চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃকারারুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে যখন সর্বস্তরের নেতা-কর্মী উদগ্রিব, তখনি খুলনা জেলা বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ প্রকাশ পেয়েছে। গত ২ ডিসেম্বর এক অংশের সভায় বর্তমান কমিটি ভেঙে নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে। দলের দুঃসময়ে এ ধরনের দ্বিধা-বিভক্তিকে সরকারের এজেন্ডা বলে মন্তব্য করছেন জেলা বিএনপি’র সভাপতি শফিকুল আলম মনা।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, এড. এস এম শফিকুল আলম মনাকে সভাপতি ও আমীর এজাজ খানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্র“য়ারি খুলনা জেলা বিএনপি’র ২৯ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই রাতে সভাপতির বাড়ির সামনে মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে দলের কতিপয় ব্যক্তি। ওই গ্র“পটি বিএনপি’র একজন কেন্দ্রীয় নেতার অনুসারি হিসেবে খ্যাত বলে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান। এদিকে, আংশিক কমিটি ঘোষণার পরদিন ১৪ ফেব্র“য়ারি নতুন ঘোষিত জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদককে অপসারণের দাবিতে দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে কুশপুত্তলিকা দাহ করে ওই অংশের নেতা-কর্মীরা। সেই বছরের ৬ ডিসেম্বর ১৮১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর একত্রেই পালিত হচ্ছিল কেন্দ্র ও স্থানীয় কর্মসূচি। এরপর জেলা মৎস্যজীবী দলের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ওই গ্র“পটি পুনরায় পৃথক কর্মসূচি পালন শুরু করে। জেলা বিএনপি’র শীর্ষ নেতাকে পাশ কাটিয়ে জাতীয়তাবাদী ওলামা দল, জাসাস, ও মহিলা দলের কমিটি অনুমোদন করিয়ে নিয়ে আসে ক্ষুব্ধ গ্র“পটি। এ গ্র“পের নেতৃত্বে আছেন জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল হাসান বাপ্পী।
গত ২৯ অক্টোবর নগরীর কেডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ে জেলা বিএনপি’র বর্ধিত সভায় তিনি অভিযোগ করেন, ‘দলের এখন পদ-পদবী বিক্রির লিমিটেড ফার্মে পরিণত হয়েছে। কতিপয় বুদ্ধিজীবীর পরামর্শে জেলা বিএনপিকে কুক্ষিগত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করে তিনি ওই কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের দাবি জানান।’
একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জেলা ও মহানগর একত্রে কর্মসূচি পালন করুক এটা ওই গ্র“পটি চায় না।’ আবার পাল্টা যুক্তি দিয়ে তারা বলছেন, ‘দু’টি পৃথক ইউনিট আলাদাভাবে সাংগঠনিক, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কর্মসূচি পালন করতেই পারে। তাতে দল আরও গতিশীল ও শক্তিশালী হবে।’ সর্বশেষ, গত ২ ডিসেম্বর জেলা বিএনপি’র একাংশ ও অঙ্গসংগঠনের যৌথসভা থেকে বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
এসব বিষয়ে জেলা বিএনপি’র সভাপতি এড. শফিকুল আলম মনা বলেন, “ওরা জেলা বিএনপি’র নামে মিটিং ডাকছে, দলের গঠনতন্ত্রে কোথাও জেলা বিএনপির সভা আহ্বানের এখতিয়ার সাংগঠনিক সম্পাদকের নাই। ওই মিটিংয়ে জেলা বিএনপি’র মাত্র তিন/চারজন ছিল, অথচ ১৮১ সদস্যের কমিটি ছাড়াও থানা ও পৌরসভা ইউনিটের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক তো আছেনই। ওই সভায় জুলু, বাপ্পী, লাভলু ও আজগর ছাড়া বাকি সকলেই অঙ্গসংগঠনের। গত ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিন যুবদলের ও শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতির নেতৃত্বে একটা মিছিল নিয়ে এসেছিল, তখন ওরাই অভিযোগ করেছিল, যে সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক ছাড়া মিছিল আনা বা মিটিং ডাকা যায় না। তাহলে ওরা মিটিং ডাকলো কোন হিসেবে? এটা হলো বিশেষ মহলের নির্দেশে তারা এগুলো করছে। যেখানে কারারুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করা যায়, দেশের গণতন্ত্র পুনুরুদ্ধার করা যায় সেই প্রচেষ্টা সকলের। বিপরীত দিকে ওরা দলকে বিভক্ত করছে। এর পেছনে সরকারের মদদ আছে বলে আমরা মনে করি।