চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃপরিচালকের সিদ্ধান্তহীনতায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। সিনিয়র চিকিৎসকরা পরিচালকের এমন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সতর্ক করলেও কারও কথাই আমলে নেননি তিনি। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো হাসপাতাল জুড়ে। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন এভাবে চলতে থাকলে হাসপাতালে রোগীদের সেবা করার মত কেউ থাকবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ইতোমধ্যে খুমেক হাসপাতালে ইতোমধ্যে ৬ জন চিকিৎসক, ১৪ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও হাসপাতালের হিসাবরক্ষক, হিসাব বিভাগে একজন কর্মচারীসহ বেশ কয়েকজন কর্মচারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের সংস্পর্শে আসা বেশ কয়েকজন নমুনা দিয়ে ফলাফলের অপেক্ষায়ও রয়েছেন। একের পর এক কর্মচারী আক্রান্ত হলেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা না নিয়ে কর্মচারীদেরকে পানি পরা খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় কেবিনের চারজন সিনিয়র স্টাফ নার্স ইতোমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এখানে কর্মরতরা বলেছেন করোনা সন্দেহভাজন কোন রোগী হাসপাতালে আসলে তাকে আগে ফ্লু কর্ণারে পাঠিয়ে নমুনা পরীক্ষা করানোর নিয়ম রয়েছে। পজেটিভ হলে তাকে করোনা হাসপাতালে, নেগেটিভ হলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে বা কেবিনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু পরিচালক নিজেই পরীক্ষা ছাড়াই বিভিন্ন রোগীকে কেবিন বরাদ্দ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব রোগীকে সেবা দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় কেবিন ইনচার্জ সাদিয়া আক্তারসহ ইতোমধ্যে চারজন সিনিয়র স্টাফ নার্স করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা উপসর্গ রয়েছে আরও কয়েকজন সিনিয়র স্টাফ নার্সের।
জানা যায়, হাসপাতালে পরিচালকের সুপারিশে পরীক্ষা না করে এক রোগী ২২ নম্বর কেবিনে ভর্তি হন এবং চিকিৎসা সেবা নেন। তবে তার করোনা পজেটিভ হয়েছ। ৭ নম্বর কেবিনেও একই ঘটনা ঘটে। ২৮ নম্বর কেবিনেও পরীক্ষা না করে চিকিৎসা নেয়া এক মেডিকেল ইন্টার্ণ চিকিৎসকেরও করোনা পজেটিভ হয়েছে। এখনও বিনা পরীক্ষায় করোনা উপসর্গ নিয়ে ৯ ,১০ ও ২৫ ও ৫ নম্বর কেবিনে রোগী রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে আগের তুলনায় নিরাপত্তা সামগ্রী কমিয়ে দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। এখানে পরিপূর্ণ পিপিই নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেয়া হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে পরিচালকের সাথে নার্সরা কথা বলতে গেলে কার্যকর কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি সুরা ফাতিহা পড়ে বোতলে ফু দিয়ে পানি খেতে বলেন এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নার্সিং কর্মকর্তারা। এ অবস্থার মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সংশ্লিষ্ট কর্মরতরা।
এদিকে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সিনিয়র স্টাফ নার্স রমা রাণী বিশ্বাস গত ২১ জুন পজেটিভ হয়। কিন্তু নমুনা দিয়ে এই সিনিয়র স্টাফ নার্স আইসোলেশনে যেতে চাইলে তাকে যেতে দেয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেও রোগীদের সেবা দিয়ে গেছেন এই সিনিয়র স্টাফ নার্স । ফলে তার আক্রান্ত হওয়ার পর পুরো ওয়ার্ডে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে। গতকাল সোমবার এই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক রোগীর মায়ের করোনা উপসর্গ দেখা দিলে তিনি নমুনা দিয়েছেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় পুরো বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে এখানকার অর্ধশতাধিক রোগী। আর এ নিয়ে বিভাগীয় প্রধান ডাঃ তরিকুল ইসলাম বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিলেও তার কথায় কোন পদক্ষেপ নেননি হাসপাতালের পরিচালক। একই ঘটনা হাসপাতালের হিসাব রক্ষক গোলাম কিবরিয়ার বেলায়ও, করোনা নমুনা দেয়ার পরও তিনি ছুটি পাননি বলে কাজ করে গেছেন পরিচালকের নির্দেশে। এরপর তার কক্ষে তার সহকারী রাজুও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন গতকাল সোমবার। রাজুও নমুনা দেয়ার পর আইসোলেশনে না থেকে অফিস ব্লকে ঘুরে বেরিয়েছে। এখন পুরো অফিস ব্লক-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে।
আনীত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মুন্সি রেজা সেকেন্দার ( ০১৭১৬-২০০৭০৮)-এর ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে রাত ১০টা ১৫ মিনিটে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে অপর প্রান্ত থেকে রিসিভ করা হয়নি।
এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ রাশিদা সুলতানা বলেন এসব ঘটনা ঘটে থাকলে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ব্যাপারে তদন্তের পাশাপাশি তার (হাসপাতাল পরিচালক) সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।