আন্তর্জাতকি ডেস্কঃখুলনাসহ সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৫৭০ জন। শুধুমাত্র খুলনা জেলায় এ সংখ্যা ৩০। গত কয়েকদিন ধারাবাহিকভাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকলেও গতকাল হঠাৎ করে খুলনায় এ সংখ্যা আবারও বেড়েছে।
বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরির্চা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫১ ডেঙ্গু রোগী। এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে শরিয়তপুরের ডামুড্যায় সুমাাইয়া ইয়াসমীন (৩১) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
এ সময়ে সারাদেশে নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৫শ’ ৭২ জন। যা এর আগের দিনের তুলনায় ৪৩ জন কম। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার মঙ্গলবার এ তথ্য জানান।
ডাঃ আয়শা আক্তার জানান, এ হিসাব সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত। আইসিইউতে থাকা এই ৫১ রোগীর মধ্যে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালগুলোতে আছেন ২৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন ৪ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৩ জন, শহিদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৩ জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে একজন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে একজন এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৩ জন। বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে স্কয়ার হাসপাতালে ৬ জন,সেন্ট্রাল হাসপাতালে ২ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ৩ জন, এ্যাপোলো হাসপাতালে ৯ জন, আদ-দ্বীন হাসপাতালে ২ জন, ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে একজন এবং উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩ জন রয়েছেন।
ডেঙ্গু পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র তুলে ধরে তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রয়েছেন ৭৫০ জন। এছাড়া রাজধানীর বাইরে সারাদেশে ভর্তি হয়েছেন ৮২২ জন।
এদিকে খুলনায় গত কয়েকদিনে ধারাবাহিকভাবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমলেও গতকাল তা আবার হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। গত তিন দিনে যথাক্রমে ১৮ জন ১৫ জন ও ১২ জনে নেমে এলেও গতকাল খুলনা জেলায় ৩০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি কয়েছে। যার ২৫ জনই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বাকিরা সদর হাসপাতাল ও অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালে। এ নিয়ে খুলনায় বর্তমান ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬০৩ জনে।
এদিকে শরীয়তপুরের ডামুড্যায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সুমাইয়া ইয়াসমীন (৩১) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার দিবাগত রাত অনুমান ৩টায় তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান। সুমাইয়া ইয়াসমীন ডামুড্যা উপজলার ডামুড্যা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড এর দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামের কামাল ঢালীর স্ত্রী।
সুমাইয়ার ম্বামী মোঃ কামাল হোসেন ঢালী জানায়, স্বপরিবারে তারা ঢাকায় বসবাস করতেন। ঈদের কয়েক দিন আগে দেশের বাড়ি আসেন। গত শনিবার তার শরীরে জ্বর অনুভব হলে তাকে প্রথমে ডামুড্যা হেপি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রক্ত পরীক্ষা করার পর ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়ে। এরপর তাকে পার্শ্ববর্তী আলী আজম হাসপাতালে চিকিৎসা করে একটু সুস্থ হবার পরে সোমবার রাতে বাড়ি নিয়ে যায়। সোমবার রাত অনুমান ৩টায় সে মারা যায়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এদিকে সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান সাতক্ষীরা প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় সাতক্ষীরার বিভিন্ন হাসপাতালে আরো ২২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে সাতক্ষীরায় গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ২৬১ জন ডেঙ্গু রোগীকে সনাক্ত করা হয়েছে। এসব রোগীর মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে এখনও ভর্তি রয়েছে ৫৮ জন। চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন আরো ১৮০ জন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র রেফার করা হয়েছে আরো ২৩ জনকে। আক্রান্তদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে, জেলায় প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ আবু শাহিন জানান, বর্তমানে সাতক্ষীরায় স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে, হাসপাতালে যারা ভর্তি আছেন তারা এখন আশংকামুক্ত। ডেঙ্গু প্রতিরোধে জেলা ব্যাপী নানা জনসচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চলছে।