ফকির শহিদুল ইসলামঃ গত ২৬ মার্চ সরকার কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সাধারন ছুটি ঘোষনা ও সামাজিক দুরত্ব বজায় কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে সচেতনামূলক ব্যাপক প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছে । কিন্ত খাদ্য সংকটের কারনে আইন শৃংখলা বাহিনী দিনরাত পরিশ্রম করে করোনা মোকাবেলায় সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার জনসচেতনতা প্রচারে কর্ণপাত করছে না খুলনায় আটকেপড়া পাকিস্থানি ক্যাম্পের বাসিন্দারা । স্বল্প জায়গায় অধিক জনবসতির কারনেই আটকেপড়া পাকিস্থানি ক্যাম্পে বেড়েছে করোনা প্রার্দুভাব বিস্তারের ঝুঁকি । চরম ঘনবসতিপূর্ন ক্যাম্পে অধিকাংশই দৈনিক ভিক্তিক দিন মজুর ও নিন্ম আয়ের মানুষের বসবাস । ফলে পাকিস্থানি ক্যাম্পে একদিকে চলছে খাদ্য সংকট অন্যদিকে সামাজিক ঘনত্বে সৃষ্টি হয়েছে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি ।
সুত্রমতে, সম্প্রতি সরকার সারাদেশকে করোনা ভাইরাসের ঝুকিপুর্ণ হিসেবে ঘোষনা করে । জরুরী বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারী বেসরকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান,ক্ষুদ্র শিল্প, কলকারখানা,দোকানপাট সড়কপথ,নৌপথ,সবই বন্ধ হয়। এর ফলে খুলনা শিল্পাঞ্চলের আটকেপড়া পাকিস্থানি ক্যাম্পের প্রায় পাঁচ হাজার নারী পুরুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে । আর কাজ কর্ম করতে না পাড়ায় তাদের ক্যাম্পগুলোতে চলছে চরম খাদ্য সংকট । সামাজিক দুরত্বের সব চেয়ে বেশি ঝুকিতে থাকা এ ক্যাম্পগুলোতে প্রতিদিন ক্ষুর্দার্ত মানুষের তালিকা দির্ঘ হচ্ছে । কেসিসি,জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান নগরীতে ত্রান কার্যক্রম থাকা সত্বেও ত্রান পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে কর্মহীন খুলনা মহানগরীর সাতটি ক্যাম্পের বাসিন্দারা। এসব ক্যাম্পে অল্প জায়গায় অধিক লোকের বসবাসে একদিকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আতংক অন্যদিকে পর্যাপ্ত খাদ্য সংকটে অনাহারে অর্ধাহারে দিন পার করছে এসব ক্যাম্পের পাঁচ হাজার পরিবার । ক্যাম্পে বসবাসকারীরা খেয়ে না খেয়ে বহু কষ্টে দিন কাটাচ্ছে ।সরকারী বেসরকারী ত্রাণ তৎপরতার এক মাস হতে চললেও ক্যাম্পে বসবাসকারী ৮৫ ভাগ পরিবারের কাছেই এখনো কিছু পৌঁছায়নি খাদ্য সহায়তা ও স্বাস্থ সুরক্ষা মাক্স,স্যানিটাইজারসহ অন্যান্ন সামগ্রী। ক্যাম্প সংশ্লিষ্ঠ স্থানীয় কাউন্সিলরদের চেনামূখওলা কিছু পরিবার খাদ্য সহায়তা পেয়েছে তবে তা চাহিদার চেয়ে অপ্রতুল । খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আটকেপড়া পাকিস্থানি ক্যাম্পের জনগোষ্ঠী এখনও কোনো খাদ্য সহায়তা ও স্বাস্থ সুরক্ষার সহায়তা পায়নি।
আটকে পড়া পাকিস্তানিদের’ সংগঠন স্ট্যান্ডার্ড পাকিস্তানি জেনারেল রিপাট্রিয়েশন কমিটির (এসপিজিআরসি) খুলনা অংশের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবীর বলেন, আটকেপড়া পাকিস্থানি ক্যাম্পগুলোতে খাদ্য সঙ্কট দিনকে দিন বেড়েই চলছে । এ অবস্থায় আমরা এসপিজিআরসি নেতৃবৃন্দরা গত দুদিন আগে খুলনা জেলা প্রশাসক মহদয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি এবং ক্যাম্পের জনগোষ্ঠী খাদ্যসহ অন্যান্ন সঙ্কটের কথা অবহিত করেছি।
তিনি বলেন, ক্যাম্পের জনগোষ্ঠী জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা খাদ্য সহায়তা দিচ্ছেন বলে ব্যাপক কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এর বাস্তবতা ভিন্ন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ক্যাম্পের কিছু মুখচেনা লোকদের সহায়তা করলেও অধিকাংশ বাসিন্দারা কোনো খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে না। তারা যেভাবে দিচ্ছেন তাতে বিহারী ক্যাম্পের শতকরা ১৫ ভাগ পরিবার খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন কিন্ত বাকি ৮৫ ভাগ বাসিন্দাদের ভাগ্যে কিছুই জোটেনি।
তিনি আরো বলেন, খুলনা মহানগরীর খালিশপুরে ৫টি ও গিলাতলায় ১টি এবং মহানগরীর কোল ঘেষা রূপসা উপজেলার রহিমনগরে ১টি ক্যাম্প রয়েছে। এ ৭টি ক্যাম্পে প্রায় ৩ হাজার বিহারী পরিবার বসবাস করছেন। আমাদের খবর কেউ নেয় না। সংগঠনেরও তেমন তহবিল নেই। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া পরিবারগুলো না খেয়ে মারা পড়বে। গিলাতলা বিহারি ক্যাম্পের মো. শাহিন বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের মতো এখনও আমরা বিহারিরা অবহেলিত। আমাদের খবর কেউ নেয় না। করোনার প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এখানকার নিম্ন আয়ের মানুষরা। তারা খুবই সঙ্কটের মধ্যে রয়েছেন। ক্যাম্পের অপর বাসিন্দা রাবেয়া বেগম বলেন, আমরা খানজাহান আলী থানা এলাকার বাসিন্দা। এখানে সবাই মানবেতন জীবনযাপন করছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় থাকা বিহারী ক্যাম্পের সঙ্কটপূর্ণ পরিবারের তালিকা করে ২-৩ দিনের মধ্যে এক হাজার বিহারী পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে।
এতোদিনেও বিহারী ক্যাম্পে কোনো সহায়তা পৌঁছায়নি, তাদের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ক্যাম্পের বিহারীদের তালিকা করে পর্যায়ক্রমে খাদ্য সহায়তা প্রদান করার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিদের বলে দেয়া হয়েছে। কেসিসি এলাকায় যারা আছেন তাদের বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদক্ষেপ নিবেন এবং নিয়মিত মনিটরিং করবেন।
তিনি আরো বলেন, সরকারিভাবে বরাদ্দ আসা খাদ্য সহায়তা জনপ্রতিনিধিদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তারা তালিকা করে পর্যায়ক্রমে এ সব সহায়তা প্রদান করবেন। খাদ্য সামগ্রী প্রাপ্তি সাপেক্ষে জনপ্রতিনিধিরা পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিতরণ করবেন।