খুলনার সড়ক-মহাসড়কে ট্রাকের বেপরোয়া গতির কারণে ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। এতে বহু শিশু থেকে বৃদ্ধ, রাজনীতিবিদ, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী প্রাণ হারাচ্ছেন।
চিরদিনের মত পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে অনেককেই।
সর্বশেষ বুধবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে খুলনার পাইকগাছার লক্ষীখোলা কলেজিয়েট স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সাকিব সরদার নামে এক স্কুলছাত্র সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। সাকিবের চাচা আল-আমিনের সঙ্গে মোটরসাইকেল করে কপিলমুনিতে ফুফুর বাড়ি যাচ্ছিলেন। কপিলমুনির দরগাহমহল মোড় নামক স্থানে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক তাদের ধাক্কা দেয়। এতে মোটরসাইকেল আরোহী সাকিব ছিটকে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পায়। স্থানীয়রা তাকে দ্রুত পাইকগাছা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সোমবার (১৮ জানুয়ারি) খুলনায় পাট বোঝাই ট্রাকের চাপায় খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বেগ আনিসুর রহমান (৫২) নিহত হন। পাট বোঝাই ট্রাক (যশোর ট-১১-০৯১৪) বেজেরডাঙ্গা আয়ান জুট মিল থেকে পাট বোঝাই করে রেলিগেট বিশ্বাস জুট ট্রেডার্সে নিয়ে যাচ্ছিলো। ট্রাকটি ফুলবাড়ীগেট জামিয়া কারিমিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন জাব্দিপুর বালুরমাঠ এলাকায় এলে খুলনাগামী মাহেন্দ্র (খুলনা মেট্রো থ-১১-০৮৩৭) ওভারটেক করার সময় ট্রাক ও মহেন্দ্রর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাহেন্দ্রের সামনে থাকা বেগ আনিসুর রহমান ছিটকে পড়ে ট্রাকের পিছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন।
শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের জিরো পয়েন্ট এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। মোটরসাইকেল করে সাতক্ষীরা থেকে খুলনার দিকে আসছিলেন দুইজন। তখন খুলনা থেকে সাতক্ষীরাগামী ট্রাক ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে তাদের মৃত্যু হয়।
গেল বছরের ১৪ মে খুলনার রূপসায় বালু ভর্তি একটি বেপরোয়া ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মিম (৭) নামের একটি শিশু নিহত হয়েছে। একই বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি খুলনায় বালুর ট্রাকের চাপায় এনামুল কবির (৫০) নামের এক রাজমিস্ত্রীর মৃত্যু হয়। রূপসা সেতুর দিক থেকে জিরো পয়েন্টের দিকে যাওয়ার সময় হাইওয়ে সড়কের বাম পাশের দারোগার লিজ নামক স্থানে ট্রাক তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
খুলনার জিরোপয়েন্ট এলাকায় সবচেয়ে বেপরোয়াভাবে সম্প্রতি ট্রাক চলতে দেখা যাচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে বাইপাস সড়ক দিয়ে ওভারলোডিং বালুসহ অন্যান্য মালামাল নিয়ে ট্রাক চলাচল করছে। বেপরোয়া এসব ট্রাকে বিগত বছরগুলোতেও বাইপাসে অকালে ঝরেছে অসংখ্য প্রাণ। অভিযোগ রয়েছে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এগুলো নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকাই রাখছে না। রাত-দিন সড়কগুলো দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে ট্রাক।
সড়ক নিরাপত্তার জন্য সরকারের নির্দেশনা থাকলেও মানছেন না ট্রাক চালকরা। অনেক সময় হেলপার চালান ট্রাক। এসব কারণে প্রতিদিনই প্রাণ ঝরছে সড়ক-মহাসড়কে। দুর্ঘটনার জন্য অনেকে আবার বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এবং কিছু অসাধু পুলিশকে দায়ী করছেন।
অদক্ষ চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানো, খামখেয়ালিপনা, জনসচেতনতার অভাব এবং দায়ী চালকের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির বিধান বাস্তবায়ন না হওয়ায় অহরহ ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা, এমনটি মনে করছেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর নেতারা।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বাংলানিউজকে বলেন, বেপরোয়া ট্রাকে সড়কে প্রতিনিয়ত অকালে ঝরছে প্রাণ। সড়কের কোন নিয়ম-নীতিই মানছেন না ট্রাক চালকরা। এছাড়া মালবাহী ট্রাকের অতিরিক্ত চাপ নিতে না পেরে ভেঙে যাচ্ছে সড়ক। কিন্তু হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ অনেকেই সঠিক দায়িত্ব পালন করছেন না। তাদের সামনেই অনিয়ম করে চলছেন চালকরা। ফলে ঘটছে দূর্ঘটনা।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে খুলনা রেঞ্জ পুলিশ সুপার (অপারেশনস অ্যান্ড ট্রাফিক) তোফায়েল আহাম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, বেপরোয়া ট্রাক চালকদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। অনেককে ধরা হয়েছে। সামনে আরও তৎপরতা বৃদ্ধি করবো।