্যান্সেলর। এ সময় তিনি তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম খচিত ক্রেস্ট উপহার দেন।