এর্তেগুল রহমানঃআউটসোর্সিং নিয়োগের নামে ঠিকাদার নিয়োগকে কেন্দ্র করে খুলনায় চলছে ব্যাপক অর্থ বাণিজ্য। ইতোপূর্বে খুলনার সিভিল সার্জনের দপ্তরে যেমন ২১১ জন আউটসোর্সিং লোক নিয়োগের নামে কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে তেমনি সম্প্রতি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও চলছে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশল। যার অংশ হিসেবে দু’দফায় টেন্ডার দেয়া হলেও সিডিউল বিক্রি থেকে শুরু করে দাখিল ও বাছাই পর্যন্ত কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। আবার যেসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে টেন্ডার সিডিউল কেনা হয় তাদের অনেকেরই কাগজপত্র জাল-জালিয়াতি করে করা বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৪ ও ১৮ জুলাই খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা: এ.টি.এম.এম মোর্শেদ স্বাক্ষরিত টেন্ডার আহবানের মধ্যদিয়ে ৩০জন এবং ১০৭জন লোক নিয়োগের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপত্র আহবান করা হয়। প্রথম টেন্ডারে ১০জন নিরাপত্তা প্রহরী এবং ২০জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগের কথা উল্লেখ থাকলেও দ্বিতীয় টেন্ডারে জনবলের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসন-১, অধিশাখার ১৬ জুলাইয়ের ১০৫৫ নম্বর স্মারকের এক প্রশাসনিক অনুমোদনপত্রে দেখা যায়, সর্বমোট ১০৭টি পদে লোক নিয়োগ করা হবে ঠিকাদারের মাধ্যমে। এজন্য ২০ জুলাই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দরপত্র আহবান করা হয়।
গত ২১ জুলাই থেকে শুরু করে ১৮ জুলাই দুপুর একটা পর্যন্ত দরপত্র সিডিউল বিক্রির নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাত্র ১০টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিডিউল কিনতে পারে। তাছাড়া মাত্র একটি জায়গায় অর্থাৎ খুমেক হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তরেই কেবল সিডিউল বিক্রির স্থান নির্ধারণ করায় পুরোপুরি ওই দপ্তরেরই নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ প্রসঙ্গে একজন ঠিকাদার বলেন, তিনি দু’বার সিডিউল কিনতে গিয়েও পারেননি। আরিফ নামের এক ব্যক্তি নিজেকে পরিচালকের লোক দাবি করে তাকে সিডিউল কিনতে না দিয়ে পাঠিয়ে দেন। পরে ওই ঠিকাদার বিষয়টি পরিচালককে বললে তিনিও এটি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য বলেন বলে ওই ঠিকাদার জানান।
তাছাড়া যে ১০টি প্রতিষ্ঠান সিডিউল কেনে তাদের মধ্যেও কোন কোন প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রে জাল জালিয়াতি রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। যেসব প্রতিষ্ঠান সিডিউল কেনে সেগুলো হচ্ছে, ঢাকার স্বাধীন সিকিউরিটি সার্ভিসেস লি:, মাছরাঙ্গা সিকিউরিটি সার্ভিসেস লি:, এসএস হোল্ডিং কনষ্ট্রাকশন লি:, মোটিভ এন্টারপ্রাইজ লি:, কন্ট্রাক্ট ক্লিনিং সার্ভিসেস লি:, মেসার্স টিএম ইন্টারন্যাশনাল, জয়েন্ট ভে ার ইঞ্জিনিয়ারিং লি:, পাওয়ার সনিক লাইটিং, চট্টগ্রামের এসএস ট্রাভেলস লি: এবং খুলনার বয়রা সেন্ট্রাল রোডের আরিফ সিকিউরিটি সার্ভিস।
পরদিন(১৯আগষ্ট) সকাল নয়টা হতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দরপত্র সিডিউল দাখিল ও দুপুর সাড়ে ১২টায় খোলা হলে বিক্রিত সিডিউল থেকে মাত্র সাতটি জমা পড়ে বলে একটি সূত্র জানালেও কোন কোন প্রতিষ্ঠান দাখিল করেছে সেটি জানা যায়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ডা: এ,টি,এম,এম মোর্শেদের ০১৭১৫-৪৬৮১৮৪ নম্বর মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। হাসপাতালের ক্যাশিয়ার সিডিউল বিক্রির সাথে জড়িত থাকায় তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, পরিচালকের অনুমতি ছাড়া কোন তথ্য দেয়া নিষেধ।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) ডা: অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী মঙ্গলবার বিকেল চারটা ৫০মিনিটে বলেন, তিনি সদস্য না সদস্য সচিব কিছুই জানেন না। টেন্ডার সংক্রান্ত বিষয়েও তিনি কিছু জানেন না। তিনি এখনও কোন কাগজপত্র পাননি বলেও উল্লেখ করেন।
কমিটির সদস্য সহকারী অধ্যাপক(কার্ডিওলজী) ডা: মো: দেলোয়ার হোসেন বলেন, মঙ্গলবার সাতটি সিডিউল ওপেন করা হয়েছে বলে তিনি জানেন। তবে কোন প্রতিষ্ঠানের নাম জানেন না। হিসাব শাখা এ ব্যাপারে জ্ঞাত বলেও তিনি জানান। তবে হিসাব রক্ষক গোলাম কিবরিয়া বলেন, এ ব্যাপারে তার কাছে কোন তথ্য নেই।
অপরদিকে, খুলনার সিভিল সার্জনের আওতাধীন জেনারেল হাসপাতাল এবং নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সম্প্রতি ২১১জন লোক নিয়োগের মাত্র এক মাসের মাথায়ই নতুন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত ১৯ আগষ্টের এক পত্রে পরিচালক(অর্থ) ডা: খাজা আব্দুল গফুর স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ৪র্থ শ্রেণির আউটসোর্সিং কর্মচারীদের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য পুন:রায় সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে। অথচ ওই ২১১ জনের অধিকাংশের কাছ থেকেই মোটা অংকের অর্থ নেয়া হয়েছে বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।