চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃখুলনা মহানগরের ৩০ ও ৩১নং ওয়ার্ডে কিশোর গ্যাং কালচার ভয়ংকর রুপ ধারণ করেছে। মাদক নেশায় জড়িয়ে পড়া থেকে শুরু করে চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং, মাদক ব্যবসা, এমনকি নিজেদের অভ্যন্তরীন বা অন্য গ্যাং গ্রুপের সঙ্গে তুচ্ছ বিরোধকে কেন্দ্র করে খুন-খারাপবি থেকেও পিছপা হচ্ছে না কিশোর অপরাধীরা।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম বাহার বুলবুল বলেন, ১৬ ফেবব্রæয়ারি সন্ধ্যায় চানমারি বাজারের চুল কাটতে গেলে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে ফায়াদ গুরুতর আহত হয়। তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নেয়ার পথে মাওয়া ফেরিঘাটে তার মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পরের দিন সোমবার সকাল এগারোটায় ধারালো রামদা, ছুরি ও লাঠিসোঠা নিয়ে উঠতি বয়সির বেশ কিছু ছেলেরা মহড়া করতে দেখেছে এবং আরেক দফা হামলায় অপর এক যুবক আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া হামলায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যহত রয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাসিব (১৬) নামের একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে ।
বর্তমানে চাঁনমারী, মতিয়াখালী, চৌধুধীর বিল, মহিরবাড়ী খাল, ঢাকাইয়াপাড়া, মোল্লাপাড়া, জিন্নাহপাড়া, হঠাৎ বাজার, খানজাহান আলী ব্রীজ, লবণচরা এলাকায় বিভিন্ন কিশোর গ্রæপদের মধ্যে ব্যপক উত্তেজনা বিরাজ করছে । উদ্বেগের বিষয়, মাদক নেশার টাকা জোগাড়ে ছোটখাটো অপরাধে জড়ানো বিভিন্ন গ্যাংয়ের সদস্যরা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়ে উঠছে ভয়ংকর অপরাধী, এলাকার ত্রাস। এর পেছনের অন্যতম কারণ রাজনৈতিক ‘বড় ভাই’দের স্বার্থের প্রশ্রয় বা পৃষ্টপোষকতা। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়াতে তাদের আসকারা বেড়ে গিয়ে আরো বড়বড় অপরাধের সাথে যুক্ত হচ্ছে ।
পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়া এসব কিশোর স্কুল-কলেজের মোড়ে দলবেঁধে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, থেকে মাদক সেবন, চুরি, ছিনতাই এবং খুনের মতো অপরাধও করে থাকে নির্দ্বিধায়।
বেপরোয়া গ্যাং সদস্যরা যে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীতে পরিণত হয় তার সাম্প্রতিক উদাহরণ বরগুনা শহরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে রিফাত শরীফকে হত্যা। তাকে কুপিয়ে হত্যাকারী নয়ন বন্ডসহ অন্যরাও ০০৭ নামে একটি গ্যাংয়ের সদস্য। এমনকি যাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সেই রিফাত শরীফও একসময় হত্যাকারীদেরই গ্যাং সঙ্গী। যাদের সবাই কিশোর বয়স থেকে গ্যাং কালচারে জড়িত থেকে নানা অপরাধ সংঘটন, এমনকি একপর্যায়ে নিজেরা মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী হয়ে পড়ে এবং স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ক্রীড়নকে পরিণত হয়। এছাড়া তাদের মধ্যে বান্ধবী-প্রেমিকা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিরোধও তৈরি হয়। এভাবে গ্যাংয়ের বেড়ে ওঠা ও তাদের অপরাধের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে।
ঊস্তুত, পরিবার ও সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং সরকারের পক্ষে রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর উদ্যোগ ছাড়া গ্যাং কালচার রোধ করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই এগিয়ে আসতে হবে পিতামাতাকে। অভিভাবকদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিই বিপথগামিতা থেকে তাদের সন্তানদের রক্ষা করতে পারে। সন্তান কি করে, কার সঙ্গে মেশে, কোথায় সময় কাটায়- এ কয়টি বিষয়ে পর্যাপ্ত মনিটরিং করতে পারলেই গ্যাংয়ের মতো বাজে কালচারে সন্তানের জড়িয়ে পড়া রোধ করা সম্ভব।
এর বাইরে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষার করার বিকল্প নেই। সরকারের শীর্ষমহলের বর্তমানে বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়ে কার্যকারী প্রদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। একইসঙ্গে কিশোরদের পরিবার ও সমাজ এগিয়ে এলে গ্যাং কালচারের বাজে থাবা থেকে রক্ষা করে শিশু-কিশোরদের সুনাগরিক ও ভবিষ্যৎ সম্পদে রূপান্তর করা যাবে, অন্যথায় এদের দ্বারা সমাজ কুলোষিত হয়ে ভয়াভয় আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটবে ।