চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃখুলনা জেলা যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০০৩ সালের ২৫ মে। ওই সম্মেলনে কামরুজ্জামান জামাল সভাপতি ও আকতারুজ্জামান বাবুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর এই দুই নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ফলে চার বছর ধরে অভিভাবক ছাড়াই চলছে সংগঠনটি। দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়া এবং শীর্ষ দুই পদ শূন্য থাকায় এক প্রকার ঝিমিয়ে পড়ে সব কার্যক্রম। গত সোমবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত সভায় সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্মেলন আয়োজন করতে কেন্দ্র থেকে স্থানীয় নেতাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব শূন্যতায় থাকা সংগঠনটির সম্মেলন হওয়ার খবরে ইতোমধ্যে জোরেসোরে মাঠে নেমেছেন নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা। দীর্ঘদিন দলের হাল ধরে থাকা ত্যাগী নেতারা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা মুখিয়ে আছেন নেতৃত্বে আসার জন্য।
এবারের সম্মেলনে দলের নেতৃত্বে আসতে আলোচনায় আছেন বেশ কয়েকজন প্রার্থী। এরা হলেন- জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ মো. আবু হানিফ, জেলা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সরদার জাকির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম কামরুজ্জামান, দপ্তর সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিয়াজ, প্রচার সম্পাদক জলিল তালুকদার, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা চৌধুরী রায়হান ফরিদ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হারুনার রশিদ, মাহফুজুর রহমান সোহাগ, আশরাফুল আলম কচি ও বিধান চন্দ্র রায়।
পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে শেখ মো. আবু হানিফ দলের দুর্দিনে খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক পদে ছিলেন। এবারের সম্মেলনে সভাপতি পদের জন্য বেশ আলোচনায় রয়েছেন দীর্ঘদিন পদবঞ্চিত থাকা সাবেক এ ছাত্রনেতা।এবিএম কামরুজ্জামান জেলা যুবলীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক। এর আগে রূপসা থানা ছাত্রলীগ ও বঙ্গবন্ধু কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
আসাদুজ্জামান রিয়াজ জেলা যুবলীগের বর্তমান দপ্তর সম্পাদক। এর আগে তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে)’র অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।চৌধুরী রায়হান ফরিদ জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য। এর আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক, সুন্দরবন কলেজ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।হারুন আর রশিদ খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলেন। এরপর ২০০০-২০১১ পর্যন্ত সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘদিন কোন পদে না থাকলেও জেলা যুবলীগের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন রাজপথে।মাহফুজুর রহমান সোহাগ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এর আগে খুলনা সদর থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। এবারের সম্মেলনে নতুনদের মধ্যে নেতৃত্বে আসতে আলোচনায় রয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে সাবেক ছাত্রনেতা শেখ মো. আবু হানিফ বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ে আমি জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছি। রাজপথে থেকে ওই সময়ে দলকে সাধ্যমতো সংগঠিত করেছি। তিনি বলেন, দক্ষিণবঙ্গের রাজনীতির নীতি-নির্ধারক শেখ হেলালসহ শেখ পরিবার ও সিনিয়র নেতারা যদি চান তবে আমি সভাপতি পদে লড়তে আগ্রহী।
জেলা যুবলীগের বর্তমান দপ্তর সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিয়াজ বলেন, ‘শীর্ষ দুই পদ শূন্য হওয়ার পর আমরা কয়েকজন লোক যুবলীগের হাল ধরে রেখেছি। তিনি মনে করেন, যারা দীর্ঘদিন যুবলীগের সাথে রয়েছেন তারাই শীর্ষ পদে আসবেন। ২৯৬ জন কাউন্সিলর ভোটের মাধ্যমে যোগ্যদের নেতা নির্বাচিত করবেন। এবারের নির্বাচনে তিনি নিজেকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বলে দাবি করেন।’
সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ও জেলা পরিষদ সদস্য চৌধুরী রায়হান ফরিদ বলেন, ‘আমি অনেকদিন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয় ছিলাম। খুলনা দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে থেকে রাজনীতি করছি তবে কোন পদে আসিনি। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা ও নীতি-নির্ধারকরা আমাকে যে পদে দেখতে চান আমি সেই পদেই আগ্রহী।’
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হারুন আর রশিদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় বর্তমান কমিটির সকলে প্রায় নিষ্ক্রিয়। আমি ছাত্রলীগ থাকায় অবস্থায় যুবলীগের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছি। বর্তমানেও অংশ নিচ্ছেন। আসন্ন সম্মেলনে সাবেক ছাত্রনেতাদের মূল্যায়ন করলে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে যোগ্য বলে দাবি করেন।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও জেলা যুবলীগের সদস্য মাহফুজুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন খুলনার রাজপথে থেকে ছাত্রলীগের সকল কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছে। বর্তমানে যুবলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এবারের সম্মেলনে সাবেক ছাত্রনেতাদের মূল্যায়ন করলে তিনি পদ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।’
সম্মেলনের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুবলীগের বিদায়ী সভাপতি মো. কামরুজ্জামান জামাল বলেন, ‘জেলা যুবলীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি সম্পন্ন। এখন দক্ষিণবঙ্গের রাজনীতির অভিভাবক শেখ হেলাল, জেলা আ’লীগ সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ ও শেখ সোহেলসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সময় দিলেই সম্মেলনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে।