চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃখুলনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসছেন কে; সে আলোচনা এখন সর্বত্র। জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ দুটিকে টার্গেট করে জেলা জুড়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে অন্তত একডজন নেতা। জেলার কোথাও সভা-সমাবেশের ডাক পেলেই সেখানে যাচ্ছেন পদপ্রত্যাশীরা। কারণ তৃণমূলের ভোটেই নির্ধারণ হবে তাদের ভাগ্য। এই দৌড়ে তালিকায় রয়েছেন সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিরা।
দলীয় সূত্র জানায়, জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে। ওই সম্মেলনে শেখ হারুনুর রশীদকে সভাপতি ও এস এম মোস্তফা রশিদী সুজাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এর ৯ মাস পর কেন্দ্র থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। তিন বছর মেয়াদী কমিটির মেয়াদ শেষ হবার আগেই জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই মারা যান। তারপর থেকে সাধারণ সম্পাদকের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করছেন দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুজিত অধিকারী।
সূত্রটি আরও জানায়, কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর চলতি বছরের মে মাসে নগরীর ইউনাইটেড ক্লাবে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে নগর জেলা শাখার বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতারা সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলা ও নগরীর সম্মেলন শেষ করার তাগিদ দেন। এরপর থেকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেন জেলার ১০/১২ জন নেতা। এই লক্ষ্যে কাজও শুরু হয়। তালিকাও করার কাজ শুরু হয়। কিন্তু জেলা সভাপতি পবিত্র হজ্ব পালন করতে যাওয়ায় কাজ অনেকটা শিথিল হয়ে যায়।
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট ফরিদ আহমেদ জানান, জেলার সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছে। ওয়ার্ড পর্যায়ে সদস্য ফরম দেয়ার জন্য তালিকা করার কাজ চলছে। প্রতি ওয়ার্ড থেকে দুইশত জন করে নেয়া হবে। এরপর ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তারপর জেলার সম্মেলন।
তবে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্মেলন সম্ভব নয় বলে তিনি জানান। এদিকে সম্মেলন কবে হবে সেই আশায় বসে থাকতে নারাজ পদ প্রত্যাশীরা। তারা তাদের কাজ অনেক আগেই শুরু করেছেন।
এবারের সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ প্রত্যাশীরা হলেন বর্তমান সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ, বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি এডভোকেট এমএম মুজিবর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোল্লা জালাল উদ্দিন, জাতীয় সংসদের হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস ও সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। যারা সকলেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবীণ। তাদের মধ্য থেকে বর্তমান সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদের সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনা এবারও রয়েছে।
সাধারণ সম্পাদকের পদের প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুজিত অধিকারী, যুগ্ম-সম্পাদক সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল, আকতারুজ্জামান বাবু এমপি ও সাবেক ছাত্রনেতা অসিত বরণ বিশ্বাস।
এদের মধ্য থেকে দু-একজনের ব্যাপারে জোরালো তথ্য পাওয়া গেছে। তবে শেষ মুহুর্তে কে হতে যাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের আগামী দিনের কর্ণধার; তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে সম্মেলন পর্যন্ত। শেষ সময়ে ‘চমক’ দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটিতে নেই এমন কেউ সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুজিত অধিকারী বলেন, ‘রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত থেকেছি। জেলা আওয়ামী লীগের অনেক পদেই আমি থেকেছি। রাজপথে থেকে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। দল যদি বিবেচনা করে আমাকে সাধারণ সম্পাদক করে তাহলে দলের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবো।
সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল বলেন, ‘আমি ১৯৮৮ সাল থেকে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। জেলা ছাত্রলীগের একাধিক পদে দায়িত্ব পালন করেছি। দীর্ঘদিন ধরে জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছি। বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছি। সামাজিক অনেক সংগঠনের সাথেও জড়িত আছি। তাই আমি মনে করি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পেলে আমি দলকে আরও বেশী বেগবান করতে সক্ষম হবো।’
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা অসিত বরণ বিশ্বাস বলেন, ‘আমি ১৯৮৯ সাল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত, ১৯৯৮ সালে জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নির্বাচিত হই, ২০০০ সালে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হই। ২০০২ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হলে জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন দিয়ে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হই। এরপর ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরশাদ এবং খালেদা বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে থেকে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছি। ছাত্রলীগের দায়িত্ব ছাড়ার দীর্ঘদিন পদবঞ্চিত রয়েছি। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি থমকে দাঁড়িয়েছে। এই মুহুর্তে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব দরকার। তিনি মনে করেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে সংগঠনকে আরও সুসংগঠিত করতে পারবেন।