চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃগত চার মাস ধরে অব্যাহতভাবে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। পাইকারী ব্যবসায়ীদের মতে ৩০ টাকা থেকে ৩০ দফা দাম বেড়ে বর্তমানে ১৯০ থেকে ২শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ। এদিকে পেঁয়াজের পর ভোজ্য তেল সয়াবিন ও চালের বাজারও হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠছে। চাল কেজি প্রতি ৫ টাকা ও সয়াবিন ৮ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের ডাবল সেঞ্চুরির পেছনে সুনির্দিষ্ট তিনটি কারণ উল্লেখ করলেও সয়াবিন ও চালের দাম বৃদ্ধির সঠিক উত্তর কেউ দিতে পারেনি। তবে অবিরত চলছে পাইকার ও মিলারদের উপর দায় চাপানো। কয়েকজন পাইকারী ব্যবসায়ী বলেছেন, উত্তর বঙ্গ থেকে আসা ও আমদানি করা উভয় চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে একের পর এক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ ভোক্তাদের উপর পড়েছে মরার উপর খাড়ার ঘা।
জেলা বাজার কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য মতে, গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর পাইকারী বাজারে ১৭৫ থেকে ১৮০ এবং খুচরা বাজারে ১৯০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। তবে পাইকারী ও খুচরা কয়েকটি বাজারে গিয়ে এর সত্যতা মেলেনি। ইতোমধ্যে বাজারে ২শ’ টাকায় কেজিতে ঠেকেছে পেঁয়াজ। গত চার মাস ধরে পেঁয়াজের মোট ৩০ বার দাম বেড়েছে। ৩০ টাকা থেকে শুরু করে কখনো ৫০, ৭০, ৯০, ১২০, ১৫০, ১৭০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ডাবল সেঞ্চুরি করেছে। নিউ মার্কেট মুদিপট্টিতে পেঁয়াজ ২শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সংশ্লি¬ষ্ট সূত্র দাবি করেছে, সুনির্দিষ্ট তিন কারণে খুলনায় পেয়াজের দামে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এর মধ্যে সরাসরি আমদানি না হওয়া, যে কোন মুহূর্তে ভারতীয় পেঁয়াজ আসবে এই ভয়ে খুলনার আমদানিকারকদের মিশর ও তুরস্কের দীর্ঘমেয়াদী আমদানি প্রক্রিয়ায় আগ্রহ না থাকা ও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পেঁয়াজ কেনায় অন্যান্য বিভাগীয় শহরের তুলনায় এখানে দাম বেশি। পাইকারী ব্যবসায়ী ও বাজার কর্মকর্তাদের মতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না হলে নতুন পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর চাপ পড়ছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা খুচরা গতকাল বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছে ৩২-৩৩ টাকা কেজি দরে। অথচ চারদিন আগেও এ চাল বিক্রি হয়েছে ২৯-৩০ টাকায়। মান ভেদে বালাম চাল সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা। ৩৬ টাকার বালাম গতকাল বিক্রি হয়েছে ৩৯ টাকায়, ৩৮ টাকার বালাম খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি ৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৪০-৪১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মিনিকেট চালের। ৪৪ টাকার মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৪৭ টাকায়, ৪৬ টাকার মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায় আর ৫২ টাকার মিনিকেট কেজি প্রতি ৪টা বৃদ্ধি পেয়ে ৫৬ টাকায় ঠেকেছে। পাইকাররা দাম বৃদ্ধির পেছনে মিলারদের কারসাজি দাবি করে বেশি দামে ক্রয়ের কথা বলছেন।
অপর দিকে বাজারে চালের অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি ও পেঁয়াজের ঝাঁঝ সামলাতে যখন মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে তখন ভোজ্য তেলের বাজারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। গত এক সপ্তাহে খোলা ও বোতলজাত সব ধরণের সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বোতলজাত সয়াবিনগুলোর বেশ কয়েকটি ব্রান্ড কেজি প্রতি ৫ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। আর খোলা বাজারে পামঅয়েল ও সয়াবিনের দামও ৩-৪ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন কোম্পানির এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ১১০ টাকা থেকে ১১৫ টাকা পর্যন্ত মূল্য নির্দ্ধারণ করা হয়েছে যা কোনটি এক সপ্তাহ ও কোনটি ১০ দিন আগেও সর্বোচ্চ ১০২ টাকা এমআরপি ছিলো।
কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৫-৭ টাকা ও পাম তেলের দাম ৫ টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজারভেদে এখন খোলা সয়াবিন ৯০ টাকা ও পাম তেল ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার। আল ফারুক মোড়ের খুচরা ব্যবসায়ী মোঃ মিজান বলেন, ভোজ্য তেলের দাম গত এক সপ্তাহে কেজি প্রতি বেড়েছে ৫ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত। বোতলজাত বেশিরভাগ কোম্পানি দাম বাড়ালেও যারা বাড়ায়নি তারাও ইঙ্গিত দিয়েছেন দাম বাড়ানোর। হঠাৎ নিত্য পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের।