আগামী ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিতব্য খুলনার ৫টি উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে ভোট কেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষণিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাবের কঠোর নজরদারি দাবি করেছেন। এছাড়া ভোট কেন্দ্র দখলের হুমকি ও জীবনের নিরাপত্তাহীনতায়ও ভুগছেন কেউ কেউ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে লিখিত আবেদনও করেছেন কয়েকজন প্রার্থী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাইকগাছা উপজেলা সোলাদানা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম এনামুল হকের ওপর গত ২৭ মার্চ প্রতিপক্ষের হামলায় মারাত্মক জখম হয়েছিলেন। সুষ্ঠু নির্বাচনে জন্যে তার এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ অন্তত তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে নির্বাচন কমিশন বরাবর দরখাস্ত দিয়েছেন।
গদাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান গাজী জুনায়েদুর রহমান তার নির্বাচনী এলাকার পাঁচটি কেন্দ্র অতিঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে সার্বক্ষণিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত পুলিশ উপস্থিতির দাবি জানিয়েছেন। চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনিও। বুধবার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন তিনি। এর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও দরখাস্ত করেছেন তিনি।
তিনি জানিয়েছেন, গদাইপুর ইউনিয়নের পুরাইকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোপালপুর মানিকতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোয়ালিয়া হিতামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তকিয়া গোলাবাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গদাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কেন্দ্রগুলো ক্ষমতাসীন প্রার্থী দখলে নিয়ে ভোট কারচুপি করতে পারে বলে আশঙ্কা বর্তমান চেয়ারম্যান গাজী জুনায়েদুর রহমানের।
জেলা পুলিশ ও রিটার্নিং কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি কেন্দ্রে পাঁচজন অস্ত্রধারী পুলিশ, ১১ থেকে ১২ জন আনসার সদস্য, একজন গ্রাম পুলিশ আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব নিয়োজিত থাকবেন। প্রতিটি উপজেলায় চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ দায়িত্ব পালন করবেন। থানায় রিজার্ভ ফোর্স অবস্থান করবে, জরুরি প্রয়োজনে অতিরিক্ত ফোর্স পাঠানো হবে ঘটনাস্থলে। র্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও নৌপুলিশ কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন।
জেলা নির্বাচন অফিসারের দাপ্তরের সূত্র জানান, প্রথম ধাপে খুলনার ৩৪টি ইউনিয়নে ৩০৬টি কেন্দ্র রয়েছে। খুলনার এ পাঁচটি উপজেলার ৩৪ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ১৫৬ জন। ৩০৬টি ওয়ার্ডে মেম্বর প্রার্থী রয়েছেন এক হাজার ৪৮১ জন। সংরক্ষিত সদস্য পদে ৪৬৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। এবারে ইউনিয়নগুলোতে মোট ভোটার সংখ্যা ৬ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৬ জন ও নারী ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৩ জন।
খুলনা জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার এম মাজহারুল ইসলাম জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে ৫ জন পুলিশ, ১১ থেকে ১২জন আনসার-ভিডিপি দায়িত্ব পালন করবেন। উপজেলায় চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। তাছাড়া জরুরি প্রয়োজনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের ব্যবস্থা থাকবে।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহনের জন্য প্রস্তুতি চলছে। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও সাথে সাথে তা নিরসন করা হচ্ছে। তারপরও সার্বক্ষণিক তদারকি করছি।
খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি কেন্দ্র্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। জরুরি প্রয়োজনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হতে পারে। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না। বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে মাঠপর্যায়ে পুলিশ থাকবে ‘জিরোটলারেন্স’।
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যে খুলনার কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি, পাইকগাছার সোলাদানায়, দাকোপের পানখালী, দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি, বটিয়াঘাটা উপজেলার আমিরপুর ইউনিয়নের সৈয়দের মোড়ে সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রার্থীসহ অর্ধশতাধিক কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। নির্বাচনি সংহিসতায় একাধিক মামলাও হয়েছে।