খুলনা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির আগস্ট মাসের সভা আজ (রবিবার) সকালে জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদারের সভাপতিত্বে তাঁর সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, সময়ের সাথে অপরাধের ধরণ বদলাচ্ছে। জেলায় মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আটটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে এবং এই কাজে জড়িতদের আটক করা হয়েছে। মোবাইলের মাধ্যমে জুয়াখেলা প্রতিরোধে পুলিশ কাজ করছে। নতুন প্রজন্মের তরুণ ও যুবকদের অনলাইন আসক্তি বন্ধে স্কুল-কলেজে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও খেলাধুলার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের খুলনা জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান জানান, তাঁর দপ্তর গত জুলাই মাসে জেলায় ২২৮টি অভিযান পরিচালনা করে ৩৫টি মামলা দায়ের করে। একই সময়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ ২৫৮টি অভিযান ও জেলা পুলিশ ১৭১টি অভিযান পরিচালনা করে। তিন সংস্থা মিলে ২৭ কেজি গাঁজা, চার হাজার ছয়শত ৬৬ পিস ইয়াবা, ৫০ বোতল ফেন্সিডিলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সেমিনার ও স্কুল-কলেজে মোটিভেশনাল কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী ও বিআরটিএ এর সমন্বয়ে সড়ক-মহাসড়কে লাইসেন্সবিহীন যানবাহন ও চালকের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। খুলনা বিআরটিএ এর অধীন ৩৮ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড প্রিন্টিং প্রক্রিয়াধীন রয়েছে যা আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যায়।
সভায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা খুলনার ব্যুরো প্রধান এসএম জাহিদ হোসেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চালানোর অনুরোধ জানান। একই সাথে তিনি সমগ্র জেলায় কিশোর গ্যাং এর অপতৎপরতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানান।
সভাপতির বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক বলেন, গত মাসে জেলায় মাদকের বিরুদ্ধে তিনটি বড় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। মাদক সংশ্লিষ্ট মামলা দ্রুত নিস্পত্তির জন্য মামলার সাক্ষীদের নিয়মিত কোর্টে হাজিরা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যান্য অপরাধের তুলনায় সমাজে মাদক এবং নারী-শিশু নির্যাতন সংশ্লিষ্ট অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে। কিশোর গ্যাং এর বিস্তার সমাজের জন্য শঙ্কার বিষয় হয়ে উঠেছে। বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর ফলে হর-হামেশা দূর্ঘটনা ঘটেছে। জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, এনজিও
প্রতিনিধি ও প্রশাসনের ব্যক্তিদের নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পুলক কুমার মন্ডল সভায় বিগত মাসে খুলনা জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরেন। খুলনা জেলা অধিক্ষেত্রে বিগত জুলাই মাসে ডাকাতি ০১টি, চুরি ০৬টি, খুন ০২টি, অস্ত্র আইন ০২টি, ধর্ষণ ০২টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৫টি, নারী ও শিশু পাচার ০২টি, মাদকদ্রব্য ৬১ টি এবং অন্যান্য ৯৫টিসহ মোট একশত ৮৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যা বিগত জুন মাসে দায়ের হওয়া মামলার চেয়ে ০১টি কম। খুলনা মহানগরী অধিক্ষেত্রে জুলাই মাসে চুরি ১২টি, খুন ০২টি, দ্রুত বিচার ০১টি, ধর্ষণ ০৩টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১১টি, মাদকদ্রব্য ৭১টি এবং অন্যান্য ২০টিসহ মোট একশত ২২ টি মামলা দায়ে করা হয়েছে। যা বিগত জুন মাসে দায়ের হওয়া মামলার চেয়ে ২২টি কম।
সভায় জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ হারুনুর রশীদ, সিভিল সার্জন ডাঃ সুজাত আহমেদ, প্রেসক্লাবের সভাপতি এসএম নজরুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা অংশ গ্রহণ করেন।