আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর আওতাধীন দরিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মহিলাদের ভিজিডি কার্ড নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হয়েছে খুলনা জেলার কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলার সংশ্লিষ্ট দপ্তর। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পরিপত্র বহির্ভূত সুবিধাভোগীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা, সমন্বয়হীনতা ও দেরিতে তালিকা পাঠানোয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি বলে অভিযোগ উপজেলা ভিজিডি কমিটির। এছাড়া সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সময় চেয়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে বর্ধিত সময় দেয়া হলেও অজানা কারণে সেই সময়ের মধ্যেও সকল কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন উপজেলা কমিটি। তাছাড়া পরিপত্র অনুযায়ী তালিকা তৈরি না হওয়াসহ নাম অন্তর্ভুক্তিতে অর্থ লেনদেনের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
পরিপত্র ও জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ওয়ার্ড কমিটির এনজিও প্রতিনিধির সহযোগীতা নিয়ে ভিজিডি সুবিধা পাওয়ার জন্য গেল বছরের ২০ অক্টোবরের মধ্যে অনলাইনে প্রাথমিক আবেদন করার কথা থাকলেও সেটা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্যকে সভাপতি করে এনজিও প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সদস্যকে নিয়ে ৩ সদস্যের কমিটিকে ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রাথমিক তালিকা প্রণয়নের দায়িত্বের কথা থাকলেও কোন কোন ওয়ার্ডের নির্বাচিত ইউপি সদস্যদের সম্পৃক্ত না করে চেয়ারম্যানদের মনগড়া কমিটি করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সদস্য ও মহিলা সদস্যদের পাত্তা না দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানদের নিজস্ব কর্মী-সমর্থকদের মাধ্যমে অনেক ওয়ার্ডের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে বলে একাধিক ইউপি সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়। বিগত সময়ের ভিজিডি কার্ডধারীদের পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করাসহ পরিপত্র বহির্ভুত সুবিধাভোগীদের যুক্ত করে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তালিকা পাঠানোর ফলে যাচাই বাছাইয়ে উপজেলা কমিটিকে হিমসিম খেতে হয়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে উপজেলা কমিটির অনুমোদিত এবং স্বাক্ষরিত চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ভিজিডি তালিকা ইউনিয়ন পরিষদে পাঠানোর তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর। এছাড়া চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ভিজিডি তালিকা ভিজিডি ডাটা বেইজ এ অন্তর্ভুক্ত করার কথা ছিল গেল বছরের ১ থেকে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে। অনুমোদিত চূড়ান্ত তালিকা ইউনিয়ন পরিষদে ৬ ডিসেম্বর টাঙ্গানোর কথা থাকলেও অদ্যবধি দেখা মেলেনি। পরিপত্র অনুযায়ী গেল বছরের ১০ থেকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে সুবিধাভোগী নারীদের কাছে কার্ড হস্তান্তর করার কথা থাকলেও এখনও সম্ভব হয়নি। তালিকা চূড়ান্তে জনপ্রতিনিধিদের থেকে যথাসময়ে তালিকা না পাওয়া ও পছন্দের ব্যক্তি নিয়ে কোটা জটিলতা দেখা দেওয়ায় নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে সার্ভারে আপলোড করতে ব্যর্থ হয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদনের মাধ্যমে বর্ধিত তারিখ নেয়া হলেও সেই তারিখের মধ্যেও সকল কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। ফলে জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এছাড়া পরিপত্র অনুযায়ী প্রকৃত নারীরা সুবিধা পাচ্ছে কিনা এটা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে বলে একাধিক ইউপি সদস্য ও সচেতন মহল জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে কয়রা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও উপজেলা ভিজিডি কমিটির সদস্য সচিব রেশমা আক্তার বলেন, দপ্তর থেকে বর্ধিত সময়ের মধ্যে সকল সুবিধাভোগীদের তথ্য আপলোডের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে চূড়ান্ত তালিকায় এখনও স্বাক্ষর বাকী রয়েছে। আর কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পরিপত্র অনুযায়ী সুবিধাভোগীর তালিকা না আসা, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিগত সময়ের সুবিধাভোগীদের নাম পুনরায় যুক্ত করা, বিদ্যুৎ না থাকা ও তিনি ছুটিতে থাকার কারণে এই সমস্যা হয়েছে বলে তিনি জানান।
পাইকগাছা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও উপজেলা ভিজিডি কমিটির সদস্য সচিব মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বর্ধিত সময়ের সর্বশেষ তারিখ ছিল ৩১ জানুয়ারি। সামান্য কয়েকজনকে নিয়ে এখনও জটিলতা রয়েছে। সেটা ১/২ দিনের মধ্যে আপলোড করা হবে। লস্কর ইউনিয়ন নিয়ে তাকে বেশি বেগ পেতে হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা তালিকা জমা দিতে দেরি করায় আমাদের এ সমস্যা হয়েছে।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তালিকায় বিগত সময়ের সুবিধাভোগীদের পুনরায় যুক্ত করায় যাচাই বাছাই করতে দেরি হয়েছে।
জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নার্গিস ফাতেমা জামিন বলেন, তালিকাতে ডুপলিকেট নাম আসায় যাচাই-বাছাইয়ে দেরি হয়েছে বলে শুনেছি। এজন্য যথাযথ যাচাই-বাছাই করে কাজ করতে ওই দুই উপজেলায় বর্ধিত সময় দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, সরকার ভিজিডি কর্মসূচীর আওতায় দরিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মহিলাদের খাদ্য নিরাপত্তাসহ প্রশিক্ষণ প্রদান ও আয়বর্ধক কর্মসূচীতে জড়িত করেন ভিজিডি কার্ডধারীদেরকে। এই প্রকল্পের সুবিধাসমুহ: (ক) দুই বছর ধরে খাদ্য ও আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়, (খ) আয় বর্ধক সচেতনতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, (গ) প্রতি মাসে সঞ্চয় জমা রাখা হয় যা ভিজিডি চক্র শেষে ফেরত দেয়া হয় এবং (ঘ) ভিজিডি চক্র শেষে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মহিলাদের ঋণ সুবিধা প্রদান করা। যাতে তারা চক্র শেষে আত্মকর্মসংস্খান তৈরি করে নিজেরা স্বাবলম্বী হতে পারেন।