ফকির শহিদুল ইসলামঃ বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে খুলনা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ২১১ জন আউটসোর্সিং কর্মী আন্দোলনে নেমেছেন। গতকাল খুলনা সদর হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন করেছেন আউটসোর্সিং স্বাস্থ্য কর্মীরা। বর্তমানে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ যুদ্ধে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরলস আউটসোর্সিং কর্মরত-কর্মচারী কাজ করেও দির্ঘদিন যাবত পাচ্ছেনা কোন বেতন । বেতন ভাতার এ অনিশ্চয়তায় তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকে অনাহারে দিন যাপন করছে । খুলনা সদর হাসাপতালে কর্মরত আউটসোর্সিং কর্মচারীর তাদের বকেয়া পাওনা বেতন ভাতাদি পরিশোধের দাবিতে গতকাল খুলনা সদর হাসপাতাল চত্বরে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় । বর্তমানে চলছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার কর্মসূচি । সদর হাসপাতালের আউটসোসিং-এর কর্মচারী ক্ষুদার যন্ত্রনায় পরিবারের সদস্যদের খাদ্য চাহিদা পুরনে জন্য ঝুঁকি নিয়ে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার কর্মসূচি ভেঙ্গে এ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে । প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা অবিলন্বে তাদের সকল বকেয়া পাওনা বেতন ভাতাদি পরিশোধের দাবি জানান ।
জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দরপত্রের মাধ্যমে খুলনায় স্বাস্থ্য বিভাগে আউটসোর্সিং কর্মী নিয়োগে কোটি টাকার অর্থ বাণিজ্য করে সিভিল সার্জন দপ্তরের একটি সিন্ডিকেট । ঐ সিন্ডিকেটের সদস্যরা ২১১ জন নিয়োগ প্রাপ্তদের কাছ থেকে এ অর্থ আদায় করে । ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্তারা হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়, আয়া, কুক, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে ২১১ জনকে নিয়োগ দেয় তারা। কিন্তু গত ১০/১১ মাস নিয়মিত কাজ করলেও কর্মীদের বেতন পরিশোধ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
উল্লেখ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই এটি হয়ে উঠেছে দুর্নীতির অন্যতম উৎস। সম্প্রতি খুলনা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগে কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি চাকরির কথা বলে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে চাকরি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং আউটসোর্সিংয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরা বেতন না পাওয়ার পর টাকার বিনিময়ে চাকরি দেয়ার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। ২১১ জন আউটসোর্সিং কর্মচারীর অধিকাংশের কাছ থেকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। আউটসোর্সিং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দেয়া তালিকা পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ভাঙিয়ে বেশির ভাগ নিয়োগই টাকার বিনিমিয়ে সিভিল সার্জন-এর দপ্তর থেকে দেয়া হয়েছে। আর এই আর্থিক লেনদেনে সরাসরি জরিত তৎকালীন সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুর রাজ্জাক,প্রধান সহকারী এস এম মোহসীন আলী ,প্রশাসনিক কর্মকর্তা এম শফিউর রহমান,ষ্টোনো টাইপিষ্ট মোঃ আবুল কালাম,স্যানিটারী ইন্সপেক্টর মোঃ মুজিবর রহমান,অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার মুদ্রাখরিক মো: জহির রায়হান, শাহারিয়ার আলম রাসেল, মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ । এই সিন্ডিকেট খুলনার রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের প্যাডে লিখিত,ডিও,ব্যাক্তিগত সুপারিশে আউট সোর্সিংয়ের নিয়োগের তালিকা করে । ঐসব সুপারিশের নেপথ্যে ছিলো মোটা অংকের আর্থিক লেনদেন পাশাপাশাী সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে অসাধু দুর্নীতিবাজ ঐ সকল কর্মচারী হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা । টাকা দিয়ে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে চাকরী পেলেও আউটসোর্সিং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দিচ্ছেনা তাদের প্রাপ্প মাসিক বেতন ও ভাতা ।ফলে আউটসোর্সিং কর্মরত-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা । অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও আউটসোর্সিং নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মরত-কর্মচারীরা দির্ঘ সময় ধরে তারা কাজ চালিয়ে আসছে । আউটসোর্সিং কর্মরত-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে দির্ঘদিন আন্দোলন করেও কোন সমাধান পায়নি ।সংগত কারনেই তারা চলমান করোনাভাইরাস প্রতিরোধ যুদ্ধের এ সময়ে রাজপথে আন্দোলনে
নেমেছে।