সীমান্ত সোলায়মানঃখুলনার জিআরপি থানার ওসি ওসমান গনি পাঠানসহ ৫ জন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক নারী (২১) ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন। আদালতের নির্দেশে গতকাল রবিবার রাতে তার ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলেও সময় স্বল্পতার কারণে তা হয়নি। আজ সোমবার সকালে তাকে আবারও হাসপাতালে নেয়া হবে জানা গেছে।
ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ওসি ওসমান গনি ওই পরিবারকে মোটা অংকের টাকা প্রদান করার প্রস্তাব দিেেচ্ছন বলে তারা দাবি করছেন।
ওই নারীর দুলাভাই শাহাবুদ্দিন মাতুব্বর জানান, গত ২ আগস্ট তার স্ত্রীর ছোট বোন (২১) যশোর থেকে ট্রেনে খুলনায় আসেন। এ সময় রাত সাড়ে ৭টার দিকে রেলস্টেশনে কর্তব্যরত জিআরপি পুলিশের সদস্যরা তাকে সন্দেহমূলকভাবে ধরে নিয়ে যায়। পরে গভীর রাতে জিআরপি পুলিশের ওসি ওসমান গনি পাঠান তাকে ধর্ষণ করে। এরপর আরও ৪ জন পুলিশ কর্তকর্তা (সদস্য) পালাক্রমে ধর্ষণে মেতে ওঠে। পরদিন শনিবার ওই নারীকে ৫ বোতল ফেন্সিডিলসহ মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতে বিচারকের সামনে নেয়ার পর ওই নারী জিআরপি থানায় তাকে গণধর্ষনের চিত্র তুলে ধরেন। এরপর আদালতের বিচারক জুডিসিয়ার ম্যাজিষ্ট্রেট ওই নারীর ডাক্তারী পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন।
এদিকে ওসি ওসমান গনি এ ঘটনা সত্য নয় বলে দাবি করেছেন।
উল্লখেঃ এর আগে গত ২২,মে ২০১৯ তারখি যশোর রেলস্টেশনে মহানন্দা এক্সপ্রেস ট্রেনে অভিযান চালিয়ে জিআরপি খুলনা থানার কনস্টেবল মুস্তাকিনকে ৫৪ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে র্যাব । ৫৪ বোতল ফেনসিডিল মুস্তাকিন রেলওয়ের ৫৪৮৮ নম্বর ইঞ্জিন বগিতে করে আনার সময় র্যাবের হাতে আটক হন । তৎকালিন র্যাব খুলনার উপ-অধিনায়ক মেজর আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, মাদক ব্যবসার মতো ভয়াবহ তৎপরতার সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জড়িত হয়ে পড়াটা অত্যন্ত আশঙ্কার। ফেনসিডিলসহ মুস্তাকিনকে আটক করেছি।
জিআরপি খুলনা থানার কনস্টেবল মুস্তাকিনের কাছে রক্ষিত একটি ব্যাগের মধ্যে ৫৪ বোতল ফেনসিডিল পাওয়া যায়। এ ঘটনায় রেল পুলিশ কনস্টেবলকে আটক করেছে র্যাব। আটককৃত জিআরপি খুলনা থানার কনস্টেবল মুস্তাকিন বিভিন্ন ইঞ্জিন বগি ব্যাবহার করে ফেনসিডিল বহন করে তা যশোর ও খুলনায় সরবরাহ করছে এমন তথ্য পেয়ে র্যাব তাকে আটক করে । র্যাব খুলনার উপ-অধিনায়ক মেজর আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, মাদক ব্যবসার মতো ভয়াবহ তৎপরতার সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জড়িত হয়ে পড়াটা অত্যন্ত আশঙ্কার। ফেনসিডিলসহ মুস্তাকিনকে আটক করেছি। বিষয়টি যেহেতু জিআরপি পুলিশের, তাই তাদের জিম্মায় মুস্তাকিনকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আমরা আশা করছি। তবে রেলওয়ে পুলিশ আজও মুস্তাকিনের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমুলক ব্যাবস্থা নেয়নি ।
শুধু মুস্তাকিনই নই ২০১৭ সালে তৎকালিন খুলনা জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে খুলনা সিএমএম আদালত পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। ওসি গত আগস্ট মাসে খুলনা রেলস্টেশনে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমে কর্মরত সিদ্দিকুর রহমান নামের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন। আবার তাকে আইন বহির্ভূতভাবে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়ায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর আদালত এ নির্দেশ দেন । খুলনা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত সূত্র জানান, গত ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট জিআরপি থানার ওসি মনিরুল ইসলাম সিদ্দিকুরকে আটক করে খুলনা থানায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (১) ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলা রেকর্ড করার পর থানায় বসেই ওসি মনিরুল অভিযুক্তের কাছ থেকে আদালতে যথাসময়ে হাজির হবার লিখিত মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেন। সিদ্দিকুর গত ১০ সেপ্টেম্বর সিএমএম আদালতে হাজির হলে বিচারক তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। এরপর আদালত ২০ সেপ্টেম্বর জিআরপির ওসি নিজের ক্ষমতাবলে অভিযুক্তকে কেন ছেড়ে দিয়েছিলেন তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। ওসি মনিরুল ২৮ সেপ্টেম্বর আদালতে জবাব দাখিল করেন। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় অতিরিক্ত সিএমএম সুমি আহমেদ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশের কপি আইজিপি, অতিরিক্ত আইজি (রেলওয়ে পুলিশ) ও সৈয়দপুর রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপারকে সুপারিশ করে । কিন্ত সেই সুপারিশ শুধু সুপারিশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে বাস্তবায়ন করা হয়না ।
