অনলাইন ডেস্কঃখুলনা রেললাইনের দু’পাশে অবৈধ দখলদারের রাজত্ব চলছে দাপটের সাথে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের সাথে লিয়াজোঁ করেই বছরের পর বছর এসব দখলদার রেললাইনের দু’পাশের জমি ভোগ দখলে আছে। তবে প্রতি বছরই বড় অংকের আর্থিক সুবিধা পাচ্ছে রেলওয়ের কর্মকর্তারা। সম্প্রতি কয়েক দফা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে রেলের দু’পাশের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করলেও সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই তা আবারও স্ব স্ব অবস্থায় ফিরে গেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এদিকে চলতি বছরে মহানগরী খুলনা, রূপসা, ফুলতলা ও বাগেরহাট এলাকার রেললাইনের পার্শ্ববর্তী জমিতে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে খুলনাস্থ কানুনগো অফিস ম্যানেজ করেই দখলে রয়েছে অবৈধ দখলদাররা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, খুলনা রেলস্টেশন থেকে দক্ষিণে রূপসা-বাগেরহাট এবং উত্তরে ফুলতলা পর্যন্ত রেললাইনের দু’পাশের জমিতে দখলদার রয়েছে। যার সংখ্যা কয়েকশ’র মত। এর মধ্যে অনেকেই কৃষি জমির জন্য রেলওয়ের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে নির্মাণ করেছে বাড়ি-ঘর। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণীর দোকান, মার্কেট, বসতবাড়ি, মসজিদ, মন্দির, মাজার, স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামেই চলছে জমি দখলের রাজত্ব। বিশেষ করে ১৯৯৮ সালে রূপসা-বাগেরহাট রুটে রেললাইন চলাচল বন্ধ হওয়ার পর ঐ এলাকায় কৃষি জমির নামে লিজ নিয়ে বসতবাড়ি থেকে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। এসব দখলদারের সাথে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও রেলওয়ের কর্মকর্তারাও জড়িত রয়েছে। নগরীর রেলওয়ে হাসপাতাল রোড, বয়রা জংশন, দৌলতপুর বাজার, ফুলবাড়িগেট মোড় এলাকায় অবৈধ দখলদারদের পরিমাণ সব থেকে বেশি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রভাবশালীদের মাধ্যমে এসব অবৈধ দখলদাররা রেলওয়ের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
একটি সূত্র জানিয়েছেন, রেললাইনের দু’পাশে ২৫ ফুট পর্যন্ত কোন জমি ব্যবহার করার জন্য লিজ দেওয়া হয় না। কিন্তু খুলনার কানুনগো অফিসের অন্তর্ভুক্ত বাজারগুলোতে এই আইনের কোন তোয়াক্কাই করা হয় না। প্রকৃতপক্ষে বেশিরভাগ মানুষ রেলওয়ের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি লিজ করে আনার পর তার দুই থেকে তিন গুণ দখল করে আছে। রেলওয়ের কানুনগো অফিসকে ম্যানেজ করেই এসব কাজ করা হচ্ছে। তবে বিগত বছরেও রেললাইনের দু’পাশে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান করা হয়। তৎকালীন সময়ে বেশ কিছু অবৈধ দখলদারের স্থাপনাও ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই কানুনগো অফিস ম্যানেজ করে ফেলেন ঐ সকল অবৈধ দখলদাররা। তবে বেশ কিছু বড় মার্কেট ও স্থাপনা ভাঙতে রেলওয়ের কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিলেও অদৃশ্য কারণেই সেগুলো আর ভাঙ্গা হয়নি।
এদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে খুলনাস্থ কানুনগো অফিসের অন্তর্ভুক্ত রেলওয়ের জমি ব্যবহারকারীদের নবায়ন কার্যক্রম চলছে দ্রুত গতিতে। আগামী ৩০ জুন নবায়ন শেষ হবে। এই অর্থবছরে রেলের জমি বৈধভাবে ব্যবহারকারীদের নিকট থেকে রাজম্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে খুলনা রেলওয়ের কানুনগো মোঃ মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, রেল লাইনের দু’পাশে অবৈধ দখলদারের তালিকা আছে। লিজ নেওয়া জমির থেকে বেশি জমি দখলে আছে, তাদের নবায়ন করা হচ্ছে না। এটি যাচাই বাছাই করা হবে। তিনি আরও বলেন, জুন ক্লোজিংয়ের পর পুনরায় রেললাইনের দু’পাশের জমি উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে। তবে বিগত বছরের তুলনায় এই অর্থবছরে এই অঞ্চলে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।সুত্র-দৈনিক সময়ের খবর