নিজস্ব প্রতিবেদকঃপ্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়ার্ডের মহেশ^রপাশা ক্যাথলিকপাড়া এলাকার দায়িত্বে থাকা নেত্রী (এসিএনএফ) পাপড়ী রায়ের বিরুদ্ধে সিডিসি’র সদস্যদের মধ্যে নগদ অর্থ বিতরণ এবং তালিকা তৈরীতে ব্যপক দূনীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়াগেছে।
খুলনা মহানগরীতে আবস্থানরত প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নে প্রকল্পের আওতায় করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবেলায় কর্মঝুকিতে পড়া সিডিসি’র সদস্যদের মাঝে নগদ ১৫শ করে টাকা ভোগীদের তালিকায় স্থান পেয়েছে মৃত ব্যক্তি, সিটির বাইরে থাকা অন্য জেলা ও বিভাগের এবং ইউনিয়নে বসবাসরত ব্যক্তিদের নাম ছাড়াও দলনেত্রী পাপড়ী রায়ের মা সহ ১০ জন নিকট আত্মিয়ের নাম রয়েছে এ তালিকায়।
হতদরিদ্র অসহায় এবং অসচ্ছল ব্যক্তিদের নাম বাদ দিয়ে সরকারি চাকুরীজিবী, বহুতল ভবনের মালিকসহ বৃত্তশালীদের নামও রয়েছে এই তালিকায়। এই এলাকার দায়িত্বে থাকা দলনেত্রী পাপড়ী রায়ের বিরুদ্ধে এ সকল অনিয়মের পেছনে উৎকোচ ও কমিশন বানিজ্যের অভিযোগ করেছে অনেকে।
পাপড়ী রায়ের বিরুদ্ধে এ সকল অনিয়ম ও দূনীতির অভিযোগ এনে ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে লিখিত দিয়েছেন তালিকায় থাকা এবং তালিকা থেকে বঞ্চিত সিডিসি’র অসচ্ছল ও হতদরিদ্র সদস্যরা।
অভিযোগে জানাগেছে, সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সিডিসি সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়ার্ডের মহেশ^রপাশা ক্যাথলিকপাড়ার ১৩৭ জন হদদরিদ্র ও অসচ্ছল সিডিসি’র পিজি সদস্যদের মাঝে বিকাশ রকেটের মাধ্যমে ১৫শ করে টাকা বিতরণ করা হয়।
অভিযোগ আছে টাকা উত্তোলনের সময় পাপড়ী রায় নিজে দাড়িয়ে থেকে প্রত্যেকের কাছ থেকে ২শ থেকে ৫শত টাকা করে বিভিন্ন অজুহাতে নিয়েছেন। সিডিসির সদস্য লতাসহ একাধিক সদস্য এই প্রতিনিধিকে জানান, আমাদের টাকা ফুলবাড়ীগেটের একটি বিকাশের রকেট একাউন্টে আসার পর পাপড়ী দোকানের সামনে দাড়িয়ে থেকে প্রত্যেকের কাছ থেকে ২শ থেকে ৫শ টাকা করে নিয়েছে।
বিষয়টি কাউকে জানালে বা টাকা না দিলে পরবর্তি সাহায্য বা তালিকা থেকে নাম কেটে দিবেন এমন হুমকি প্রদান করলে ভয়ে ভয়ে সকলের টাকা দিতে বাধ্য হয়েছে। এ ব্যাপারে বহু সদস্য ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।
সিটি বাইরে ইউনিয়নে থাকা কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানাগেছে তারা টাকা তোলার সময় দুই-তিনশ করে টাকা পাপড়ীকে দিয়েছেন। মনখুশি মন্ডলের নামে টাকা তোলা হয়েছে যিনি গত জানুয়ারীর ২৩ তারিখ মারা গেছেন মৃত ব্যক্তিও টাকা পেয়েছেন।
তালিকার হান্না বিনা বাড়ই, আখি রায় থাকেন ঢাকায়, দিপালী বাড়ই. শিখা বাড়ই, বুলু বাড়ই, সাতক্ষিরা, বৃষ্টি লুচিয়া বাড়ই রুপসা এবং মৌসুমি মুখাট থাকেন বৈকালীতে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের বাইরে ইউনিয়নে থাকেন লতা বিশ্বাস, রিপা বিশ্বাস, এলিজাবেদ ও ডলি বৈরাগী। টাকা তুলেছেন দলনেত্রী পাপড়ী রায়ের মা বিনা বাড়ই, মামাতো বোন মোসুমী মুখাটি, সৃষ্টি লুচিয়া বাড়ই, মামী ভক্তি বাড়ই, শিখা বাড়ই মাসি,