গতবছরের ১৮ অক্টোবর রাতে খুলনা রেল স্টেশনে সরকারী তেল চুরির স্থানে র্যাব-৬ অভিযান চালায় । অভিযানে সময় দুই তেল পাচারকারীকে র্যাব আটক করে । পরদিন ১৯ অক্টোবর রাতে র্যাবের পক্ষ থেকে পুলিশ পরিদর্শক মো. আনিছুর রহমান বাদী হয়ে খুলনা জিআরপি থানায় বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৩৭৯/৪১১/১০৯ ধারায় মামলা (নং ২) করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয় র্যাবের
অভিযানের সময় চোর চক্রের অন্য সদস্যরা পালিয়ে যায়। তবে চক্রের সম্পর্কে গুরত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে গ্রেফতারকৃত আসামীরা। তারা রেলের মবিল ও ডিজেল চুরির সাথে সংশ্লিষ্ট পলাতক খুলনা রেলষ্টেশনের নিরাপত্তাকর্মী মাহমুদ ওরফে ট্যারা মাহমুদ, মোঃ শরীফুল, মোঃ মহিউদ্দিন, মোঃ আশরাফ আলী,মোঃ জাহাঙ্গীর হাওলাদার এর নাম ঠিকানা প্রকাশ করে এবং পলাতক আসামীরা রেলষ্টেশনের সরকারী কর্মচারী বলে জানায়। মামলার এজাহারে উল্লেখ, রেলষ্টেশনের ষ্টেশন মাষ্টার ও এ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (ফোরম্যান)’দের সহায়তায় এলাকায় বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে তেল চুরি হয়ে আসছে।
পলাতক আসামীদের সহায়তায় ধৃত আসামীরা দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে রেলওয়ের সরকারী ডিজেল ও মবিল চুরি করে পাচার করছে। আর্থিকভাবে লাভবান হতেই আসামীরা একেঅপরের সহায়তায় বেআইনি পন্থায় এই অবৈধ কাজে লিপ্ত রয়েছে। যা বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৩৭৯/৪১১/১০৯ ধারা অপরাধ। আরও জানা যায়, ক্ষমতাসীন দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে থাকায় জাহাঙ্গীর ও মাহামুদ চক্রটিকে গ্রেফতার করতে পারছে না রেলওয়ের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় জিআরপি থানা, নৌ পুলিশ, রেলের নিরাপত্তা বাহিনী। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে রাতের আধাঁরে তারা রেলওয়ের তেল-মবিল এবং মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার গ্রেফতার না করায় প্রকাশ্যে ষ্টেশন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকৃত দোষীরা। তেল পাচারকারীরা ঘটনার কয়েকদিন গাঁ ঢাকা দিয়ে থাকলেও এখন তারা খুলনা রেল ষ্টেশনে বীরদর্পে ডিউটি করছেন । তেল চুরি মামলার তদন্তের দায়িত্ব থাকা কর্মকর্তা খুলনা জিআরপি থানার এস আই মফিজুল হক । মামলা দায়েরের প্রায় এক বছর হতে চল্লো অথচ অজ্ঞাত কারনে এজাহার নামীয় কোন আসামীকে তিনি গ্রেফতার করেননি । মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে দিবালোকে স্টেশনে ডিউটি করছে অথচ তাদের গ্রেফতারে কোন তৎপরতা নেই জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা এ প্রতিবেদকে জানান আসামীরা সরকারী কর্মচারী বিধায় তাদের গ্রেফতারে সংশ্লিষ্ঠ উর্ধতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নিতে হয় । ফৌজদারী মামলায় কোন আসামী ধরতে অনুমতির কি প্রয়োজন হয় জানতে চাইলে তিনি এরিয়ে যান । দির্ঘ সময় পার হলেও তেল চুরির মামলায় জরিতদের আটক করেননি । বরং তদন্ত কর্মকর্তা এবং ওসি ওসমান গনি পাঠান মোটা অংকের অর্থের বিনিময় আসামীদের আজ পযন্ত আটক করেনি বরং তারা আরএনবি উর্ধতন কর্মকর্তাদের উপটৌকন দিয়ে ফের শুরু করেছে তেল চুরি,অবৈধ মাল পাচার,এবং খুলনা থেকে ঢাকা এসি কোচে চেয়ার বসিয়ে যাত্রি নিয়ে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছেন কয়েক লক্ষ টাকা । আর এই টাকা রেলের বিভিন্ন বিভাগে ভাগ বাটোয়ারা করা হয় । অথচ তেল চুরির ঘটনায় সময় বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী পরিবহণ কর্মকর্তা (এটিও) মো: নাছির উদ্দিনকে প্রধান করে ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলও সেই তদন্ত আজও আলোর মূখ দেখেনি । রেলের অপরাধে জরিত ,রেল নিরাপত্তা কর্মী(আরএনবি) রেল পুলিশসহ যারাই কোন অপরাধ করুক না কেন তার সঠিক বিচার আজও হয়নি শুধুমাত্র রেলের উর্ধতন কর্মকর্তাদের উৎকোচ বানিজ্যের স্বার্থে ।