টমেটো অন্যতম প্রধান সবজি। টমেটো কাঁচা, পাকা এবং রান্না করে খাওয়া হয়। প্রতি মৌসুমে বিপুল পরিমাণ টমেটো সস, চাটনি, জুস, পেস্ট, পাউডার তৈরিতে ব্যহৃত হয়। টমেটোর কদর মূলত ভিটামিন-সি এর জন্য। তবে এর রঙ, রূপ ও স্বাদও অনেককে আকৃষ্ট করে। সালাদ হিসেবেই অধিকাংশ টমেটো খাওয়া হয়। টমেটো একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের গোপালগঞ্জ-খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা-পিরোজপুর জিকেবিএসপি প্রকল্প কর্মকর্তাদের পরামর্শে বটিয়াঘাটার স্থানীয় কৃষকরা টমেটো চাষে ঝুঁকেছেন। তারা জানান, টমেটো শীতকালীন সবজি হলেও বর্তমান সময়ে শীত থেকে বসন্তকাল পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে টমেটো উৎপাদিত হয়। লবণাক্ত বটিয়াঘাটার উৎপাদিত টমেটো স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে যাচ্ছে। এ বছর উপকুলীয় উপজেলা ও প্রকল্পভুক্ত জেলা সমুহে ব্যাপক হারে টমেটোর আবাদ হয়েছে। প্রতি বিঘায় টমেটোর উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৪০ মেট্রিকটন। ফলে বাজারে শীতকালীন সবজি চড়া হওয়ায় কৃষকরা বাড়তি আয় করে লাভবান হচ্ছেন।
টমেটোর পুষ্টির পাশাপাশি ভেষজ্য গুনাগুন রয়েছে। এর শাঁস ও জুস হজমকারক এবং ক্ষুধাবর্ধক। টমেটো রক্ত শোধক হিসেবেও কাজ করে। উপকুলীয় অঞ্চলে (জিকেবিএসপি) প্রকল্পের মাটি ও সার সহায়িকার মাধ্যমে কৃষকরা মৌসুমে ও অমৌসুমে প্রচুর পরিমাণে টমেটো চাষ করছে। টমেটো একটি অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি। কাঁচা ও পাকা উভয় টমেটোই দেহের জন্য উপকারী।
জানাগেছে, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের গোপালগঞ্জ-খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা-পিরোজপুর জিকেবিএসপি প্রকল্প কৃষি উন্নয়নের জন্য এই প্রকল্প নানা মুখি গবেষণা পরিচালনা করে আসছে। এই প্রকল্প থেকে ফুলতলা ও ডুমুরিয়ায় ত্রিশ জন কৃষক এক বিঘা করে ঘেরের পাড়ে খরিপ মৌসুম -২ বর্ষাকালে টমেটোর চাষ করেছেন। লাভলী ও বিউটি ফুল-টু জাতের চাষ করায় ফলন বেশী হয়েছে। এই বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটছে। দেখছেন নতুন স্বপ্ন। ঘেরের পাড়ে টমেটো চাছ করায় কোন সেচ দিতে হয় না। মাটিও লবণাক্ত কম থাকে। ফলে ফলন বেশী হয়। ঘেরের পাড়ের দু’ দিকে সারি বদ্ধ ভাবে রোম করা হয়েছে টমেটো চারা। আগস্ট মাসের মাঝি চারা রোপণ করা হয়েছে। প্রতিটি গাছ হলুদ ফুলে ভারে গেছে। ইতো মধ্যে কর্তন শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি পাইকারী ৭০-৭৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এতে খরচ কম লাভ বেশী। চাষিরা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে বাইরের জেলাতে বিক্রি করে থাকেন। ফুলতলা উপজেলার যোগিপোল গ্রামের কৃষক আহাদ মেখ ও ডুমুরিয়া উপজেলার কাটেংগা গ্রামের মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, (জিকেবিএসপি )র কৃষি উন্নয়ন এই প্রকল্প থেকে বিনামূল্যে বীজ, সার, প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সকল উপকরণসহ সার্বিক সহযোগিতা পেয়ে টমেটো চাষ করে আমি লাভবান হয়েছি।
এ বিষয় গোপালগঞ্জ-খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা-পিরোজপুর (জিকেবিএসপি) কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক অমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ মানব সম্পাদে পরিনত করা হয়েছে। প্রশিক্ষণলঙ্ক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সঠিক নিয়মে চাষাবাদ করায় টমেটোর উৎপাদন ভালো হয়েছে। তারা ভালো দামে বিক্রিও করতে পারছেন। অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন। টমেটো চাষে কৃষক আগ্রহী হয়েছেন। লবণাক্ত এ অঞ্চলের চাষিরা এক সময় শুধু ঘেরে মাছ চাষ করত। আমাদের প্রকল্প থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশী বিনা মুল্যে বীজ,সার এবং মাটি ও সার সহায়িকা দিয়ে কৃষকদের সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছে। এখন এলাকায় টমেটোর পাশাপাশি প্রচুর শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবজির আবাদ হচ্ছে। তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন, কীভাবে হরমোন ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে টমেটো পাকানো যায়। এ ছাড়া কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে নিরাপদ সবজি বিক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কাছে কৃষকদের উৎপাদিত টমেটো সরবরাহের ব্যবস্থা করছি।