ফকির শহিদুল ইসলামঃ ডিএমপির কমিশনারের করা বার্তা জরুরি সেবায় নিয়োজিত ভাড়াটিয়াদের বাড়ি ভাড়া বা হুমকি দিলে পুলিশে ফোন করার অনুরোধে রাজধানীতে কিছুটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ভাডাটিয়াদের মধ্যে । অপরদিকে দুদক চেয়ারম্যান ঘোষনা দিয়েছেন যে সকল বাড়িওলা এই দুর্ভোগের সময় ভাড়াটিয়াদের চাপ প্রয়োগ কবে তাদের বাড়ি তৈরির তথ্য সংগ্রহ করবে দুর্ণীতি দমন কমিশন । কিন্ত শিল্প নগরী খুলনার বিষয়ে এমন কোন নির্দেশনা বা প্রশাসন থেকে করা বার্তা না থাকায় খুলনায় প্রায় কয়েকলক্ষ কর্মহীন ভাডাটিয়াদের মধ্যে বাড়ীওয়ালাদের ঘর ভাডার চাপে নতুন দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন কর্মহীন ও নিন্ম আয়ের মানুষরা ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমের কাছে তিনি বলেন, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সংবাদকর্মী, ব্যাংকারসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত ভাড়াটিয়াদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হলে ডিএমপি পুলিশে ফোন করার অনুরোধ করেছেন ।
সেই সঙ্গে বাড়ির মালিকদের বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনা করতে বলেছেন। এই মূহুর্তে তারা যদি তাদের বাসস্থানের সুরক্ষা না পান-তাহলে করোনা প্রতিরোধে তাদের ভূমিকা ব্যাহত হবে। এরকম বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার হুমকির মুখে পড়েছেন নগরবাসী অনেকেই। বিশেষত যারা পেশাগত কাজে বাইরে যান সেই চিকিৎসক, সাংবাদিক, নার্স, ব্যাংকার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অনেকে।
অপরদিকে খুলনায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশের সকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান ব্যতীত সকল দোকান বন্ধ করা হয়েছে। আর এতে ভোগান্তিতে পড়ে নিম্নআয়ের মানুষেরা। পাশাপাশি করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন নিয়েছে সরকার। আর করোনা প্রতিরোধ যুদ্ধে মানুষ সামান্য খাদ্য সামগ্রীর জন্য ছুটছে নেতাদের দুয়ারে। ক্ষুধার যন্ত্রনায় অনেকে করছে রাস্তায় বিক্ষোভ। ডিএমপির কমিশনারের করা বার্তায় রাজধানীতে ভাডাটিয়াদের মধ্যে কিছুটা স্বস্থির নিঃশ্বাস । কিন্ত শিল্প নগরী খুলনার বিষয়ে এমন কোন নির্দেশনা বা প্রশাসন থেকে করা বার্তা না থাকায় খুলনায় প্রায় কয়েকলক্ষ কর্মহীন ভাডাটিয়াদের মধ্যে বাড়ীওয়ালাদের ঘর ভাডার চাপে নতুন দুর্ভোগরে স্বীকার হচ্ছেন কর্মহীনরা ।
এ পরিস্থিতিতে খুলনার বিভিন্ন এলাকার বাড়ীওয়ালাদের চাপে দিশেহারা কর্মহীন ভাড়াটিয়ারা। সরকার বলছে সাধারন মানুষদের সাথে মানবিক আচারন করুন এবং মানবিক সাহায্য করুন । কিন্ত কে শোনে কার কথা। মাস শেষ হয়েছে এখন পরিশোধ কর বাড়ি ভাড়া । আর এই বাড়ি ভাড়া পরিশোধে হিমসিম খাচ্ছে কর্মহীন,দিন মজুর,শ্রমিক ও নিন্ম,মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো । একদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে অন্যদিকে বাড়ীওয়ালাদের ঘর ভাড়া নিয়ে নতুন দুর্ভোগে পড়েছে খুলনা নগরবাসী।
