চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃখুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড’র অধিন নড়াইলের কালিয়ায় ২ বছর বন্ধ থাকার পর আঠারোবাকি নদীর ৩ কিলোমিটার জায়গার পুনঃখনন কাজ পুনরায় শুরু হয়েছে। নড়াইল ও বাগেরহাট জেলার সীমান্তবর্তী আঠারোবাকি নদীর সীমানা বিরোধ আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ২০১৬ সালে নদী পুনঃখনন কাজ স্থগিত হয়। সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় গত শুক্রবার অবশিষ্ট ৩ কিলোমিটার অংশে পুনঃখনন কাজ শুরু হয়েছে। নড়াইলের কালিয়া উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত আঠারোবেকি নদীর ওপর ভরসা করে এক সময় কৃষকরা ফসল ফলাতো। সময়ের বিবর্তনে সেই নদী আস্তে আস্তে ভরাট হয়ে যায়। স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে যায় নদী পাড়ের জায়গা। ফলে নদী পাড়ের হাজার হাজার কৃষক চরম হতাশায় পড়েন। নদীটি পুনঃখননের ফলে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাবে ৪৩ হাজার হেক্টর ফসলী জমি।
২০১৬ সালে পুনঃখনন কর্মসূচির আওতায় নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে এনে মৎস্য, জলাশয় ও কৃষি জমিতে সেচ সহায়তা বৃদ্ধিসহ নানা সমস্যা দূরীকরণে ভরাট হয়ে যাওয়া আঠারোবাকি নদীর ৫৭ কিলোমিটার অংশের কাজ শুরু হয়ে সীমানা বিরোধের কারণে সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ৫মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা সফরকালে এই অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসন, মিঠাপানির অভাব ও কৃষি ক্ষেত্রে লবন পানির সমস্যা দূরীকরনে নাব্যতা সংকটে ভরাট হয়ে যাওয়া আঠারোবাকি নদী পুনঃখননের প্রতিশ্রুতি দেন। ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর একনেক’র বৈঠকে আঠারোবাকি নদীর পুনঃখনন প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয়।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড’র অধিন ভূতিয়ার বিল এবং বড়নাল-সলিমপুর-কোলাবাসুখালী বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন প্রকল্পের আওতায় ২শ’ ৮১ কোটি ৯০ লাখ ১৬ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দ নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ ডিজেল প্লান্ট (বিডিপি) লিমিটেড ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড যৌথ ভাবে ২০১৬ সালের ২৩ জানুয়ারী নদীটির ৫৭ কিলোমিটার অংশের পুনঃখনন কাজ শুরু করেন। খনন কাজ শুরুর পর স্থান নির্ধারণ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে নড়াইল ও বাগেরহাট জেলার সীমানা সংক্রান্ত মতবিরোধ দেখা দেয়। মতবিরোধের কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষএ নদীর ৩ কিলোমিটার অংশের খনন কাজ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখেন।
২ বছরেরও বেশী সময় নদীর ওই অংশের কাজ বন্ধ থাকার পর গত ১৪ অক্টোবর কালিয়া উপজেলা প্রশাসন, বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যৌথ পরিমাপের মাধ্যমে দুই জেলার সীমানাসহ আঠারোবাকি নদীর প্রকৃত স্থান নির্ধারনের মাধ্যমে দু’জেলার বাসিন্দাদের মতবিরোধের নিষ্পত্তি করেন। এরপর গতকাল শনিবার সকাল থেকে ওই ৩ কিলোমিটার নদীর পুনঃখনন কাজ শুরু করা হয়। কালিয়া উপজেলার আঠারোবাকি নদী তীরবর্তী পহরডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মোল্যা মুকাররম হোসেন হিরু বলেন, আঠারোবাকি নদীটি পুনঃখনন করা হলে নাব্যতা ফিরে পাবে।
আর নদীর পাড়ের ১৩টি বিলের ৪৩ হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধতার হাত থেকে রেহাই পাবে।’ কালিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হুদা বলেন, ‘নদীটির পুনঃখনন কাজ শেষ হলে কৃষিতে ব্যপক পরিবর্তন ঘটবে। ফসল উৎপাদনে সুবিধার পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনা বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘খনন কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। ৩০ বছর পর ভরাট হয়ে যাওয়া আঠারোবাকি নদী আবার মধুমতি নদীতে মিলিত হবে। লবণ পানির প্রকোপ থাকবে না, মিঠা পানির সংকট দূর হবে। নদী সামাজিক বনায়ন গড়ে উঠবে। কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
সম্পাদনা
ফকির শহিদুল ইসলাম