ফকির শহিদুল ইসলামঃ খুলনায় টিসিবির পণ্য কিনতে ডিলারের পন্য বোঝাইয়রে ট্রাক যেখানে স্টান্ড করবে সেই স্থানে গভীর রাতে লাইনে লাইনে ইট, পাথর, ডাবের খোসা, ছেঁড়া স্যান্ডেল রেখে দিচ্ছেন নিন্ম আয়ের নারী ও পুরুষ ক্রেতা। বাজারের চাইতে কম মূল্যে তেল, মসুর ডাল,সোলা, ও চিনি পাওয়া যায় বলেই তারা জায়গা দখল করে রেখেছে যেন সকালে টিসিবির পন্যের গাড়ী আসার সঙ্গে সঙ্গে কম মুল্যে পণ্য ক্রয় করতে পারে ! কেননা বেলা বাড়তেই তাপমাত্র বৃদ্ধি পেতে থাকে বলেই ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্য তেল, চিনি, ডাল কিনতে অভিনব এ কৌশল নিয়েছেন নগরীর খেটে খাওয়া অসহায় মানুষগুলো । সারাদেশে গত ২৬ মার্চ থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দুরত্ব মেনে চলার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে । করোনাভাইরাস সক্রোমন বৃদ্ধি পাওয়ায় সম্প্রতি স্বাস্থ মন্ত্রনালয় সারাদেশকে করোনা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষনা করায় সাধারন নিন্ম আয়ের মানুষরা পড়েছে বিপাকে । দেশের এই দুর্যোগকালীন সময়ে ন্যায্যমূল্যে পন্য ক্রয়ের ক্রেতার সংখ্যা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ।খুলনা শিল্পাঞ্চলে ক্ষুদার্ত মানুষের তালিকা দির্ঘ হচ্ছে প্রতিনিয়ত । তাদের খাদ্য সামগ্রী কম মুল্যে পেতেই গভীর রাতে এই সিরিয়াল দেয়া। তারা খাদ্য সংকটের চিন্তায় নিন্ম আয়ের মানুষরা ভুলেই গেছে বৃহস্পতি বারের পরেরদিন শুক্রবার । অথচ আজ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন টিসিবির পন্য বিক্রয় বন্ধ থাকে ।
করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্যান্সমিশন প্রতিরোধ কল্পে সরকার সামাজিক দুরত্ব মেনে চলতে জনগনকে সচেতন করতে প্রতিনিয়ত ব্যাপক প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহীনির সদস্যরা । তারপর অধিক ঘনবসতি পুর্ণ এলাকায় দেখা গেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর নিত্যপণ্য ক্রয়ে নিন্ম আয়ের মানুষগুলো করোনা প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব লংঘন করে চলছেন প্রতিনিয়ত । টিসিবির খোলাবাজারে পণ্য ক্রয়ে প্রচুর ভিড় হয় প্রতিটি ট্রাক সেলে। খুলনা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে লাইনে ক্রেতাদের সমগম দেখা গেছে। নগরীর ময়লাপোতা মোড় এলাকায় গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দেখা যায়, টিসিবি পণ্যের লাইনে আগে জায়গা পেতে আগেরদিন সন্ধ্যা থেকেই চলে স্থান দখলের প্রতিযোগিতা। স্তুপ করে রাখা টায়ার নিয়ে লাইনে রেখে ও তার মাঝখানে সড়কের ওপর নিজের নাম লিখে এ দখল প্রক্রিয়া চলে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে টায়ার ব্যবহার করা হচ্ছে।
জানা গেছে, গত ১৭ মার্চ থেকে টিসিবি জনগণের মধ্যে নায্যমূল্যে ডাল, তেল, চিনি ও পেঁয়াজ বিক্রয় শুরু করে। পেঁয়াজ বিক্রয় শেষে বাকি তিনটি পণ্য বিক্রয় চলমান রেখেছে টিসিবি। আর ১৩ এপ্রিল থেকে বিক্রি পণ্যের সাথে নতুন করে যুক্ত হয় ছোলা। প্রতি কেজি ছোলা ৬০ টাকা দরে কিনছেন ক্রেতারা। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ তিনকেজি ছোলা কিনতে পারছেন। সরকারি ছুটির দিনেও বিক্রয় করা হচ্ছে এই পণ্য। তবে প্রথম থেকে কোনোভাবেই করোনাভাইরাস বিস্তার প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারছিলো না। ট্রাক সেল থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য মাইকিং, নির্দিষ্ট দূরত্ব চিহ্নিতকরণের দাগ দেওয়া, গোল চিহ্ন দেওয়া, এমনকি নির্দিষ্ট দূরত্বে অব্যবহৃত ভ্যান, সাইকেল, রিক্সার টায়ার দিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। মহানগরীর শিববাড়ী মোড়, ময়লাপোতা মোড়, শহিদ হাদিস পার্কের সামনে, ডিসি অফিসের মোড়, নতুন বাজার এলাকাসহ অন্যান্য জায়গায় পুলিশের হস্তক্ষেপে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রচেষ্টা রয়েছে।
বুধবার দিনগত সন্ধ্যায় নগরীর ময়লাপোতা মোড় এলাকায় দেখা যায় টায়ার সাজানো। একই সাথে বিভিন্ন টায়ারের মাঝে সড়কের ওপর নাম লেখা, ইট দিয়ে রাখা, কেউবা আবার তরমুজ দিয়ে রেখেছেন।
রিকশা চালক হাবিব বলেন, গত ৩ দিন ধরে লাইনের শেষে দাঁড়িয়ে থেকে ট্রাক পর্যন্ত যাওয়ার আগেই পণ্য শেষ হয় যাচ্ছে। বুধবার রাত ৮টার দিকে এখান দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি লোকজন টায়ার সাজাচ্ছে। কেউ কেউ নামও লিখে রাখছে। এ অবস্থা দেখে আমিও একটা টায়ার রাখলাম এবং মাঝে একটা তরমুজ দিয়ে রাখলাম।
শেখপাড়ার বিউটি বেগম বলেন, গত দুদিন ধরে সকাল ৮টায় এখানে এসেই দেখি লম্বা লাইন। আর শুনি সবাই নাকি ভোর রাত থেকে লাইনে থাকে। তাই আজ সন্ধ্যায় বের হয়ে আসলাম। আর দেখি অনেকেই টায়ার সাজিয়ে রেখেছেন। আমিও তাই নাতিসহ ২ জনের জন্য টায়ার সাজিয়ে রাখলাম।
টিসিবি পণ্যের এক ক্রেতা সোহেল হোসেন বলেন, এখন বাইরে বের হওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকের কাছে কৈফিয়ত দিতে হয়। আর বিক্রয়ের স্থানে পুলিশের উপস্থিতি থাকায় কেউ চাইলেও বিশৃঙ্খলা করতে পারে না।
টিসিবি খুলনা আঞ্চলিক প্রধান মোঃ রবিউল মোর্শেদ বলেন, ট্রাক সেলের স্থানে মাইকিং, দাগ কাটা, গোল দেওয়া এমনকি টায়ার দিয়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ক্রেতারা না মানায় বর্তমানে বিক্রয়ের স্থানে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি থাকছে। প্রতিদিন গরমের তিব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেই ক্রেতারা আগে পন্য ক্রয়ের জন্য লাইনের জায়গা দখলে করতে পারে।