পাটকল শ্রমিক আঃ আলী জানান,গত ২৬ মার্চ থেকে আমাদের পাটকল ছুটি ঘোষনা করে সরকার । আমাদের সাপ্তাহিক মজুরী বকেয়া রেখে হঠাৎ লকডাউন ঘোষনায় পরিবার পরিজন নিয়ে দুমূঠো ভাত খেতে পারিনা তার উপর বাড়িওলা চাপ দিচ্ছেন ঘর ভাড়ার জন্য । মিল বন্ধ মজুরী নাই কিভাবে যে ঘর ভাড়া পরিশোধ করবো সে চিন্তায় বুকফেটে কান্না আসে । সরকার বলছে ত্রান দিচ্ছে শ্রমিকদের বেতন দিচ্ছে অথচ আমরা অভাগা পাটকল শ্রমিকরা টাকা পয়সা ছাড়াই লকডাউনের কবলে পড়ছি । করোনায় আক্রান্তের চেয়েওপিতার সামনে সন্তানদের পেটের ক্ষুদার কান্না যন্ত্রনাদায়ক । পাশে থাকা আরেক শ্রমিক জানান,আমরা পাটকল শ্রমিকরা পরিবার পরিজন নিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে । আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে এ অবস্থা চলতে থাকলে এমনিই না খেয়ে মরে যাবো । না খেয়েই যদি মরতে হয় তাহলে লকডাওন উপেক্ষা করে পরিবার পরিজন নিয়ে শ্রমিকরা রাস্তায় না খেয়ে কোয়ান্টটাইন করবো ।
মার্চ মাস শেষ এপ্রিল মাস শুরু হতে না হতেই ভাড়ার টাকার জন্য জন্য চাপাচাপি শুরু করেছেন নগরীর ভবন/ফ্ল্যাট মালিকরা। এতে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে লাখ লাখ ভাড়াটিয়া। বাড়ি মালিকের ভয়ে অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নগরীর খালিশপুর ও দৌলতপুর এলাকায় ব্যাচালার ভাড়া থাকতেন সুমি ও ঝুমু (ছদ্ম নাম) নামে দু বোন। পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনী করে চলতেন তারা। করোনার প্রার্দুভাবে ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে তাদের সমস্ত টিউশনী। কিন্তু বাড়ি মালিক নাছোড় বান্দা, মাস শেষ হতে না হতেই ভাড়ার টাকার জন্য চাপাপাপি শুরু করেন। শুধু তাই নয় ভাড়ার জন্য অপমান শুরু করলে দুবোন পালিয়ে আশ্রয় নেন অন্য এলাকার মামার বাসায়।
শুধু এই নয় নগরীর মুজগুন্নি আ/এলাকায় ভাড়া বাসায় ফ্যামেলী নিয়ে বসবাস করেন এক এনজিও কর্মী। মাস শেষ হতে না হতেই ভাড়ার জন্য মালিকের চাপাচাপিতে চরম চিন্তাগ্রস্থ তিনি হতাশা প্রকাশ করেন প্রতিবেদকের কাছে। ওই ভাড়াটিয়া বলেন, ভাড়া মওকুফের দাবি ওঠায় বাড়িওয়ালা ভাড়া আদায়ের জন্য মাসের প্রথম দিন থেকেই চাপ দিচ্ছেন। বেতন পাওয়া অনিশ্চিত হওয়ায় ভাড়া পরিশোধ করা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন।
বাড়ি মালিকের ভাড়ার টাকার জন্য জন্য চাপাচাপি শুরু করেছেন খুলনা নগরীর ভবন/ফ্ল্যাট মালিকরা। এতে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক ভাড়াটিয়া পরিবার। মাসের অর্ধের শেষ হলেও অনেক এখনো ভাড়ার টাকা শোধ করতে পারেননি। বাড়ি মালিকের ভয়ে অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। করোনা ভাইরাসের ভয়ংকর থাবায় পুরো বিশ্ব যেখানে থমকে আছে, ঠিক সেই মুহূর্তে বাড়ি ভাড়ার চাপে দিশেহারা খুলনা নগরীর মধ্যবিত্ত, দিনমজুরসহ অনেক ভাড়াটিয়ারা। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ।
সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, বাইরে কেউ গেলে বাসার সদস্যরা আতঙ্কিত হবেন স্বাভাবিক। কিন্তু এই স্বাভাবিক আতঙ্ক থেকে এমন কোনও আচরণ করা যাবে না, যা কোনও ব্যক্তির জন্য কষ্টের ও অমানবিক হয়ে যায়।
বিশ্লেষকরা বলেন, দেশে মহামারী সৃষ্টি হলে মানবিক কারনে বাইরে থেকে এলে হাত ধুয়ে ভেতরে প্রবেশসহ সুরক্ষার বিষয়ে নিয়ম চালু করতে পারে। কিন্তু বাইরে যায় বলে বাসা ছেড়ে দিতে হবে, এমন ক্ষমতা তাদের দেওয়া হয়নি। তাদের বাসা থেকে চলে যাওয়ার যে চাপ দেওয়া হচ্ছে, সেটা ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইনে উপদেষ্টা কমিটিকে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তারা চাইলেই বাসাবাড়িতে যেসব হয়রানি হচ্ছে, সেসব বন্ধে একটি নির্দেশনা জারি করতে পারেন। তারা নির্দেশনা জারির পরেও যদি বাড়ি মালিকরা মানতে না চান, তখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও বিধান আইনে রয়েছে।