সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা মঙ্গলবার , ৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
খুর কাঁচি হাতে ফুটপথেই ৫১ বছর | চ্যানেল খুলনা

খুর কাঁচি হাতে ফুটপথেই ৫১ বছর

{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":[],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{"square_fit":1},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":true,"containsFTESticker":false}

কয়রা প্রতিনিধি: চুল ও দাড়ি কেটে মানুষকে আকর্ষনীয় সুন্দর করাই যাদের পেশা তারাই হলেন নরসুন্দর। তবে তাদেরকে নরসুন্দর হিসেবে সবাই না চিনলেও নাপিত হিসেবে কিন্তু চিনে। মানুষ স্বভাবগত সুন্দরের পুজারী আর মানুষের চুল দাড়িই তার সৌন্দর্য বহন করে এমনকি তার ব্যক্তিত্বও ফুটিয়ে তোলে।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতে গিয়া আশ্রয় নিছিলাম। যুদ্ধের পর দেশে আইসা পূর্বপুরষদের পেশা হিসেবে নরসুন্দরের কাজ শুরু করি। শুরুতেই ৩০(ত্রিশ) পয়সা চুল কাটা, ২০ পয়সায় সেভিংয়ের কাজ করতাম। বর্তমানে ৪০ টাকায় চুল কাটছি ও ২০ টাকায় সেভিং করছি। এতে করে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করতে পারি। দীর্ঘ ৫১ বছর ধরে এভাবে নরসুন্দরের কাজ করে সংসার চালানোর কথা জানাচ্ছিলেন কয়রা উপজেলার বাগালী গ্রামের নরসুন্দর পরমানিক প্রভাশ চন্দ্র শীল।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে সোমবার উপজেলার হোগলা বাজারে চান্নিঘরের পাশে খোলা আকাশের নিচে, চারদিকে ফাঁকা, নেই দামি কোনো চেয়ার-টেবিল, নেই কোন আয়না আধুনিক সরঞ্জাম। হাতে আছে শুধু খুর আর কাঁচি। আর এভাবেই ৫১ বছর ধরে করছেন নরসুন্দরের কাজ। অনেক আগেই পরিচিতি লাভ করেছেন গরিবের নরসুন্দর(নাপিত) হিসেবে। আধুনিক সভ্যতার ক্রমবির্তনের ফলে আজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গতিধারায় এসছে পরিবর্তন, লেগেছে আধুনিতার ছোঁয়া। আধুনিক সভ্যতায় গড়ে উঠেছে আধুনিক মানের সেলুন। কদর বেশি হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকছেন সেসব সেলুনের দিকে।

তবে প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে প্রভাস শীল বলেন, এখনকার সেলুনে নাপিতরা যে চুল কাটে তা সমাজে চলে না। যুবকেরা চুল কাটে তাদের বিলাসিতা। এখন ছেলেরা যে চুল কাটে তা অসামাজিক যা সমাজে উঠা যায় না। দেখি মাথার দুই পাশ এখানে ওখানে দিয়ে এড়ে দাগান দাগাই দেয় আর চুল কাটে তা ঘ্যাচ কাটা। এটা কোন ভদ্রলোকের কাজ না। এরকম তো দাগাতাম আগে হাটে যে (পকেটমার) চুরি করত তাকে ধরে নিয়ে আসত, আর বলত শাস্তি স্বরুপ এর মাথার চুল কেটে দাগায়ে দিতে যে রকমটা যুবকেরা এখন ফ্যাশন বলে কাটে।

সোমবার দুপুরে হোগলা হাটে চান্নির পাশে দাঁড়িয়েই কথা হচ্ছিল প্রভাশ শীলের সাথে। বয়স ৬৬ ছুয়েছে, শরিরে আগের মত তাগত নেই। কিন্তু তাঁর একদিনও জিরানোর উপায় নেই। পেশায় তিনি নরসুন্দর। আথিক সংকটের কারনে পড়াশোনা হয়নি। ১০ বছর বয়স থেকেই দারিদ্রতার জন্য বেছে নিয়েছিলেন নরসুন্দরের কাজ। ভারত থেকে দেশে ফিরে এসে পরিবারের
অস্বচ্ছলতার কারনে কিশোর বয়সেই নেমে পড়েন বাস্তবতার জগতে।

পাইকগাছায় একটা সেলুনের দোকানে পেটে ভাতে কাজ করতেন। তিনি বলেন, চেয়ারে হাতে পাইনি তখন ইটের উপর ভর দিয়ে চুল কাটতাম। ২ বছর কাজ শেখা শেষে বাড়ী চলে আসলাম। এরপরেই নিজে নাপিতের কাজ করার উদ্যেশ্যে সাতক্ষীরার খলিশখালি থেকে ১৫ টাকা দিয়ে কেউচি, ১০ টাকা দিয়ে লোহার খুর ২ টাকা দিয়ে ব্রাশ আটানা দিয়ে হাবিব সাবান, দেড় টাকা দিয়ে আয়না, ১ টাকার ৪ খানা বেøড, ফিটকিরির সাথে পানি রাখার জন্য একটা মাটির ঘট কিনে আনি।

