বেল্লাল হোসেন সজল :: খুলনা জেলায় এবার ৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের বীজতলা ও ৭ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষাবাদ করা হয়েছে। তবে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ২ হাজার ৮০ হেক্টর বীজতলা ও ৩১৭ হেক্টর সবজির ক্ষেত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এর ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই টানা বৃষ্টি হয়েছে খুলনায়। ২৭ তারিখে ১৩ মিলি মিটার, ২৮ তারিখে ৩৩ মিলি মিটার, ২৯ তারিখে ২১ মিলি মিটার ও ৩০ তারিখে ৫০ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর এই টানা ৪ দিনের বৃষ্টিতে চলতি রোপা আমন মৌসুমে প্রায় ২ হাজার ৮০ হেক্টর জমির বীজতলা ও ৩১৭ হেক্টর সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে এবং ভেসে গেছে ছোট বড় সহস্রাধিক চিংড়িঘের। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামের ছোট ছোট রাস্তা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২ হাজার ৮০ হেক্টর রোপা আমনের বীজতলার মধ্যে ৯৩০ হেক্টর জমির বীজতলা সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১১ কোটি ৪৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২১ হাজার ৫০৮ জন কৃষক। এছাড়া ৩১৭ হেক্টরের মধ্যে ১৮ হেক্টর সবজির ক্ষেত সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ৬৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ৮৩৫ জন কৃষক।
এদিকে শ্রাবনের শেষ দিকে স্থানীয় কৃষকরা পরিমাণ মত আমন ধানের বীজ তলা বৃষ্টির আগেই মাঠে বপন করেছিল বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, চড়ামূল্যে আমন বীজ ক্রয় করে জমিতে ফেলে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদিকে নতুন করে বীজ কেনার কথা ভাবিয়ে তুলেছে কৃষকদের। জানা গেছে, চলতি রোপা আমন মৌসুমে কয়রা উপজেলায় প্রায় ৯০ হাজার বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান চাষের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন কৃষকরা। সেজন্য ৮ হাজার বিঘা জমিতে চাষীরা ব্রি-১০, ২৩, ৩০, ৬৭, ৫২, ৮৭,৭৬ ও ৪৯ সহ স্থানীয় জাতের কিছু ধান বীজ তলা হিসেবে জমিতে বপন করেছেন। কিন্তু ৪ দিনের বৃষ্টিতে প্রায় আশিভাগ বীজ তলা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চলতি মৌসুমে উক্ত বীজতলা দিয়ে জমি রোপন করা সম্ভব নয় বলে একাধিক কৃষক জানিয়েছেন। উপজেলার আমাদী ইউনিয়নে চিংড়ি ঘের না থাকায় সেখানে আমন ধান বর্ষার শুরুতেই চাষ শুরু হয় এবং রোপনের কাজও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। তবে অতিবৃষ্টিতে বীজতলা তলিয়ে যাওয়ায় মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে কৃষকরা।
কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ৪ দিনের টানা বৃষ্টির ফলে এ উপজেলার ৭০-৮০ শতাংশ বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩-৪ দিন পর বৃষ্টির পানি নেমে গেলে এবং সার ও কীটনাশক সঠিকভাবে ব্যবহার করলে তেমন সমস্যা হয়না। তবে মৎস্য চাষের এলাকা হওয়ার কারণে বিভিন্নস্থানে বাধ দেয়ার ফলে পানি নামার জায়গা পাচ্ছে না। আমরা কৃষককে পরামর্শ দিয়েছি, তাদের বাড়িতে থাকা বাড়তি বীজগুলো দিয়ে নতুন করে অল্প জমিতে বীজতলা তৈরি করতে। যাতে পানি সরে গেলে ফসলী জমি ফাঁকা পরে না থাকে। যেহেতু শীত মৌসুমে এখানে ধান চাষ কম হয়, তাই পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকে প্রয়োজনে চারা কিনে হলেও জমিতে রোপন করে। যাতে করে ক্ষতির পরিমাণ কিছু হলেও কমে।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য অন্যান্য উপজেলায় অতিরিক্ত কিছু বীজতলা করা হয়েছে। যা কয়রা ও দাকোপ উপজেলায় যদি আমরা সরবরাহ করতে পারি, তাহলে তারা কিছুটা হলেও লাভবান হবে। আর একটি উপায় হতে পারে, যে সকল ধান দেরিতে বপন করা যায় যেমন ব্রি-২২,২৩ এই ধরনের ধানের বীজগুলো যদি আমরা সরবরাহ করতে পারি তবে নতুন করে বীজতলা করে ধান চাষের মাধ্যমে কৃষকেরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।