খুলনা অফিসঃওজোপাডিকোর দুর্নীতি-অনিয়ম ও প্রিপেইড মিটারের তুঘলকি কারবারের বিরুদ্ধে ফুসে ওঠা খুলনার গণআন্দোলন ঠেকাতে এবার এক ছাত্রলীগ নেতাকে মাঠে নামানো হয়েছে। জানা গেছে, সদ্য বিবাহিত ওই ছাত্রনেতা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা। আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি কিছু সাংবাদিককেও এবার ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে ওই ছাত্র নেতার তদ্বিরে কয়েকটি পত্রিকায় বন্ধের দিনে করা ওজোপাডিকোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানের ছবি ও নিউজও ছাপা হয়েছে। খুলনাঞ্চলের মানুষের এ আন্দোলনের মধ্যে হঠাৎ করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানের বিষয়টি হাস্যকর হলেও আন্দোলনকারীদের বক্তব্য অনুযায়ী ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো: শফিক উদ্দিন যে বন্ধের দিনেই খুলনায় অফিস করেন আর বাকী সময় ঢাকায় অবস্থান করেন সেটিই প্রমাণিত হয়েছে। বিষয়টি খুলনার সচেতন মহলে ওপেন সিক্রেট।
আর বন্ধের দিনে এমডির খুলনায় অবস্থানের ফলে স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সপ্তাহের সাত দিনই অফিস করতে হলেও এমডির করতে হচ্ছে মাত্র দু’দিন। কেননা, শুক্র-শনিবার সরকারি ছুটি থাকলেও শুধুমাত্র এমডির অবস্থানের কারণে যেমন সদর দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস করতে হয় তেমনি বাকী পাঁচদিন এমনিতেই অফিস করা লাগে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, সম্প্রতি এক সাংবাদিকের মেয়েকে বিয়ে করা এক ছাত্রনেতাকে নিয়ে কোন এক হোটেলে বৈঠক করেছেন ওজোপাডিকোর কোম্পানি সচিব আবদুল মোতালেব। জনশ্রুতি আছে, ওই বৈঠকে মোটা অংকের লেনদেন হয়েছে। বিশাল এক অর্থ বাণিজ্য নিয়ে ওই ছাত্রনেতা এখন মাঠে। প্রকৃতপক্ষে খুলনা সরকারি আযম খান কমার্স কলেজের ওই ছাত্রনেতার সাথে গুটি কয়েক নেতার সাথে বিশেষ কারণে সম্পর্ক থাকায় তার মাধ্যমেই ম্যানেজিং কাজটি সহজ হবে এমনটি ভেবে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন ওজোপাডিকোর কোম্পানি সচিব।
কেননা এমডিকে রক্ষার চেয়ে এখন এ আন্দোলন ঠেকানো সচিবের জন্যই বিশাল এক চ্যালেঞ্জ। এমডি ও সচিবের অপকর্মে সহায়তা করে ওজোপাডিকোর হরিলুটের অংশিদার হয়েছেন এমন কর্মকর্তারা রয়েছেন আন্দোলন ও দুদক আতংকে । সংঙ্গত কারনে আন্দোলনের ফলে নিজেদের জ্ঞাত আয় বহিভুত সম্পদের তথ্য দুদকরে কাছে ফাঁস হওয়ার আশংকায় রয়েছেন । এরা হলেন নির্বাহী পরিচালক(প্রকৌশল) মোঃ হাছান আলী তালুকদার,নির্বাহী পরিচালক(অর্থ) রতন কুমার দেবনাথ, উপ-মহাব্যস্থাপক (অর্থ) মোকলেছুর রহমান,উপ-মহাব্যস্থাপক (হিসাব)এ এন এম মোস্তাফিজুর রহমান,প্রিপেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ফর খুলনা সিটি ফেজ-১, ওজোপাডিকো,খুলন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মাহাঃ তোফাজ্জেল হোসেন ,সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম,আপগ্রেডেশন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোঃ আবু হাসান,বিদ্যুৎ বিতরন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরন প্রকল্পেরপ্রকল্প পরিচালক মোঃ আব্দুল মজিদসহ এই চারটি প্রকল্পের হিসাব রক্ষন কর্মকর্তারা রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ফুসে ওঠা খুলনার গণআন্দোলন ঠেকাতে । এরা যে যার অবস্থান থেকে চলমান পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে একটি সূত্র জানায় । অন্যান্ন জেলায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে যাতে করে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সংবাদ নয় পরিছন্ন অভিয়ানের সংবাদগুলো সংশ্লিষ্ঠ এলাকায় প্রচার পায় । এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ খরচ করতে যেন তারা পিচপা না হন ।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রি পেইড মিটার বিরোধী এ আন্দোলনের মাধ্যমে যে দুর্নীতিগুলো বেরিয়ে আসছে তার মধ্যে ওজোপাডিকোর সচিবও এড়িয়ে যেতে পারছেন না। বিশেষ করে পরিবারসহ তার সাম্প্রতিক ভারত সফরকে কেন্দ্র করেই যে দুর্নীতি হয়েছে সেটিকে ঢাকা দেয়াটাই জরুরি বলেও সচিব মনে করছেন বলে অনেকে জানান। তাছাড়া কোম্পানি সচিবের ২৮ লাখ টাকা মূল্যের গাড়ি ব্যবহার, ওই গাড়িতেই তার ভাইকে কাজ নাই মজুরি নাই(কানামনা)’র চাকরী দেয়া, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ না হয়েও একাধিকবার বিদেশ সফর ইত্যাদি বিষয়ও বের হয়ে আসছে। অন্যদিকে, তারা নিজেরাও দাবি করেছেন, আন্দোলন সব কিছুই তারা ম্যানেজ করতে পারবেন।
পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে কোম্পানীর রেষ্ট হাউজ ব্যবহার করে দীর্ঘ প্রায় ছয়মাস টাকা না দেয়া, বিদ্যুৎ ভবন মসজিদের ডাব ঢাকাস্থ নিজ বাড়িতে নেয়া, চায়নার হেক্সিং কোম্পানীর সাথে গোপন সম্পর্ক গড়ে তোলা, বরিশাল-ঝালকাঠিসহ বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত উপকেন্দ্রগুলো মান সম্মত না হওয়ায় বন্ধ থাকা ইত্যাদি নানা অভিযোগও প্রকাশ হচ্ছে। এ অবস্থায় আন্দোলন ও পত্র-পত্রিকার লেখা বন্ধ করাই এখন ওজোপাডিকোর গুটি কয়েক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার মূল লক্ষ্য। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নেই প্রথমে একজন দল পাল্টানো শ্রমিক নেতাকে দিয়ে এবং সর্বশেষ ওই ছাত্রনেতাকে কাজে লাগানো হচ্ছে।