মাগুরা প্রতিনিধিঃ মঙ্গলবার খুলনা মেডিকেল কলেজের আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনা সন্দেহে ভর্তি থাকা দু’জন মৃত ব্যক্তির মধ্যে একজন মাগুরার শালিখা উপজেলার তালখড়ি পিয়ারপুর গ্রামের আনছার আলী (৫০)। মৃত্যুর পর পরিবারের লোকজন তাঁর মরদেহ বাড়িতে এনে করোনার উপসর্গের বিষয়টি গোপন করে স্বাভাবিক মৃত ব্যক্তির ন্যায় গোসল ও নামাজে জানাজা শেষে দাফন সম্পুর্ন করেছেন।
খোদ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ অনেক গ্রামবাসী এ জানাজাসহ দাফনে অংশ নেয় বলে জানা গেছে। করোনা সন্দেহে সংগ্রহ করা নমুনার রিপোর্ট না আসায় এ ঘটনা জানাজানির পর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন গ্রামবাসীসহ স্থানীয় প্রশাসন।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা যায়, মঙ্গলবার (৫ মে) খুলনা মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটের ডাক্তার শৈলেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের বরাত দিয়ে শ্বাসকষ্টসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে থাকা দুই ব্যক্তির মৃত্যু ও তাদের নমুনা সংগ্রহের খবর জানানো হয়। তাদের মধ্যে একজনের বাড়ি বাগেরহাটের মোংলা ও অপরজন মাগুরার শালিখা উপজেলায়। গত সোমবার রাতে চিকিৎসার জন্য তাঁকে খুলনায় নিয়ে গেলে তাঁর উপসর্গ দেখে ডাক্তার তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। চিকিৎসারত অবস্থায় মঙ্গলবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।
এরপর সকালে পরিবারের সদস্যরা মরদেহ নিয়ে মাগুরায় বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। মাগুরায় বাড়িতে পৌঁছে স্বজনরা বিষয়টি গোপন করে স্বাভাবিক মৃত ব্যক্তির ন্যায় গোসল, জানাজাসহ সকলের উপস্থিততে দুপুরেই দাফনের কাজ সম্পন্ন করেন। এদিকে, মৃত ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবৎ লিভারের জটিল রোগে ভুগছিলেন বিধায় বিষয়টি স্বাভাবিক মৃতের ঘটনা ভেবে গ্রামবাসীর সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নিজেও জানাজায় অংশ নেন।
এ ব্যাপারে সন্ধ্যায় স্থানীয় তালখড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডলের সাথে মোবাইল ফোনে আলাপকালে বিষয়টি শুনে প্রথমেই জানাজায় নিজের উপস্থিতি নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েন তিনি। মৃত আনছার আলীর পরিবার গ্রামবাসীকে কিছু না জানিয়ে মরদেহ এনে তড়িঘড়ি দাফনের কাজ সম্পন্ন করলেও তিনি লিভারের জটিল রোগে ভুগছিলেন বিধায় বিষয়টি স্বাভাবিক বলে ধারণা করে তিনি নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে স্বীকার করেন। সেখানে গোসল ও দাফনসহ নানা কাজে নিয়োজিতদের ব্যাপারে আশু ব্যবস্থা নেয়া জরুরী এবং সেই সাথে জানাজায় অংশ নেয়ার জন্য বয়সজনিত কারণে নিজেও শংকিত বলে মন্তব্য করেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান।
এ ব্যাপারে শালিখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভির রহমান জানান, এ ধরনের বিষয় তাঁর জানা ছিল না। তবে কিছুদিন আগে তালখড়ি ইউনিয়নে ওই গ্রামের এক ব্যক্তির করোনা সন্দেহের ব্যাপারে গ্রামবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিনিধি পাঠানো হলে ডাক্তার তাঁর লিভারের জটিল সমস্যার কথা উল্লেখ করেন বলে জানান। রিপোর্ট আসার আগে এ ধরনের জানাজা ও দাফনের বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে ব্যাবস্থা নেবেন বলেও জানান তিনি।
এখন পর্যন্তুু শালিখা উপজেলায় দু’জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। গত ২৫ এপ্রিল বাঘারপাড়ার বাসিন্দা সীমাখালী এলাকায় অবস্থানকারী একজন ইমাম এবং পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন টেকনিশিয়ানের শরীরে করোনার অস্তিত্ব মেলে। এ অবস্থায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যাক্তির স্বাভাবিক জানাজা ও দাফনের ঘটনায় বিব্রত স্থানীয় বাসিন্দারা।