আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে খুলনার দৌলতপুর দেয়ানা ৪নং ওয়ার্ডে অবৈধভাবে একশত বছরের পুরাতন জলাশয় (পুকুর) ভরাট করছেন হারুন-অর-রশিদ নামের এক ব্যক্তি।
অভিযোগের পরিপেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তর বালু ভরাটের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধের নির্দেশ দিলেও কাউকেই তোয়াক্কা করছেন না তিনি। কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়ার পরও অধিক জনবল খাটিয়ে তোড়জোড় জলাশয় ভরাটের কাজ চলছে।
এ নিয়ে ক্ষুদ্ধ ভুক্তভোগীরা। জলাশয় রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে খুলনা জেলা প্রশাসক, সিটি কর্পোরেশন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা।
এছাড়া এ সংবাদ সংগ্রহ ও বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরের জলাশয় ভরাট বন্ধে আবেদন করায় দি নিউনেশন ও দৈনিক আমার সংবাদের খুলনা ব্যুরো প্রধান সিনিয়র সাংবাদিক মো: একরামুল কবিরকে রাম’দা নিয়ে ধাওয়া করে স্থানীয় দুর্বৃত্তরা। এই ব্যাপারে ২৩ নভেম্বর দৌলতপুর থানায় তিনি একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
জানা যায়, জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০-এর ৩৬ ধারায় বলা হয়েছে, কোন পুকুর, জলাশয়, খাল, লেক ভরাট করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনেও এ কাজ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খুলনার দৌলতপুর দেয়ানা মৌজার সাবেক -৯১৯ খতিয়ানের এখতিয়ার ভুক্ত ২৩৮৮ নং দাগ (পুকুর) ২৩৮৯ দাগ (ডাঙ্গা জমি) এর কিছু জমি মৃত শেখ ছেমমোতুল্লাহ এর পুত্র হারুন-অর-রশিদ তার মেয়ের নামে ক্রয় করে।
তবে একরামুল কবির লিখিত অভিযোগে বলেন, তার বাবা ঐ জমির পূর্বের অংশীদারদের বিরুদ্ধে বাটোয়ারা মামলা ২০/৯০ করে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রায় আমাদের পক্ষে আসার পরেও জমিটি বর্তমানে অবৈধ দখলদার হারুন অর-রশিদ আপোষে ছেড়ে না দেওয়ায় অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে উচ্ছেদ জারী মামলা ৩/১৫ রুজু করার পর বিবাদী এক পক্ষ উচ্চতর আদালত ঢাকা হাইকোর্টে মামলা করে হেরে যায়।
আমরা অবৈধ দখলদারদের ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ দিয়ে উচ্ছেদ করার জন্য আলাদতের নির্দেশে টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র আদেশের অপেক্ষায় আছে। উপরের বর্ণিত এই দুই দাগের জমি নিয়ে হারুন-অর-রশিদ একবার গোন্ডগোল করে নিজেই বিজ্ঞ খুলনা অতিরিক্ত ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৪৪/১৪৫ ধারায় একটি অভিযোগ করলে বিজ্ঞ আদালত নালিশী সম্পত্তিতে উভয় পক্ষকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন।
মামলাটি এখনও চলমান। তার প্রেক্ষিতে দৌলতপুর থানা থেকে গতবছরের ১ অক্টোবর উভয় পক্ষকে নোটিশের মাধ্যমে অবগত করেন। হারুন-অর-রশিদ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে এমপি ৩৬৯/২০০০ এ মামলা করে সে নিজেই শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে।
একরামুল কবির আরও বলেন, গত ২১ ননভেম্বর এ বিষয়ে খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করি। আমার অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিচালক মহোদয় একজন সহকারী পরিচালকে ঘটনাটি সরেজমিনে তদন্তের জন্য পাঠালে আমার অভিযোগটি সত্যতা পাওয়া পর তাদেরকে বালু ভরাটের কাজ সম্পূর্ন বন্ধের নির্দেশ দিলে পরের দিন ২২ নভেম্বর হারুন-অর-রশিদ আরো বেশি লোকজন নিয়োগ করে বালু ভরাট করা অবস্থায় আমি ২৩ নভেম্বর বেলা পৌনে ১২টায় হারুনকে মেশিন দিয়ে বালু ভরাটের কাজ বন্ধ রাখার জন্য বললে, তার ভাগ্নে সবুজ সহ ভাড়াটিয়া মাস্তান দিয়ে রাম’দা সহকারে আমাকে তাড়া করলে আমি প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসি।
ঘটনাস্থলে হারুন-অর-রশিদ ঘরের ভিতর থেকে তাদেরকে বলে ‘‘ধরে ওর হাত পা ভেঙ্গে দে, ওর এতো বড় সাহস আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। কি ধরনের সাংবাদিক হয়েছে বুঝাইয়া দে’’ ছবিতে যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে আমি একজনকে চিনি, সে হারুনের আত্মীয় দেয়ানার এবাদ মোড়লের পুত্র সবুজ।
তিনি আরও বলেন, আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের রাম দা সহ কয়েকটি ছবি ও ভিডিও করি। আমি তাদের ভয়ে সেখান দৌড়াইয়া প্রাণ বাঁচাই। তারা আমাকে হুমকি দিয়ে বলে তোকে যেখানে পাবো সেখানে সাংবাদিকতা করা, ছবি তোলা চিরদিনের জন্য ঘুচিয়ে দেব। তাদের এর হুমকির প্রেক্ষিতে আমি ও আমার পরিবারের সকলেই জীবনাশের ভয়ে শংঙ্কিত। যে কোন মুহুর্তে তারা আমাদের যে কোন ক্ষয়-ক্ষতি করতে পারে। এ ব্যাপারে সাংবাদিক একরামুল কবির পুলিশ কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ কবির হোসেন জানান, আমরা অভিযোগটি পেয়েছি এবং এ বিষয়ে তদন্তের জন্য একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।