চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃখুলনার তেরখাদা উপজেলার কাটেঙ্গা গ্রামের শাহীনা বেগম মারা গেছেন তিন বছর আগে। তবে তার নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকার সুলভ মূল্যের কার্ড এখনো চলমান। বরাদ্দকৃত চাল তার নামে উঠছে তিন বছর ধরেই। অথচ কিছুই জানে না তার পরিবার। মৃত শাহীনার পরিবারের আরও তিন সদস্যের নামে কার্ড থাকলেও জানা ছিল না কারও। সম্প্রতি ‘জমি আছে ঘর নেই প্রকল্প’র কার্যক্রমে সুবিধাপ্রাপ্তদের তালিকা যাচাই-বাছাই শুরু হলে কার্ডের বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে বাধ্য হয়ে অনেকের কার্ড ফেরত দিয়েছেন ডিলার। তবে একই সঙ্গে এ কথা কাউকে না জানাতে বলা হয়েছে। বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। জানা যায়, তিন বছর ধরে তেরখাদার বারাসাত ইউনিয়নের অনেক গরিব ও অসহায় মানুষের নামে ফেয়ার প্রাইসের (সুলভ মূল্যের) চাল উত্তোলন করা হলেও কেউ কিছুই জানেন না। স্থানীয় প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে ডিলার শহিদুল ইসলাম ও নূর ইসলামের একটি সিন্ডিকেট গরিবের চাল বিক্রি করে খাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কাটেঙ্গা গ্রামের তানিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমাদের বাড়ির কুব্বত মোল্লা, নূর ইসলাম, শাহীনা বেগম (মারা গেছেন) ও তানিয়া সুলতানার নামে চারটি কার্ডে এত দিন ধরে চাল উত্তোলন করা হয়েছে। কিন্তু আমরা কিছুই জানতাম না।’ একই গ্রামের শিখা বেগমের নামে ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৬০ কেজি চাল উত্তোলন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি জানতামই না যে আমার নামে কার্ড আছে। চাল তো দূরে থাক, এত দিন কোনো সাহায্যই পাইনি। আমাদের নামে কার্ড হইছে কি না জানতে গেলে ডিলাররা জানিয়েছে কার্ড হয় নাই। কিন্তু সই দিয়ে তারা এত দিন কার্ডের চাল খাইছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তেরখাদার বারাসাত ইউনিয়নের ৮৫৪টি কার্ডের অধিকাংশই ভুয়া। কয়েকশ লোকের নামে কার্ড আছে অথচ তারা কিছুই জানেন না। অনেকেই এক ও দুবার চাল পাওয়ার পর তাদের কপালে আর কোনো দিনই চাল জোটেনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষ্ণুপদ পাল জানান, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ডে অস্বচ্ছতা আছে, এমন অভিযোগে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে উপকারভোগীদের নামে থাকা কার্ড যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চাল নিয়ে অনিয়ম করার সুযোগ নেই। তালিকায় যাদের নাম আছে তাদের অনেকে চাল পাচ্ছে না- তদন্তে এমন অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। সংশ্লিষ্ট ডিলারের লাইসেন্স বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা যায়, ২০১৬ সালে উপজেলার তেরখাদা সদর, ছাগলাদাহ, বারাসাত, সাচিয়াদাহ, মধুপুর ও আজগড়া ইউনিয়নে অনেকের নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকার সুলভ মূল্যের কার্ড করা হয়।
এখানে সুবিধাভোগীর তালিকায় মোট ৪ হাজার ৫২০ জনের নাম রয়েছে। এদের বেশির ভাগ কার্ড হওয়ার পর প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি চাল পাওয়ার পর এরপর তিন বছরে তাদের কপালে আর কোনো চাল জোটেনি। ১১ জন ডিলারের মাধ্যমে এসব কার্ডধারীদের নামে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যার বেশির ভাগই নয়ছয় হয়ে গেছে। বারাসাত ইউনিয়নে অনিয়মের ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বেশ কিছু কার্ডে অসংগতি পাওয়া গেছে। অনেকের নামে কার্ড আছে, তারা চাল পায় না। আবার একই পরিবারের একাধিক সদস্য, ডিলারের আত্মীয়, সচ্ছল চাকরিজীবী বা এলাকায় থাকেন না এমন ব্যক্তির নামেও সরকারের সুলভ মূল্যের কার্ড রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, খুলনার তেরখাদার মতো একইভাবে ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটাসহ নয় উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুলভ মূল্যের কার্ডে গরমিল রয়েছে। সরেজমিনে ডুমুরিয়া উপজেলায় গরিবের ১০ টাকার চালের কার্ডধারীর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাড়িও দেখা গেছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. তানভীর রহমান জানান, জেলায় ১৭৩ জন ডিলারের অধীনে ৮৩ হাজার ৯৪৪ জনকে সুলভ মূল্যের চাল দেওয়া হয়। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটির মাধ্যমে বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করা হয়। কোনো অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে তা সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। তবে খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, সরকারি বরাদ্দকৃত চাল নিয়ে দুর্নীতি করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। তেরখাদা উপজেলায় ডিলারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ডিলারের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।বাংলাদেশ প্রতিদিন