চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃসিডর ও আইলার পর বড় ধরণের দুর্যোগ রোববার আঘাত হেনেছে জেলার ২ লাখ ৯৭ হাজার মানুষের ওপর। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে ৪৮ হাজার পরিবার। ক্ষতিগ্রস্তদের পুণর্বাসনে জেলা প্রশাসন ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে। মাথাপিছু তিন টাকারও কম। চাল বরাদ্দ করলেও এখনো ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে তা পৌঁছায়নি। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত উনুন জ্বালাতে পারেনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।
সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়রা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা ও রূপসা উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ত্রাণ পুণর্বাসনের তথ্য মতে, ২ লাখ ৯৭ হাজার ৫শ’ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৩৭ হাজার ৮২০টি ঘর বাড়ি আংশিক ও ৯ হাজার ৪৫৫টি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষি সম্প্রসারণের হিসেব মতে, ২৫ হাজার হেক্টর জমির আমন ফসল পানির নিচে ছিল। সাড়ে ৮শ’ হেক্টর জমির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ত্রাণ পুণর্বাসনের সূত্র জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের পুণর্বাসনে কয়রা ও দাকোপ উপজেলায় আড়াই লাখ টাকা করে, পাইকগাছা উপজেলায় দেড় লাখ টাকা, বটিয়াঘাটা উপজেলায় এক লাখ টাকা এবং রূপসা উপজেলায় ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া রূপসা ও দাকোপ উপজেলায় ৫০ টন করে চাল, ৭শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার, পাইকগাছা উপজেলায় ২৫ মেট্টিক টন চাল, ২শ’ প্যাকেট খাবার, বটিয়াঘাটা উপজেলায় ২০ মেট্টিকটন চাল, ২শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার, রূপসা উপজেলায় ১৫ মেট্টিক টন চাল ও ১শ’ প্যাকেট খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে।
কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ূন কবির জানান, ইউনিয়নের জন্য ৮ মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে, এখানো বিতরণ করা হয়নি। ১শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। তিনি জানান, ১০ হাজার কাঁচা ঘর আংশিক ও ২০ হাজার সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিংড়ি চাষীরা বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখিন। তিনি বলেন, জিআর’র ৮ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হলেও তা উপজেলা প্রশাসনে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এত স্বল্প পরিমান অর্থ ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা সম্ভব নয় বলেও এই ইউপি চেয়ারম্যান জানান।
জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দ্দারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, জিআর’র টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। অপর সূত্র জানান, চাল এখনো পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে পৌঁছেনি। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আগামী সপ্তাহে চাল বিতরণ করা হবে।
চুকনগর প্রতিনিধি জানান, ঘুর্ণিঝড় বুলবুল এর আঘাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কুলবাড়িয়া, আধারমানিক, বরাতিয়া, বয়ারসিং, গেলাবদহ গ্রামের প্রায় চার শতাধিক নারী পুরুষ কুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেন। এ সংবাদ শুনে জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম তৎক্ষণাৎ সেখানে ছুটে যান এবং আশ্রয় ব্যক্তিদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন্। এ সময় তার সাথে ছিলেন আটলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, কুলবাড়িয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক লাভলু, নগেন্দ্রনাথ মন্ডল, আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান লিটন, এবাদুল বাশার লিটন, মনিরুল ইসলাম গাজী, রাসেল শেখ, সন্দীপ মন্ডল প্রমুখ।
খোলা আকাশের নীচে রাত যাপন:
কপিলমুনি প্রতিনিধি জানান, প্রচন্ড বেগে তেড়ে আসা ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে হাউলী পশ্চিম পাড়ার কয়েকটি পরিবার। বসত ঘরের চাল বিধ্বস্ত হয়ে খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নিয়েছে সালাউদ্দিনের পরিবার। এমতাবস্থায় সালাউদ্দিনের একমাত্র কন্যা ৯ম শ্রেণির ছাত্রী তানিয়ার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে পড়েছে। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ এ পরিবারটি এক প্রকার মানবেতর জীবনযাপন করছে।
সোমবার সরেজমিন ক্ষতিগ্রস্থ ঐ এলাকায় গিয়ে দেখাযায়, সালাউদ্দিনের দুটি ঘরই বিধ্বস্ত হয়েছে। মাটির সাথে মিশে গেছে সব কিছুই। ঘরের চাল উড়ে গিয়ে এক পার্শ্বে গাছে বেঁধে আটকে রয়েছে। দেড় কাঠা জায়গার উপর এ বাড়িটির অবকাঠামোর কোন অংশ অবশিষ্ট নেই। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নাছিমা বেগম এর বসতঘর, একই পাড়ার ফটিক সানার পুত্র মফিজুল, জলিল গাজীর পুত্র শাহিন গাজী, সেলিনা বেগম, ইনছার গাজীর পুত্র মারুফ গাজী, বাবর আলীর পুত্র অলিয়ার গাজী, রজবালীর পুত্র জসিমের বসত ঘর।
ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, তারা সরকারিভাবে কোন অনুদান পাননি। তাৎক্ষণিক ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য কোন ব্যবস্থা নেয়নি কেউ। এদিকে ৯ম শ্রেণিত পড়ুয়া স্কুল ছাত্রী তানিয়ার পড়ালেখা বন্ধ হতে বসেছে। খোলা আকাশের নীচে কোন রকম রাত কাটাচ্ছে পরিবারটি।