১৯৭৫ সালে প্রথমে এই হোগলার হাটে নাপিতের কাজ শুরু করি। তখন তো বসার জন্য চেয়ার ছিল না তাই প্রতি হাটে মাটি দিয়ে পুতুলের মত ডিবি তৈরি করে তার উপর একটা কাপড় বিছিয়ে দিতাম। সেই মাটির ডিবির উপর বসিয়ে চুল কাটতাম। সে সময় সাপ্তাহিক বাজার গুলোতে যেতাম নিজের নরসুন্দরের কাজ করতে। বাড়ি থেকে আজানের আগে বের হতাম। পরিস্কার হওয়ার সাথে সাথে চুল কাটা শুরু করতাম তখন দুপুরের খাওয়ার সময় পেতাম না। কাজের চাপে কোনো কোনো দিন রাতে বাড়ি গিয়েই খাবার খেতে হতো। সন্ধ্যা ঘোর হবে তার পরেও হাতের আন্দাজে অন্ধকারে ৩ থেকে ৪ জনের চুল কেটে তারপর কাজ ছাড়তে হত। তারপরও মানুষ ছাড়ত না। তবে সেই সময়ে আয় রোজগারও ভাল হতো। পরিবার নিয়ে সুখে ছিলেন। কিন্তু বর্তমান ভাটা পড়েছে তার ব্যবসায়। ফলে অনেক সময় পরিবারের খরচ মেটাতে পড়তে হয় বিপাকে।

সংসারের কথা বলতে বলতে জীবনের নানা হিসাব-নিকাশের আলাপ তোলেন প্রভাশ পরমানিক। তাঁদের জীবনটাই তো অঙ্কনির্ভর। লবন-ভাত জোগানের হিসাব কসতে কসতে জীবন পার করেন, তবু পরের দিন পাতে কী পড়বে, তা নিয়ে হিসাব মেলানো কঠিন হয়। অনেক সময় নিজেকে সঁপে দেন ভাগ্যের হাতে। ভীষণ হতাশা নিয়ে জানান, খাওয়াই চলে না, আবার জায়গা বা দোকান নেব কি করে? তারপর না চললেও তো চালাইতে হয়। জীবন মানে তো কষ্ট এখন আর কোনো ভাল লাগা, খারাপ লাগা নেই। এ জনমে আর ভাল থাকা হবে না। গরিব মানুষির জীবন বোঝেন তো। অর্থ সম্পদ , টাকা পয়সা না থাকলে মানষির মধ্যে গণ্য হয় না। গরিব মানুষির জীবন আর তিতপুঁটি সমান। যা সৃষ্টিকর্তা করবে, তা-ই হবে। কপালের ওপর তো কারও হাত নেই। একই সাথে কাজ করে নেমাই পরমানিক বলেন, এখন হাটে আর আগের মত সারাদিন কাজ হয় না। বিশেষ করে বিকেলের পর আর কাজ করা যায় না। আয় কমে গেছে। পরিচিত মানুষেরাই এখন বেশি আসেন। তারপরও কাষ্টমার কম হয় আধুনিক যুগ সবখানেই বিলাসিকা। সবাই এখন ভাল সেলুনে যায় মানুষ এখন খোলা জায়গায় চুল কাটতে চায় না।

বাগালী ইউপি চেয়ারম্যান আঃ সামাদ বলেন, কালের বিবর্তনে পিঁড়িতে বসে চুল কাটার দৃশ্য তেমন একটা চোখে পড়ে না, তবে একটা সময় ছিল বাবার হাত ধরে এই হোগলার হাটে এসে চুল কাটার আনন্দ ছিল আলাদা। আগে ছিল স্কয়ার ছাট, বপ ছাট ও গোল ফ্যাশন, বাবরী ছাট আর এখন ইউ ছাট, ভি ছাট সহ অনেক রকমের অসামাজিক ছাট। এসব চুলের ছাট থেকে
বেরিয়ে আসতে হলে অভিভাবকদের তার সন্তানের প্রতি সচেতন হবে।

এ সকল নাপতিদের কাছে চুল কাটতে আসা আনছার মোড়ল জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এখানে চুল কাটাই। যদিও বর্তমানে অনেক আধুনিক সেলুন আছে কিন্তু ওখানে চুল কাটা আমাদের সাধ ও সাধ্যের বাইরে, তাই সাশ্রয়ী এই নাপিতের কাছেই চুল কাটতে আসি।

https://channelkhulna.tv/

খুলনা আরও সংবাদ

মেসির বিশাল ছবি এঁকে প্রশংসায় ভাসছেন বিএল কলেজের নয়ন মন্ডল

ডুমুরিয়ায় ভেটেরিনারি সার্জন যোগদান করায় ‌ফুলের শুভেচ্ছা

খুলনায় যুবদল নেতা‌কে ছুরিকাঘাতে হত্যা, আটক ২

খুলনা ডিসি অফিসের সামনে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেটে রিসিভার নিয়োগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

খুর কাঁচি হাতে ফুটপথেই ৫১ বছর

নিরাপদ খুলনা গড়ার প্রত্যয়ে কেএমপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।