হান্না বিনা বাড়ই শাশুড়ী, আখি রায় ননদ, বুলু বাড়ই এবং দিপালী বাড়ই নিকটতম আত্মিয়। টাকা পেয়েছে মেরী প্রভা সরদার যার মেয়ে জাপান এবং ছেলে এনজিও কর্মকর্তা, সুসমা গমেজ দ্বিতলবাড়ী সরকারি চাকুরীজীবি, আন্না ঘোষ প্রচুর বিত্তশালী, স্বর্ণা তেরেজা ফলিয়া ছেলে থাকে ফ্রান্স এবং অন্যজন ঢাকায় চাকুরী করে তিনিও পেয়েছে এই অনুদানের টাকা।
পাপড়ী রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে এলাকার হতদরিদ্র গরীব সদস্য অনেকেই অনুদানের অর্থ না পেলেও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ব্যক্তিসহ অনুদানের টাকা পাইয়ে দিয়ে তাদের কাছ থেকে কমিশন নেওয়ার। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পাপড়ী রায়ের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমি শুধু ক্যাথলিকপাড়া নয় ৫ টি সিডিসি দায়িত্বে আছি।
অর্থ প্রাপ্তিদের তালিকা তৈরীর বিষয়ে তিনি বলেন খুলনা অফিস তালিকা করেন এখানে আমার কোন হাত নাই আমি অফিসের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেছি। মৃত ব্যক্তিদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-সাতক্ষীরাসহ অন্য এলাকায় থাকা ব্যক্তিদের অর্থ পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন তারা প্রতি মাসে এসে সমিতির সঞ্জয় রেগুলার করে টাকা জমা দিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন ৬ বছর আগের জরিপ অনুযায়ী টাকা প্রদান করা হয়েছে এক্ষেতে বৃত্তশালী বা বহুতল ভবনের মালিক এখন তারা হতে পারে। আর কারা কি পাবে তা অফিস থেকে নির্ধারণ করা হয়। এ বিষয়ে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট কমিটির (সিডিসি) টাউন ম্যানেজার (টিএম) মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ইউনিয়নের বাইরে গিয়ে এই অর্থ দেওয়ার কোন সুযোগ নাই।
তালিকা তৈরির বিষয়ে তিনি বলেন আমাদের তালিকা অনলাইন সার্ভের আলোকে যারা সুবিধা পাওয়ার যোগ্য তাদের নামের তালিকা ঢাকা থেকে অটোজেনারেটের মাধ্যমে বহুমার্তিক দারিদ্রতার (২০) সুচক হিসাবে যারা পড়বে শুধুমাত্র তারা সুবিধাভোগীদের মধ্যে পড়বে। তবে ডাটা এনালাইসেন্সের কারনে কিছু ত্রুটি বিচ্চুতি হতে পারে। তবে মৃত ব্যক্তির নামে টাকা তোলা হলে এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সদস্যদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া এবং মৃত ব্যক্তির টাকা উত্তোলনের বিষয়সহ পাাপড়ী বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলোকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ আব্দুর রাজ্জাক সিডিসি মহেশ্বরপাশা ক্যাথলিকপাড়ার অর্থ বরাদ্ধের অনিয়মের অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন একটি লিখিত অভিযোগ আমার বরাবর দাখিল করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে আমি সিডিসি’র টাউন ম্যানেজারের সাথে কথা বলবো। সিডিসি’র (এসিএনএফ) পাপড়ী রায়ের বিরুদ্ধে শুধু ক্যাথলিকপাড়া নয় দায়িত্বে থাকা ৫টি এলাকার হাল একই। এই অবস্থায় সিডিসি’র সুবিধাভোগী অসহায় অসচ্ছল দরিদ্র সদস্যরা পাপড়ী রায়ের সকল অনিয়মের বিষয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্জ তালুকদার আব্দুল খালেকের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।